প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
বিবিধ নির্মাণ ও ক্রয়ে রেল কর্মকর্তাদের যতো আগ্রহ! নিয়োগে নয় কেন?
দৈনিক ইত্তেফাক ও চাঁদপুর কণ্ঠে 'চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে ১১ রেল স্টেশনের পাঁচটিই বন্ধ' শিরোনামের সংবাদে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের চাঁদপুর অংশ ৫১ কিলোমিটার। স্টেশন আছে ১১টি। এর মধ্যে বর্তমানে ছয়টি সচল থাকলেও জনবলের অভাবে বাকি পাঁচটি রেল স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এক সময় বাণিজ্যিকভাবে মালামাল পরিবহনের জন্যে ট্রেন থাকলেও এখন বন্ধ। মাল পরিবহনের ঐ রেললাইনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় স্থানীয়রা যে যার মতো দখল করছে। চাঁদপুর স্টেশন মাস্টারের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে বিদ্যমান স্টেশনগুলো হচ্ছে চিতোষী, মেহার, শাহরাস্তি, ওয়ারুক, হাজীগঞ্জ, বলাখাল, মধুরোড, শাহতলী, মৈশাদী, চাঁদপুর কোর্ট ও চাঁদপুর স্টেশন। এর মধ্যে কার্যক্রম চালু আছে চিতোষী, মেহার, হাজীগঞ্জ, মধুরোড, চাঁদপুর কোর্ট ও চাঁদপুর স্টেশনে। এক সময় চাঁদপুর থেকে লাকসাম, চট্টগ্রাম, ভৈরব ও সিলেটের মধ্যে ৮টি ট্রেন চলাচল করতো। কিন্তু এখন মাত্র ২টি ট্রেন চলাচল করে। ২টি ট্রেনই চাঁদপুর ও চট্টগ্রামের মধ্যে চালু রয়েছে। একটি আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস এবং অন্যটি সাগরিকা এক্সপ্রেস। বাকি লোকাল ৬টি ট্রেন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে একটি ডেম্যু বা কমিউটার ট্রেন দিনে দুবার চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা/লাকসামের মধ্যে চলাচল করে লোকাল ট্রেনের অভাব অনেকটাই পূরণ করেছিল। সেটিও এখন বন্ধ।
সরেজমিনে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের ছায়াবাণী মোড় থেকে জেলা খাদ্যগুদাম পর্যন্ত এবং চাঁদপুর স্টেশন থেকে পদ্মা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানির ডিপো পর্যন্ত রেললাইনগুলো বর্তমানে পরিত্যক্ত। পরিত্যক্ত রেললাইন এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা বেপারী বলেন, গত প্রায় ২০ বছর ধরে এ পথে কোনো ট্রেন আসে না। শহরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী শাহজাহান বলেন, এক সময় সার, কীটনাশকসহ অনেক পণ্যই মালবাহী ট্রেনে আসতো। এখন মালবাহী ট্রেনের পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। যে কারণে এখানকার রেললাইন পরিত্যক্ত এবং অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে। চাঁদপুর স্টেশন মাস্টার (ভারপ্রাপ্ত) সোয়াইবুল সিকদার বলেন, চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের ৫১ কিলোমিটার অংশে ১১টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বর্তমানে সচল। জনবল সঙ্কট থাকায় বাকি পাঁচটি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। তবে স্টেশনগুলোর অবকাঠামগত কোনো সমস্যা নেই। পরিত্যক্ত রেললাইন সম্পর্কে তিনি বলেন, এক সময় এ লাইনগুলো দিয়ে পণ্য পরিবহণ হতো। কিন্তু জেলা খাদ্য গুদাম এখন নদী ও সড়ক পথে পণ্য পরিবহণ করছে। আর পদ্মা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড নদীপথে জ্বালানি পরিবহণ করছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে লাইনগুলো এভাবেই পড়ে আছে। তিনি জানান, খাদ্য গুদাম ও ওয়েল কোম্পানি আবারও পণ্য পরিবহনের জন্যে আবেদন করলে লাইনগুলো চালু করা হবে। দীর্ঘ বছর লাইনগুলো ব্যবহার না করায় কোনো কোনো স্থানে অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হবে।
সাবেক এক প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের জনবল ছাঁটাই করার পর থেকে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তা কিছুতেই যেন কাটছে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রেলওয়ের উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে চললেও জনবল সঙ্কট রেলওয়ের পিছু ছাড়ছে না। পরিণতিতে পুরাতন স্টেশনের পাশাপাশি নূতন স্টেশনও চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কিন্তু থেমে নেই। প্রকৌশলীদের দাপুটে অনিবার্যতায় রেলওয়েতে যাত্রীসেবা বৃদ্ধির চিন্তার চেয়ে উন্নয়ন ভাবনার প্রাধান্য দেখা যায় বেশি। উন্নয়নের প্রয়োজনে ক্রয় ও নির্মাণে রেল কর্মকর্তাদের যতো মনোযোগ দেখা যায়। এই মনোযোগের অপরিহার্যতা অস্বীকারের জো নেই, তাই বলে নিয়োগটা গৌণ হয়ে থাকবে কেন? ট্রেন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি করা বাতুলতা হতে পারে, তবে ন্যূনতম জনবল নিয়োগে বন্ধ স্টেশন চালু ও পুরানো ট্রেন ২-১ টি চলাচলের বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখাটা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি।