প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২১, ০০:০০
শান্তি-স্থিতিশীলতা-সহনশীলতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধে চাঁদপুর বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য জেলা। এখানকার মানুষ অতিথিপরায়ণ এবং আইনমান্যতার সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। চাঁদপুরের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে যারাই বদলি হয়ে কিংবা পোস্টিং নিয়ে চাকুরি করতে আসেন, তারা তাদের কর্মকালে উল্লেখযোগ্য ঝুট-ঝামেলার শিকার তেমন হন না। এখানে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই, আর রাজনৈতিক সংঘাত-ষংঘর্ষ নেই বললেই চলে। এখানে যেটা আছে, সেটা হচ্ছে বড় তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সুস্পষ্ট বিভক্তি। কিন্তু উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, এরা কোন্দল বা বিভক্তিতে জড়িয়ে থাকলেও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। তারা বাকযুদ্ধ করে, তবে সেটা শালীনতা ডিঙ্গিয়ে কিংবা সীমা লঙ্ঘন করে নয়। যেজন্যে বাকযুদ্ধ সশস্ত্র যুদ্ধে আর গড়ায় না। এসব কারণে চাঁদপুরের কর্মকালকে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুধু চাকুরি করা নয়, সপরিবারে বসবাসের জন্যেও উত্তম ভেবে থাকেন।
এক সময় বর্তমান চাঁদপুর স্টেডিয়ামের স্থলে ছিলো হেলিপ্যাড। হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা-চাঁদপুর যাতায়াত করা যেতো। এখন নৌ, সড়ক ও রেলপথে চতুর্মুখী যোগাযোগ স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হওয়ায় চাঁদপুরকে কর্মস্থল হিসেবে পছন্দ করার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অগ্রাধিকার দেন। এখানে মেঘনা, ডাকাতিয়া ও পদ্মা নদীর সৌন্দর্য এবং মিলনস্থল (বড় স্টেশন মোলহেড) প্রতিনিয়ত সকলকে আনন্দে উদ্বেলিত করে। এখানে অনেক কিছুই নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের সারল্য ও অতিথিপরায়ণতা চাকুরি করতে আসা লোকজনকে বিমুগ্ধ করে। এখানকার সংস্কৃতি অঙ্গনের কর্মচাঞ্চল্য সকলকে সুস্থ বিনোদন উপহার দেয়।
চাঁদপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বলেছেন, আমার পূর্ববর্তী স্টেশন পাবনায় আমার কর্মকালে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সংঘটিত খুন-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের খবরে আমাকে উদ্বিগ্ন থাকতে হতো, বিনিদ্র রজনী কাটাতে হতো। আর চাঁদপুরে এসে সারারাত নিরুদ্বিগ্ন অবস্থায় ঘুমিয়ে কাটালেও কোনো সমস্যা বোধ করছি না। কারণ, চাঁদপুর জেলাব্যাপী লোকজনের অপরাধ প্রবণতা খুবই কম।
চাঁদপুরে তিন বছরেরও অধিক সময়ে চাকুরি করার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান সম্প্রতি উপ-সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। তাঁর পোস্টিং হয়েছে রাজধানীতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব হিসেবে। তিনি এখন একের পর এক বিদায় সংবর্ধনা পাচ্ছেন। গত ২২ জুন চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা প্রদত্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আমার চাকুরি জীবনে মন খুলে কাজ করার সুযোগ হয়েছে চাঁদপুরে। .........চাঁদপুরের মানুষ আমার সকল কাজে সহযোগিতা করায় কঠিন কাজও সহজভাবে করতে পেরেছি।
চাঁদপুরে চাকুরি করার পর বিদায়কালে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রায় ৯৫ ভাগ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যে সর্বোচ্চ সন্তোষ প্রকাশ করেন, সেটি স্থানীয় পত্রিকাগুলোর আর্কাইভে গেলেই খুঁজে পাওয়া যায়। এদের প্রায় সকলেই অশ্রু সজল নয়নে চাঁদপুর থেকে বিদায় নেন এবং নূতন কর্মস্থলে যোগদান করেও চাঁদপুরের মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন, সু-সম্পর্ক বজায় রাখেন, এমনকি দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াবার প্রয়াস চালান। এটা নিঃসন্দেহে প্রতিটি চাঁদপুরবাসীর জন্যে গৌরবের।