প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০
এখনো এমন প্রধান শিক্ষক আছে?

মতলব দক্ষিণ উপজেলায় স্কুল বন্ধ রেখে ঘুমানোর দায়ে প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার নায়েরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। সোমবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও নায়েরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা ঝুলছিলো। শিক্ষার্থীরা স্কুল বন্ধ দেখে বইপত্র নিয়ে বাড়ি চলে যায়। এমন একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নজরে আসে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, নায়েরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষকের মধ্যে পাঁচজন চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে প্রশিক্ষণ নিতে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান। বাকি ছিলেন প্রধান শিক্ষক। একাকিত্বের কারণে তিনিও সোমবার স্কুলে যাননি। বিদ্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে বাড়িতেই ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। বিদ্যালয়ে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাড়ি চলে যায় শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিভাবকরা। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (ওই ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা) মজিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ব্যতীত সব শিক্ষককে নির্বাচনী প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছে। তবে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার তো প্রশ্নই আসে না। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুন্নাহার বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই পাঠদান বন্ধ রেখে বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে বাড়িতে ঘুমাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক--অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এমন খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানকে শোকজ করা হয়েছে।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ ও সমকালসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি ছাপা হয়েছে। সংবাদটি পাঠ করে পাঠকমাত্রই বিস্মিত হয়েছেন। আজকাল এইট পাস শিক্ষক ও ম্যাট্রিক পাস প্রধান শিক্ষক দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো চলে না। যে কালে চলতো, সে কালে প্রত্যন্ত এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এমন কম শিক্ষিত শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার ছিলো। স্কুল শুরু করার ক্ষেত্রে সময়তো মানতোই না, আর ছুটি দিতো নিজেদের ইচ্ছায়। স্কুলে ক্লাস শুরুর আগে অনেক শিক্ষক ক্ষেত-খামারের কাজে ব্যস্ত থাকতেন, স্কুলের সময় হলে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে খালি পায়ে গিয়ে ক্লাসে ঢুকতেন। মাঝেমধ্যে শরীর ভালো লাগছে না বলে ক্লাসে গিয়ে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাতেন, ক্লাস না নিয়ে অফিস রুমে বসে থাকতেন কিংবা বাসা/বাড়িতে চলে যেতেন। শিক্ষার্থীরা ছুটোছুটি, চিল্লাচিল্লি করলে বেতের প্রয়োগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। প্রত্যন্ত এলাকা বলে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে তৎকালীন এটিইওরা সেসব স্কুল নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। আজ আর সেইদিন নেই। প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা স্নাতকোত্তর কিংবা স্নাতক পাস। এছাড়া বাধ্যতামূলকভাবে প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউট থেকে সি-ইন এড পাস করা এবং উপজেলা রিসোর্স সেন্টার থেকে প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর হালনাগাদ প্রশিক্ষণ পাওয়া। এরা এটিইও ( বর্তমানে এইউইও)-এর তদারকির পাশাপাশি নিজ তাগিদে সময়ানুবর্তিতা ও পাঠদানে পূর্বের আমলের প্রাথমিক শিক্ষকদের চেয়ে অনেক স্মার্ট। তারপরও কিছু শিক্ষক যে নেতাগিরি, কোচিং ও টিউশনির কারণে অনিয়ম করেন না--এমনটি নয়। তবে ঘুমকাতরতায় তালা মেরে স্কুল বন্ধ রাখার নজির বিরল। মতলবের নায়েরগাঁয়ে এমন বিরল ঘটনা ঘটিয়েছেন যে প্রধান শিক্ষক, তিনি তাই বিস্ময় উদ্রেককারী, যিনি ফেসবুক-ইউটিউব ব্যবহারকারী অভিভাবক/ সচেতন মানুষ কিংবা টিকটিকির ন্যায় তীক্ষèদৃষ্টির অধিকারীদের ব্যাপারে উদাসীন। তাকে শোকজ দিয়ে বসে থাকলে হবে না, তার আক্কেল জাগ্রত করা কিংবা তাকে হালনাগাদ করার জন্যে যা যা করণীয় তার সবটুকু করার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।