প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
সন্তানের চাকুরির জন্যে ভুল তথ্য দিবে শিক্ষক?
‘ফরিদগঞ্জে ভুল তথ্য দিয়ে পোষ্য কোটায় চাকরির আবেদন ॥ দুজনকে শোকজ’ শিরোনামে অতি সম্প্রতি চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে একটি সংবাদ। সংবাদটি পড়ে অনেকেই মহান পেশার ক'জন শিক্ষকের এমন আচরণে বিস্মিত হয়েছেন। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার খাজুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছলেমান পাটওয়ারী তার বড় মেয়ে শারমিন আক্তারের জন্যে পোষ্য সনদ নং-১৩ কোটায় আবেদন করেন। এ ধরনের আরো দুটি ঘটনার সন্ধান মিলেছে। অপর দুটি স্কুল হচ্ছে ইছাপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধানুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানতে পারে, শারমিন আক্তার বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জননী। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে করা হয়েছে আবেদন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেয়া হয়েছে অবিবাহিত সনদ। এই খবরে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। ইতোমধ্যে শোকজ করা হয়েছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং খাজুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছলেমান পাটওয়ারীকে। স্থানীয়রা জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কয়েকজন সিনিয়র নেতা অর্থের বিনিময়ে এই পোষ্য সনদ ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে খাজুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছলেমান পাটওয়ারী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে আমি শোকজ নোটিসের জবাব দিয়েছি এবং পরবর্তীতে এ বিষয় তারা ব্যবস্থা নেবেন। এদিকে ইছাপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলমের মেয়ে শামিমা আক্তারের পোষ্য সনদ নং-১১। তার বিয়ে হলেও দেয়া হয়েছে অবিবাহিত সনদ। যদিও তিনি বলছেন, আবেদন করার পর তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। অন্যদিকে ধানুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোহসেনা আক্তারের মেয়ে মারজানা আক্তার পোষ্য সনদ নং-১২ দেয়া হয়েছে অবিবাহিত সনদ। স্থানীয়রা জানান, মেয়ের বিয়ে হয়েছে ঢাকায়। মোহসেনা আক্তার জানান, তার মেয়ের বিয়ে হয়নি। মেয়ে ঢাকায় পড়াশোনা করে, তাই ঢাকায় অবস্থান করছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, এ ধরনের ঘটনার সাথে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কোনো নেতা জড়িত নয়। আর যদি জড়িত থাকে তা হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আমার অফিসকে ভুল তথ্য দিয়ে পোষ্য সনদ যারা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দপ্তরকে অবহিত করা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে। তারা শোকজের জবাব দিয়েছে। বাকি কয়েকটির বিষয়ে অবগত না। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পোষ্য কোটায় সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক পদে ভুল তথ্য দিয়ে সন্তানের চাকুরির আবেদনের প্রবণতা এক শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে শুধু ফরিদগঞ্জে নয়, অন্যত্রও দেখা যায়। তবে ধরা খুব একটা পড়ে না। ফরিদগঞ্জে যাদের কারণে ধরা পড়লো, তাদেরকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে হয়। এই অপকর্মে প্রকাশ্য-গোপনে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের প্রত্যেককে পাকড়াও করার জোর অনুরোধ জানাই।