প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে বদলি হয়ে আসেন উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা এক চিকিৎসক দম্পতি। তারা হাসপাতালে ডিউটিরত অবস্থায় দালাল কর্তৃক প্রাইভেটভাবে রোগী দেখা, হাসপাতালের বাইরের প্যাথলজিতে কমিশনভিত্তিক বিভিন্ন টেস্ট পাঠানো, প্রাইভেট ক্লিনিকে ও প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার অফার পেয়ে, বিশেষ করে চাঁদপুরের রোগীদের আর্থিক সামর্থ্য দেখে রীতিমত বিস্মিত হয়ে যান। তারা অকপটে এক গণমাধ্যম কর্মীর কাছে বলেও ফেলেন, আমাদের এলাকায় হাসপাতালের ডিউটির বাইরে দেড়শ’ টাকা ভিজিটে রোগী দেখতে গিয়েও ঠিকমত টাকা পাইনি। আর চাঁদপুরে হাসপাতালের চেম্বারে এবং প্রাইভেট চেম্বারে রোগীরা নির্দ্বিধায় পাঁচশ’ টাকা ভিজিট দিয়েও বাড়তি সম্মান দেখিয়ে বিদায় নেয়।
চাঁদপুরের রোগীদের আর্থিক সামর্থ্য দেখে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল শুধু নয়, অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, এমনকি কমিউনিটি ক্লিনিকের ডাক্তাররাও প্রাইভেট চেম্বার খুলে ও প্রাইভেট ক্লিনিক/হাসপাতালের সাথে জড়িত হয়ে স্বল্প ক’বছরে প্রচুর অর্থ রোজগার করছেন এবং চাঁদপুরে থাকাবস্থাতেই গাড়ি-বাড়ির মালিক বনে যাচ্ছেন। কেউ কেউ তো প্রাইভেট প্র্যাকটিস জমিয়ে সরকারি চাকুরি থেকে ইস্তফা পর্যন্ত দিয়েছেন।
বস্তুত চাঁদপুরের সামর্থ্যবান রোগীদের কারণে চাঁদপুরে বদলি হয়ে আসা সরকারি ডাক্তারদের বিরাট অংশ সরকারি হাসপাতালের ডিউটিকে বিরক্তিকর বিষয় মনে করেন। সেজন্যে ইচ্ছেমত হাসপাতালে আসেন, ইচ্ছেমত যান। টাকার জোরে ক্ষমতা দেখান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেন। উৎকোচের পাশাপাশি চাঁদপুরের সুস্বাদু ইলিশ পাঠান জায়গা মতো। স্থানীয় সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক/সিভিল সার্জনকে এমন ডাক্তাররা কষ্ট করে স্যার বলেন, কিন্তু স্যারের কথানুযায়ী সরকারি নিয়ম মেনে কাজ করতে চান না। এখানকার কিছু ডাক্তারের এতো ক্ষমতা যে, তারা চেম্বারের স্থান পরিবর্তনের বিলবোর্ড দিয়ে হাসপাতাল ভবন ভরে ফেলার প্রকাশ্য ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেন।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ‘চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে চরম অসন্তোষ : চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থান চাঁদপুরের এই হাসপাতালের : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ॥ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক পরিদর্শনে এসে ৮৫জন ডাক্তারের মধ্যে পেলেন ২৬জনকে’। এ সংবাদের শিরোনাম থেকেই হাসপাতালটি সম্পর্কে পাঠকের ধারণা নিতে কষ্ট হয় না। গত ১৬ আগস্ট এ হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে উক্ত বিভাগীয় পরিচালক ডাক্তারদের অনুপস্থিতিসহ অন্য কিছু অনিয়ম সম্পর্কে লিখিতভাবে স্বাস্থ্য সচিবকে অবহিত করেছেন বলে উক্ত সংবাদে উল্লেখ করা হয়।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে চরম অসন্তোষের খবরে নিশ্চয়ই প্রতিটি সচেতন চাঁদপুরবাসী অপমান বোধ করছেন। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে স্থানীয় এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির হস্তক্ষেপে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত প্রয়াস জরুরি। অনিয়মে লিপ্ত ডাক্তারদের শাস্তিসহ নানা রূপ শুদ্ধি অভিযান না চালালে এবং কিছু সমস্যার সমাধান না করলে উক্ত হাসপাতালে সন্তোষজনক পরিবেশ তৈরি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস হয় না।