প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
কিছু পবিস সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভাবতেই হবে

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) মানেই আমাদের দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার প্রাণশক্তি। আশির দশকে পবিস-এর মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকার যে উদ্যোগ নেয়, তা নূতনত্ব, অভিনবত্বে ও ব্যাপক প্রত্যাশার অনুকূলে অনেক সাড়া জাগায়। পবিস-এর কার্যক্রম ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতায় শুধু গ্রামীণ জনপদে সীমাবদ্ধ থাকেনি, উপজেলা সদরস্থ শহরেও বিস্তার লাভ করে। যতোই পবিস-এর আওতাধীন এলাকা বাড়তে থাকে, ততোই পবিস-এর সেবার মান ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা-স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। আর নানা অভিযোগের পরিমাণও ক্রমশ বাড়ে। এসব অভিযোগ থেকে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হতে থাকে।
এমন একটি সংবাদই মঙ্গলবার প্রকাশিত হয় চাঁদপুর কণ্ঠে। ‘ফরিদগঞ্জে বিদ্যুতের তারে যুবকের মৃত্যু, ৩০ হাজার টাকায় রফাদফা!’ শিরোনামের সংবাদে ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি লিখেছেন, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে ফরিদগঞ্জের চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের সন্তোষপুরে পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে তিনদিন ধরে অরক্ষিত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকে। যার কারণে ৭ জুন রিয়াজ (২১) নামে এক যুবক সে তারে জড়িয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু হয়। অরক্ষিত তারের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানালেও ঘুষ না পেয়ে লাইনটি মেরামত করা হয়নি বলে অভিযোগ আছে এবং সেই তারে জড়িয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে রিয়াজের মরদেহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ। পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের অবহেলা ও ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি চতুর্দিকে জানাজানি হলে তা ধামাচাপা দিতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ফরিদগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমসহ ফরিদগঞ্জ থানা প্রশাসনের সহযোগিতায় মৃত রিয়াজের পিতা আবুল হোসেনকে ৩০ হাজার টাকা দেন এবং কাউকে কোনো কিছু না বলার জন্যে অনুরোধ করেন। বিষয়টি রিয়াজের বাবা আবুল হোসেন সংবাদ কর্মীদের কাছে স্বীকার করলেও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, এ বিষয়ে কারো সাথেই তাদের আপস হয়নি। ফরিদগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার নাজিরুল্লাহ জানান, রিয়াজের বিষয়টি আমরা পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, থানা প্রশাসন এবং রিয়াজের বাবা বুঝবো, তাতে আপনাদের সংবাদ কর্মীদের মাথা ঘামানো কেন?
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর আওতাধীন ফরিদগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, রিয়াজের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলমান। পরিবারকে আর্থিক কোনো সহযোগিতা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তাতে আপনাদের লাভ কী? আর তাদের টাকা দিলে কী হবে আর না দিলেই কী হবে বলে তিনি প্রশ্ন তোলেন। চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর সভাপতি মোঃ আলীম আজম রেজা জানান, ঘটনার দিন আমি ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা ছিলাম। পল্লী বিদ্যুতের কোনো দায় থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, ঘটনার সময় আমি কর্মস্থলে ছিলাম না। যার কারণে এই বিষয়ে আমি অবগত নই। উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সারা দেশে যখন কর্মকর্তাদের ছুটি বন্ধ এবং ২৯ মে ফরিদগঞ্জ পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, সে সময়ও ফরিদগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম অফিসে আসেননি এবং তিনি ঠিকমত অফিস না করার কারণে অফিস স্টাফরা দায়সারাভাবে কাজ করে। ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের লাইন ঠিক করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদা উঠিয়ে অফিস স্টাফদের দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)-এর অবস্থা এখন বাংলাদেশ রেলওয়ের মতো হয়ে গেছে। কে কী বললো, কে কী ভিডিও করে দেখালো, কে কী লিখলো, সেটা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভাববার অবকাশ নেই। এর ফলে কিছু পবিস-এর উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তারা লাগামহীন হয়ে বেপরোয়া চলেন এবং বেপরোয়া বলেন। যেমনটি ফরিদগঞ্জে দেখা গেছে। এই কর্মকর্তাদের দায়িত্বপালনে উদাসীনতায় তাদের অধঃস্তনরা যে মানুষের জীবনকে তুচ্ছ ভাবে, সেটা তো ঝড়ে ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তার বেশ ক’দিনে না সরানোর কারণে সেই তারে জড়িয়ে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। এ রকম ঘটনা ফরিদগঞ্জে নয়, সারাদেশের বিভিন্ন পবিস-এর আওতাধীন এলাকায় ঘটছে। কিন্তু পবিস-এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেটা নিয়ে খুব বেশি ভাবছে বলে মনে হচ্ছে না। এটা দুঃখজনক। তাই সকল পবিস-এর কার্যক্রম তদারকিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তৎপরতা জোরদার এবং দুর্নীতি-অনিয়মে জর্জরিত কিছু পবিস নিয়ে ভাবনাকে গভীর করার বিকল্প আছে বলে মনে করি না।