শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০

বিতর্ক শিল্পে প্রজন্ম বিনির্মাণ : মহৎ স্বপ্নের বাস্তবায়ন

অনলাইন ডেস্ক
বিতর্ক শিল্পে প্রজন্ম বিনির্মাণ : মহৎ স্বপ্নের বাস্তবায়ন

আজকের যুগে সভ্যতার সবচেয়ে বড় সংকট কী? উত্তরে হয়তো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ঘাটতি, খাদ্য নিরাপত্তার অভাব, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট ইত্যাদি নানা কথা আসতে পারে। তবে বাঙালি জাতির জন্যে মুখ্য সংকট এগুলোর কোনোটাই নয়। বাঙালি জাতির ভবিষ্যতের মুখ্য সংকট হলো তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিনির্মাণ। এ আশঙ্কার কারণ কী? কারণ নিহিত আছে যুগের অস্থিরতার মধ্যেই। প্রথমত পূর্ণাঙ্গরূপে তৈরি না হওয়ার আগেই অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের সহজলভ্যতা, দ্বিতীয়ত মাদকাসক্তির কুপ্রভাব, তৃতীয়ত কিশোর গ্যাং নামক নতুন উপদ্রবের উৎপাত এবং চতুর্থত ইভটিজিং ও মূল্যবোধের ঘাটতি। এ সমস্ত বিঘ্নকে পাশ কাটিয়ে প্রজন্মকে বিনির্মাণের যুৎসই একটা উপায় বের করা না গেলে আমাদের কোনো উন্নয়ন বা অগ্রগতি টেকসই হবে না, কোনো অভীষ্ট আমাদের অর্জনযোগ্য হবে না। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ বিগত দেড় দশক ধরে এই ভয়াবহ সত্যকে অনুধাবন করে সামাজিক দায়বদ্ধতার পুণ্য উপলব্ধি থেকে বিতর্ক শিল্পকে বেছে নিয়েছে প্রজন্ম বিনির্মাণের উপযুক্ত হাতিয়ার হিসেবে। এ কাজে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঞ্জেরী। দুটি মননশীল প্রতিষ্ঠানের মেলবন্ধন আজ সার্থকতা পেয়েছে দেড় দশকের পথ পরিক্রমায়। তিন বছরের করোনাকালের রহিতকরণসহ পনর বছরের যাত্রায় পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা সাফল্যের সাথে আজ একযুগ পার করেছে। একযুগের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সারা জেলাব্যাপি প্রান্তিক পর্যায় হতে অসংখ্য বিতার্কিককে তুলে এনে জাতীয় পর্যায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এরাই আজ বিভিন্ন জায়গায়, স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কৃতিত্বের সাথে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

বারো বছরে বারোটি প্রতিপাদ্য নিয়ে বিতর্ককে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া কোনো চাট্টিখানি কথা নয়। অর্থবলে পাশাপাশি সবচেয়ে বড়ো যে শক্তি প্রয়োজন হয় তা হলো জনবল। শুধু শ্রম ও সময় দিতে পারা জনবল নয়, মূলত বিতর্ক সম্পর্কে ধারণা আছে তেমন জনবল। এ রকম জনবলের সংকট জেলা পর্যায়ে প্রবল ও প্রকট। আট উপজেলা হতে প্রান্তিক পর্যায় অতিক্রম করে দেড় থেকে দু শতাধিক দল নিয়ে বারোটা আসরে অভিযাত্রা, অগ্রযাত্রা, জয়যাত্রা, জয়ধ্বনি ও উল্লাস পর্ব মঞ্চায়ন করা স্বয়ং হার্কিউলিসের পক্ষেও সহজ হতো না। কিন্তু শুদ্ধ অভিপ্রায়ের পুণ্য অঙ্গীকারের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সে অসাধ্য আজ সাধিত হয়েছে।

প্রজন্মের মধ্যে যুক্তির শৃঙ্খলা তৈরি করে দেওয়া, জ্ঞানচর্চার বিকাশ ঘটানো এবং সৃজনশীল চর্চায় উৎসাহী করে তোলা পাশাপাশি এর মাধ্যমে অপচর্চার হাত থেকে তাদের বাঁচিয়ে রাখা আমাদের জন্যে ছিলো বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আজ আমরা এক যুগপূর্তির উৎসবে শামিল হতে পেরেছি। আমাদের এই যাত্রাপথে আমরা যেমন অনেককেই পেয়েছি, তেমনি অনেক জনবল আমরাও তৈরি করে নিয়েছি। শুধু বিতার্কিক তৈরি নয়, এই কর্মযজ্ঞের একটি মধুর উপজাত হলো বিতর্ক সাহিত্য নামে নতুন এক সাহিত্য ধারার সূচনা। 'বিতর্কায়ন' শিরোনামে বিশেষ ক্রোড়পত্রটি প্রতি পর্বে যেমন প্রকাশিত হয়েছে তেমনি প্রতি আসরে 'বিতর্কায়ন' একটি করে গ্রন্থেরও আকার লাভ করেছে। সমাজের অনেক মানুষের মধ্যে বিতর্কের বোধ ও স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়েছে।

বিতর্ক শিল্পের চর্চার মাধ্যমে প্রজন্মের বিনির্মাণ আমাদের এক মহৎ স্বপ্নের নাম। সে স্বপ্নের বীজ বপন ও তাকে সার্থকতায় রূপায়ণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন আমাদের জীবনব্রত। এই ব্রত আজ যুগপূর্তি উদযাপনের উৎসবে পেয়েছে সার্থকতা। যুগপূর্তিতে উপনীত হতে আমরা পথ চলেছি দেড় দশক। পনর বছরের এই পথ পরিক্রমায় অর্জন-অভিজ্ঞতার মহাযজ্ঞে যারা পাশে ছিলেন তাদের সবাইকে অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা জানাই। যাঁরা অতিথি হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ে এসেছেন, বিচারক-সভাপ্রধান ও মডারেটর হিসেবে ছিলেন তাঁদের সবার জন্যেই আজ এ যুগপূর্তির আসর অতীব গৌরবের। গৌরবের এই উৎসব হয়ে উঠুক বাংলাদেশের বিতর্ক আন্দোলনের একটি অনন্য মাইল ফলক। বিতর্ক ও বিতার্কিকের জয় হোক। জয় বাংলা।

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়