প্রকাশ : ২২ মে ২০২৪, ০০:০০
পুলিশ পরিচয়ে একের পর এক ডাকাতি!

ফরিদগঞ্জে পুলিশ পরিচয়ে দিনে ও রাতে দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে চলতি মে মাসেই। এ সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত এ দুটি ঘটনায় কেউ ধরা পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। ডাকাতিপ্রবণ এলাকা ফরিদগঞ্জে প্রতি বছর সংঘটিত ডাকাতির ঘটনাসমূহের যেভাবে তদন্ত হওয়া দরকার সেভাবে হয় বলে মনে হয় না। আর সেটি হয় না বলে ডাকাতি খুব একটা কমছে না বলে পর্যবেক্ষকমহল মনে করছেন।
ফরিদগঞ্জে পুলিশ পরিচয়ে প্রথম ডাকাতিটি হয় গত ৮ মে সকাল ১১টায়। ঘটনাস্থল গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের হামছাপুর গ্রামে এক শিক্ষিকা ও ব্যাংকারের ঘরে। দ্বিতীয় ডাকাতিটি হয় চিকিৎসকের বাড়িতে। পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে হাত-পা বেঁধে চিকিৎসকের বাড়িতে ডাকাতিটি হয় ৮ দিনের ব্যবধানে ১৬ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে। ঘটনাস্থল রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের চরমুঘুয়া গ্রাম। জানা গেছে, গৃদকালিন্দিয়া বাজারে পল্লী চিকিৎসক শাহজাহান ফরিদ প্রতিদিনের ন্যায় রাত ১০টায় বাড়িতে গিয়ে খাবার খেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ৩টায় কলাপসিবল গেটের তালা নষ্ট করে ডাকাতদল ঘরে প্রবেশ করে। পরে দরজার ছিটকিনি খোলার আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাদের। এ সময় রুমের ভেতর থেকে পরিচয় জানতে চাইলে ডাকাতদল ‘আমরা থানা থেকে আসছি পুলিশের লোক’ এই বলে তারা রুমে প্রবেশ করে শাহজাহান ফরিদ ও তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার নিপুকে বেঁধে রেখে নগদ টাকা ও স্বর্ণ-গহনা নিয়ে যায়। ডাকাতরা যাওয়ার সময় বাসার বাইরে লক করে চলে যায়। ভুক্তভোগী চিকিৎসক শাহজাহান ফরিদ বলেন, ডাকাতরা পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমার বাসায় প্রবেশ করে। আমার গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে আমাকে বেঁধে ফেলে। পরে তারা স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকাসহ প্রায় এক লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয়। তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার নিপু বলেন, ডাকাতরা আমার হাত বেঁধে আলমারির চাবি নিয়ে যায়। পরে আমার ছেলের শয়নকক্ষের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়। তারা আমাদের স্টিলের আলমারি, কাঠের ওয়্যারড্রোব খুলে ও ভেঙ্গে সকল মালামাল তছনছ করে আমার কানের দুল নিয়ে যায়। ভুক্তভোগীর ভাই শফিকুর রহমান ফুটন বলেন, আমার ভাইয়ের বাসায় ডাকাতির খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে এসে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে পুলিশের সহায়তা চেয়েছি। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ আসেনি। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
ডাকাতি নিয়ে গ্রামাঞ্চলে পুলিশকে জড়িয়ে সাধারণ্যে নানা কথা প্রচলিত আছে, নানা গুঞ্জন আছে, নানা গুজবও আছে। যেমন-ডাকাতরা ডাকাতি করার আগে পুলিশের অসৎ ব্যক্তির সাথে, থানার সোর্সের সাথে যোগাযোগ করেই নিরাপদে তাদের কাজ সারে। আমরা ধরে নিলাম, এ সকল কিছুই মিথ্যা। কিন্তু ফরিদগঞ্জে পুলিশ পরিচয়ে দ্বিতীয় ডাকাতির ঘটনার অব্যবহিত পর পুলিশের জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ জানানোর পরও পরদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ না যাওয়ায় সাধারণ্যে প্রচলিত ধারণার সত্য/মিথ্যা নিয়ে গুঞ্জন ও ভুক্তভোগীদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা গেছে। ডাকাতির ঘটনা জানার পরও থানা-পুলিশের ঘটনাস্থলে যেতে বিলম্ব, অবহেলা, গড়িমসি, উদাসীনতা ও শৈথিল্য প্রদর্শন নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও আপত্তিকর। ডাকাতদের তাৎক্ষণিক ধরা ও মালামাল উদ্ধার সম্ভব না হলেও ডাকাতির ঘটনার পর পুলিশ যত দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থলে গেলে ডাকাতির শিকার লোকজন ও আতঙ্কগ্রস্ত প্রতিবেশীর মাঝে সাহস সঞ্চার হয়। এটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে জানি ও দেখে আসছি। কিন্তু ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ উল্লেখিত ডাকাতির ঘটনার দীর্ঘ সময় পরেও ঘটনাস্থলে না যাওয়াটা প্রশ্নবোধকই থেকে গেলো। এই প্রশ্নের জবাব দেবে কে?