প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
এ.বি. সিদ্দিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সফল হোক
একজন প্রয়াত মানুষকে জীবিত মানুষগুলো সাধারণত তখনই স্মরণ করে, যখন তাঁর বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞ তাঁর অবর্তমানেও স্মৃতির আয়নায় জ্বলজ্বল করে। এমন মানুষদের বেলায় কবির ভাষায় বলা যায় ‘স্মরণের আবরণে মরণেরে যত্নে ঢেকে রাখি’। আরো বলা যায় ‘নয়ন তোমায় পায় না দেখিতে/রয়েছ তুমি নয়নে নয়নে’। এমন একজন স্মরণযোগ্য মানুষই হচ্ছেন মতলবের ফ্লাইট লেফটেনেন্ট (অবসরপ্রাপ্ত) এ.বি. সিদ্দিক। তিনি ১৯৫১ সালে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে বার বার রুখে দাঁড়ান, তারপরও একই বছর তিনি তাঁর অসাধারণ যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে ক্যাডেট হিসেবে রয়েল পাকিস্তান এয়ারফোর্সে যোগদান করেন এবং ১৯৫২ সালে কমিশন লাভ করেন। ১৯৫৮ সালের শেষ দিকে বিমান বাহিনীর রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করেন এবং চাঁদপুর জেলার সহস্রাধিক যুবককে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি যখন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে কর্মরত, তখন স্বেচ্ছায় চাকুরি ছেড়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষিত সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেন। তারপর তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি পর্যায়ক্রমে গণপরিষদ সদস্য ও জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া বৃহত্তর মতলবের আওয়ামী লীগ সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, উপদেষ্টা, বহু শিক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, মতলব মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রধান উপদেষ্টাসহ বহু প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সম্মানজনক পদে নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সততার সাথে কাজ করেছেন। জীবদ্দশায় তাঁর কর্মকীর্তির মূল্যায়নস্বরূপ স্থানীয়ভাবে বহু সম্মাননা পেয়েছেন।
|আরো খবর
২০১২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ফ্লাঃ লেঃ (অবঃ) এ.বি. সিদ্দিক দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান। তাঁর জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল দেখে কারো বুঝতে অসুবিধা হয় নি, তিনি কতোটা গ্রহণযোগ্য, সর্বজনশ্রদ্ধেয় ও জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর আজ নয় বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে, অর্থাৎ আজ তাঁর নবম মৃত্যুবার্ষিকী। এতোদিনে তাঁকে প্রায় সকলে ভুলে যাবার কথা, যেমনটি রাজনৈতিকভাবে তাঁর চেয়ে অগ্রণী ও মন্ত্রিত্বের সুযোগ পাওয়া অনেক নেতাকেই ভুলে গেছেন তাঁর এলাকাবাসী। তবে ফ্লাঃ লেঃ (অবঃ) এ.বি. সিদ্দিককে মোটেও ভুলে যায়নি মতলব দক্ষিণের লোকজন। এখানকার সুধী-সজ্জনরা তাঁর স্মৃতিরক্ষায় এ.বি. সিদ্দিক ফাউন্ডেশন গঠন করেছেন এবং ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) তাঁর নবম মৃত্যুবার্ষিকী পালনে দুদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এ কর্মসূচিতে ৩-৪টি স্থানীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ.বি. সিদ্দিক ফাউন্ডেশন গঠনের মধ্য দিয়ে মতলব দক্ষিণের সুধীবৃন্দ তাঁদের ঔদার্য এবং গুণীর কদর করার মানসিকতা প্রদর্শন করেছেন আশাব্যঞ্জকভাবে। এমনটি আজকাল অধিকাংশ প্রয়াত গুণী ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন যেখানে করে না, সেখানে এ.বি. সিদ্দিকের অনাত্মীয় গুণমুগ্ধরা সেটি করে কার্যত শ্রদ্ধার পাত্র হয়েছেন। আমরা এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সফল হবার পাশাপাশি এর টেকসই অস্তিত্ব প্রত্যাশা করছি। সাথে সাথে এ.বি. সিদ্দিকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাঁকে তাঁর বিপুল কর্মকীর্তির জন্যে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। মহান আল্লাহ তাঁকে চিরসুখের জান্নাত দান করুক-এ মোনাজাত করছি।