বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ০০:০০

মঠসহ সকল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সংরক্ষণ চাই
অনলাইন ডেস্ক

মঠ বলতে সাধারণত সনাতন ধর্মাবলম্বী সন্ন্যাসীদের আশ্রম বা আখড়া কিংবা মন্দিরকে বোঝায়। চাঁদপুর শহরের পূর্বাংশে বাবুরহাটের কাছে একটি সুউচ্চ মঠের জন্যেই একটি এলাকার নাম হয়েছে মঠখোলা, যদিও মঠটির অস্তিত্ব এখন আর নেই। ফরিদগঞ্জের লোহাগড়ের তিনটি মঠ অত্যাচারী জমিদার কর্তৃক নির্মিত হলেও এগুলোর দৃষ্টিনন্দন রূপের কারণে পর্যটক মাত্রই সেখানে ভিড় জমায়। কালের আবর্তে ক্ষয়িষ্ণু অস্তিত্ব নিয়ে মঠগুলো টিকে থাকলেও সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এগুলোর সংস্কারে নিচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ। শাহরাস্তির নাওড়াতেও রয়েছে সুউচ্চ একটি মঠ। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটি সংস্কার করায় মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্ষতিগ্রস্ত হবার পরও এটি নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে পারছে। কচুয়ায় রয়েছে তুলাতলীর মঠ নামে দৃষ্টিনন্দন একটি মঠ। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে মঠটি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রতিবেদন।

চাঁদপুর কণ্ঠের কচুয়া ব্যুরো ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সংবাদটিতে লিখেছেন, কচুয়ায় ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে কড়ইয়া ইউনিয়নের তুলাতলী গ্রামে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৪শ’ বছরের পুরানো মঠ। নাম তুলাতলীর মঠ। মঠটি সংরক্ষণের কোনো পদক্ষেপ নেই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫কিলোমিটার দক্ষিণে কড়ইয়া ইউনিয়নের তুলাতলী গ্রামের দত্ত বাড়িতে গেলে দেখা যায় এ মঠটি।

দত্ত বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ সুরেশ কবিরাজ জানান, প্রায় ৪শ’ বছর পূর্বে জমিদার যাত্রামনি মজুমদার এ মঠটি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর পরিবারের কেউ বেঁচে না থাকলেও এলাকাবাসী এ মঠটি দেখাশোনা করে আসছে। পিরামিড আকৃতির ৯৬ ফুট উঁচু টেরাকোটা ফলক খচিত প্রাচীন স্থাপত্যের অপরূপ নিদর্শন হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে এই মঠটি। এ মঠটি দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। জরাজীর্ণ ঐতিহাসিক এই মঠটি এখন সংরক্ষণ না করা গেলে হারিয়ে যাবে পুরানো স্মৃতি। মাঝে মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থী আসে মঠটি এক নজর দেখতে। স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম, সুনীল ও আকিব বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে মঠটি সংরক্ষণ করা গেলে এটি হতে পারতো সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সকল মানুষের কাছে দর্শনীয় স্থান ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। মঠের সভাপতি অনাথ মজুমদার ও সেক্রেটারী হরিকমল মজুমদার বলেন, এটি আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য। এখানে নানা ধরনের লোকজন ঐতিহ্যবাহী মঠটি দেখতে দল বেঁধে আসেন। কিন্তু ৪শ’ বছরের এই মঠ এখন অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রায় ২৫ বছর পূর্বে ১৯৯৮ সালে এই মঠটি কিছুটা সংস্কার হলেও বর্তমানে আর কোনো মেরামত হয়নি। যে কারণে অযত্ন ও অবহেলায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে মঠটি। এখনো সময় আছে, সংরক্ষণ করা গেলে ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় এ মঠটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাই স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিনোদনপ্রেমী মানুষদের পক্ষ থেকে তুলাতলীর এ মঠটি সংস্কার করতে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়েছে। স্থানীয় অধিবাসী গাজী মোঃ ছোবহান মিয়া বলেন, ছোট বেলা থেকে এ মঠটির অনেক নামণ্ডডাক শুনেছি। সত্যিই অসাধারণ এ পুরানো মঠটি। এর সঠিক সংরক্ষণ প্রয়োজন। এ সরকারের কাছে মঠটি সংরক্ষেণের দাবি জানাই।

প্রাচীনকালের ইতিহাস উদ্ঘাটনে পুরানো যে কোনো স্থাপনা হতে পারে অনেক বড়ো সহায়ক। এমন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষেও খুঁজে পাওয়া যায় স্থাপত্য রীতি এবং ঐতিহ্যের সন্ধান। সেজন্যে ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনুসন্ধান ও সংরক্ষণে পুরানো স্থাপনা সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করার অনিবার্যতা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। এই অনিবার্যতা পূরণে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকেই দায়িত্বপালন করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই বিভাগটি জনবল সহ নানা সঙ্কটে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। নতুবা চাঁদপুরের দৃষ্টিনন্দন মঠ সহ আরো অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণে সময়োচিত পদক্ষেপ দেখা যেতো। এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সরব হওয়া প্রয়োজন বা জরুরি বলে মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়