প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১৬
লঞ্চঘাটে প্রকাশ্য দখল, কর্তৃপক্ষের অর্থপূর্ণ শৈথিল্য

‘লঞ্চঘাটে টিকেট কাউন্টার ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধ ফার্মেসি ॥ দায়সারা বক্তব্য বিআইডব্লিউটিএ উপ-পরিচালকের’ এমন শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে শীর্ষ সংবাদ। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর লঞ্চঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র টিকেট কাউন্টার ঘেঁষে গড়ে উঠেছে হারুন মেডিকেল হল নামে অবৈধ ফার্মেসি। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিএ’র কাউন্টার ঘেঁষে নির্মিত হয়েছে ফার্মেসীটি। স্থানীয়দের মাঝে গুঞ্জন রয়েছে, বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক এবং বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. বছির আলী খানের সাথে যোগসাজশে, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ এই ফার্মেসি। এ বিষয়ে জনাব মো. বছির আলী খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিকেট কাউন্টার ঘেঁষে ফার্মেসি নির্মাণের কোনো অনুমতি আমি দেইনি। তবে স্থানীয় বিএনপি নেতারাই ফার্মেসিটি বসিয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। ফার্মেসি বসাতে আমার সাথে কারো কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি। অবৈধভাবে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি ছাড়া ফার্মেসিটি নির্মিত হয়েছে। ‘আপনি কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন কিনা’ এ বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। উল্টো তিনি বলেন, ফার্মেসিটি ব্যক্তি মালিকানার সম্পত্তিতে রয়েছে। ফার্মেসির মালিক হারুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি মানুষের সেবা করার জন্যে এখানে নিজের উদ্যোগে ফার্মেসিটি দিয়েছি। বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমি অনুমতি নেইনি। লঞ্চঘাটে যেহেতু কোনো ফার্মেসি নেই, তাই মানুষের উপকার করার স্বার্থেই ফার্মেসিটি দিয়েছি। এই এলাকার ছাত্রদল-যুবদল সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছে, যেহেতু এটি একটি মানবিক কাজ। বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক মো. বছির আলী খানও আমাকে সহযোগিতা করেছেন।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনি বলেন, লঞ্চঘাট এলাকায় কোনো ফার্মেসি না থাকায় যাত্রীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন না। কোনো পাবলিক টয়লেটও নেই। সেই কারণ উল্লেখ করে হারুন আমাদের কাছে আসে এবং একটি ফার্মেসি ও একটি পাবলিক টয়লেট করবে বলে সহযোগিতা চায়। আমরা তার কাছে জানতে চাই, পোর্ট অফিসারের কাছ থেকে পারমিশন নেওয়া হয়েছে কিনা? উত্তরে ফার্মেসীর মালিক হারুন বলেন, আমার সাথে পোর্ট অফিসারের কথা হয়েছে বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক হিসেবে। অত্র ওয়ার্ডের সবাই কাজটিতে সহযোগিতা করেছে। আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের সাথে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি। বিআইডব্লিউটিএ’র মাঠে একটা বাঁশ দাঁড় করালেও যেখানে তাদের অনুমতি লাগে, সেখানে কাউন্টার ঘেঁষে ফার্মেসি হয়েছে, বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা কোনো না কোনো সুবিধা নিয়ে থাকতে পারেন। আপনারা সাংবাদিক অনুসন্ধান করে বের করুন, পোর্ট অফিসার অথবা আমাদের সাথে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন হয়েছে কিনা। আমরা জানতে চাই, কার সাথে আর্থিক লেনদেন হয়েছে।
অবৈধভাবে লঞ্চঘাটে বিআইডব্লিউটিএর টিকেট কাউন্টার ঘেঁষে ফার্মেসিটি গড়ে উঠলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিআইডব্লিউটিএ’র কর্তা ব্যক্তিরা। এতে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ প্রতিক্রিয়াকে বিআইডব্লিউটিএ’র কর্তাব্যক্তিরা গুরুত্ব দিক বা না দিক, এটা যে সরকারি জায়গায় একটি প্রকাশ্য দখল প্রক্রিয়া, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক যে দলের নাম বিক্রি করুক না কেনো, কিংবা ভয় পাক না কেনো, দখলকৃত জায়গাটিকে ব্যক্তি মালিকানার (!) বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করুক না কেনো, তিনি এমন দখলদারিত্বে মৌনতা অবলম্বন করে ও প্রশ্রয় দিয়ে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে কার্যত আরো দখলদারিত্বকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে উস্কে দিলেন, যেটা তাকে অনুধাবন করতে হবে। এজন্যে যদি লঞ্চঘাটে বিশৃঙ্খলা ঘটে, সেটার দায় তিনি অস্বীকার করতে পারবেন না। আমরা এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও বিআইডব্লিউটিএ’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।