প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
ঠিকাদারের প্রভাব ও কাজের মান

আমাদের দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে অনিয়মটা গা-সওয়া মামুলি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অফিসকে ম্যানেজ করেই চলে ঠিকাদারের অনিয়ম--এটা একটা ওপেন সিক্রেট বিষয়। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদ হয়েছে এমন অনিয়ম নিয়েই। ‘ফরিদগঞ্জের কড়ৈতলী-শাশিয়ালী সড়কে ইটের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে রাবিশ ॥ বাধা দিলে দেখে নেয়ার হুমকি ঠিকাদারের’ শিরোনামের সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, ফরিদগঞ্জে ইটের পরিবর্তে রাবিশ দিয়ে চলছে সড়ক নির্মাণের কাজ। কাজে বাধা দিলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে প্রকাশ্যে। স্থানীয় লোকজন কাজের মান নিয়ে কথা বললে তাদেরকে অশালীন ভাষায় গালমন্দ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা নির্বিকার। জানা যায়, ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কড়ৈতলী বাজার থেকে দক্ষিণ শাশিয়ালী এমএ বারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ৬৩০ মিটার সড়কের পাকাকরণের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএম ফাহাদ এন্টারপ্রাইজ। স্থানীয়রা জানান, সড়কটি নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে ঠিকাদার নানা অনিয়ম করছেন। পুকুরের পাশের গাইড ওয়াল নির্মাণেও হয়েছে অনিয়ম। সর্বশেষ সড়কের কাজ নির্মাণে তিনি ইটের পরিবর্তে রাবিশ ব্যবহার করছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পার্শ্ববর্তী গাজীপুর ইটভাটা থেকে ট্রাক্টরের মাধ্যমে রাবিশ নিয়ে এসে নির্মাণাধীন সড়কে ফেলছেন। সংবাদ পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয় সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার সুলতান আহাম্মেদ। এ সময় তিনি স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিকদের গালমন্দ করেন এবং তিনি প্রকাশ্যে নির্মাণ কাজে বাধা দিলে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে লোকজন জড়ো হতে থাকলে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন। স্থানীয় লোকজন বলেন, এই রাস্তার কাজে শুরু থেকে অনিয়ম করে যাচ্ছে ঠিকাদার সুলতান আহাম্মেদ। তাকে বাধা দিলে সে লোকজনকে হুমকি-ধমকি দিয়ে অনিয়ম করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কাজের বিষয়ে ঠিকাদার সুলতান আহাম্মেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাজ আমরা করবো, আপনারা দেখার কে? আমি যা কিছু করবো সব অফিসের সাথে বুঝবো। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদ বলেন, কড়ৈতলী বাজার থেকে দক্ষিণ শাশিয়ালী এমএ বারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কের অনিয়মের বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। আমি ইতোমধ্যেই মৌখিকভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। অফিসের লোকজন পাঠিয়েছি সরেজমিন গিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীকে আমরা ধন্যবাদ জানাই কড়ৈতলী-শাশিয়ালী সড়কের নিম্নমানের কাজটি মৌখিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার জন্যে। আশা করি সরেজমিনে পাঠানো তার অফিসের লোকের রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি কাজটি লিখিতভাবে বন্ধ করে দিবেন কিংবা কাজের সঠিক মান নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। কথা হলো, কাজ চলাকালে রুটিন তদারকি হলো না কেন? এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীর কোনো গাফলতি ছিলো, নাকি ঠিকাদারের সাথে গোপন সন্ধি ছিলো? নাকি ঠিকাদারের রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাবে নীরবতা অবলম্বন করা হচ্ছিল? খোদ চাঁদপুর জেলা শহরে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজে একটি বিশেষ জেলার ঠিকাদারের প্রভাবে তদারককারী সংস্থা ও জনপ্রতিনিধি সহ অন্যান্য সকলে নীরবতা পালন করে চলছে বলে রটনা আছে। একই অবস্থা ফরিদগঞ্জের সড়কটির ক্ষেত্রে কিনা সেটাই ভাববার বিষয়।