প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ভয়াবহ ছবিতে উদ্বেগজনক সংবাদ

‘ফরিদগঞ্জে সড়কের পাশে মাছচাষ ॥ সড়ক ভেঙ্গে ভয়াবহ দুর্ভোগ ॥ প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে গণস্বাক্ষরযুক্ত আবেদন’ শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত শীর্ষ সংবাদটির সাথে যে ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে, ছবিটি বোধহয় বড়ো কোনো নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকার ছবি। কিন্তু প্রবীর চক্রবর্তীর সংবাদটি পুরো পড়ে মনে হয়েছে, আসলে তা নয়। সংবাদটির উপজীব্য বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক।
সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, বছরের পর বছর সড়কের পাশের চরে মাছচাষের কারণে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে হাজার হাজার লোকজনের চলাচলকারী একটি সড়ক। দীর্ঘদিন এই অবস্থায় থাকলেও সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি মৎস্য ব্যবসায়ীরা। একসময় সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও ভাঙ্গনের কারণে এখন সাইকেল চালিয়ে যাওয়া দুষ্কর। সড়ক খেয়ে ফেলা চরটি আবারো মাছ চাষের জন্যে নিলামের আয়োজন হচ্ছে। এমতাবস্থায় সড়কটি রক্ষায় এবং মৎস্যচাষীদের মাধ্যমে সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর গণস্বাক্ষরযুক্ত আবেদন করেছেন স্থানীয়রা। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চররাঘব রায় এলাকার। স্থানীয়ভাবে সিংহের স্কুল-লামচর সড়ক নামে পরিচিত এটি।
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শোভানবাজার-ভাটিয়ালপুর-হরিণা সড়ক-জয়গঞ্জ ঘাট পর্যন্ত সড়কের গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের উত্তর চররাঘব রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দক্ষিণ চররাঘব রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কের এক কিলোমিটার ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী। সড়কের পশ্চিম পাশে বিশাল জনবসতি রয়েছে, যাতে অন্তত ৫ হাজার লোকের বসবাস। সড়কের পূর্বপাশে সিংহের চরে দীর্ঘদিন ধরেই মাছ চাষ করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। মাছচাষের কারণে একসময় গাড়ি চলাচল করা সড়কটি ভেঙ্গে গেছে। এখন সড়কটি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়া দুষ্কর। স্থানীয় লোকজন বারবার মাছ চাষীদের সড়কটি মেরামতের জন্যে বললেও তারা কর্ণপাত করছে না। এমতাবস্থায় ২৫ জানুয়ারি সিংহের চরটি আবারো মাছচাষের জন্যে নিলাম হবে। তাই সড়কটি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে এলাকাবাসী গণস্বাক্ষরযুক্ত একটি আবেদন জেলা প্রশাসক বরাবর দিয়েছে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে প্রাণেশ্বর দাস, নূরু মিয়া, মিজানসহ বেশ ক’জন জানান, চরের অধিকাংশই জমির মালিক গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চরমথুরা গ্রামের বাসিন্দারা। জমির মালিকগণকে অধিক লাভের জন্যে প্রতিবছর মাছ চাষের জন্যে লিজ দেয় চরটি। কিন্তু মাছ চাষের কারণে ব্যাপকভাবে ভাঙ্গনের শিকার সড়কটি মেরামতে কোনো পক্ষই উদ্যোগ নেয়নি। স্থানীয় লোকজনের ও ছাত্র-ছাত্রীদের সড়কটিতে চলাচলে খুবই কষ্ট হয়। রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে কোনো যানবাহন এই গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না। এমনকি রিকশা, ভ্যানগাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না। ইতিপূর্বে চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের জন্যে ডিও লেটার দেয়ার পর এলজিইডি সড়কটি পাকাকরণে প্রাক্কলন তৈরি করে। চলতি বছর সড়কটির পাকাকরণ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে এলজিইডি। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখে এর ব্যয় বেড়ে যেতে পারে আশঙ্কায় কাজ হবে কি-না এই চিন্তায় রয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যেই আবারো চরের ডাক হবে। আমরা আশঙ্কা করছি, এবারের বর্ষায় সড়কটি পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয়রা আরো জানান, আমরা মাছ চাষের বিরোধী নই। কিন্তু মাছ চাষীদের উচিত চরের পাশ দিয়ে সড়কগুলো রক্ষণাবেক্ষণ। এই দুরবস্থা শুধু এই সড়কের নয়, পুরো ফরিদগঞ্জ জুড়েই রয়েছে। প্রশাসন এসব বিষয়ে কঠোর না হলে সরকারের বিপুল অর্থে নির্মিত সড়কগুলো কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙ্গে পড়বে। আমরা টেকসই উন্নয়ন চাই। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন ভূঁইয়া গণস্বাক্ষরযুক্ত আবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, সড়কটি রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। মৎস্য ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদ জানান, সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমানের ডিও লেটারের ভিত্তিতে সড়কটির পাকাকরণের প্রাক্কলনসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে আমরা সড়ক পাকাকরণের কাজ শুরু করবো। মাছ চাষের কারণে সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে লোক পাঠাচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌলি মণ্ডল বলেন, সড়ক ভাঙ্গার অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাছ চাষের জন্যে ফরিদগঞ্জ বাংলাদেশের বিখ্যাত একটি উপজেলা। এই উপজেলাটি মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশে চতুর্থ। এখানে মাছচাষের কারণে সড়কসমূহ যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটি চাঁদপুর কণ্ঠ সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বারবার লিখা হয়েছে। কিন্তু কেউ মাথা ঘামিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না। ফলে মাছ চাষে ব্যক্তিক ও সামষ্টিক উন্নয়ন হলেও সড়ক অবকাঠামোর যে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে, তাতে এই উন্নয়ন যে কার্যত টেকসই হবে না--সেই আশঙ্কাই কার্যত হাতছানি দিচ্ছে। সময়মত মাছচাষীদের কঠোরভাবে সতর্ক করলে এবং নিজ খরচে সড়ক মেরামত বা সংরক্ষণের তাগিদ দিলে সড়কের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র সংবাদে জুড়ে দেয়া ছবির মতো হতো বলে আমরা মনে করি না। পরিণতিতে সড়ক রক্ষায় সময়ের এক ফোঁড়ে যে কাজ হতো, এখন সেটা দশ ফোঁড়েও হয় কিনা সন্দেহ।