রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ০০:০০

অভিযান যদি লাগাতার হতো, চিত্র হতো কতো ভয়ঙ্কর!
অনলাইন ডেস্ক

পুলিশ, নৌ-পুলিশ, সিআইডি, ডিবি, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সহ যে সংস্থাই মাদকবিরোধী অভিযান চালাক না কেনো, তারা সাধারণত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেটি চালায়। তাদের নিয়োজিত সোর্স কিংবা অন্য যে কোনো বিশ্বস্ত সূত্রের দেয়া তথ্যের আলোকে তাদের অভিযান সফলতার মুখ দেখে। গত এক সপ্তাহে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত পাঁচটি অভিযানে ৪৬ কেজি গাঁজা, ১০৪০টি ইয়াবা, ৩৯০ বোতল ফেন্সিডিল, একটি প্রাইভেট কার ও একটি সিএনজি অটোরিকশা সহ ৭জন আটকের খবরে সচেতন ব্যক্তিমাত্রই থমকে দাঁড়াবে।

চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ পড়ে জানা যায়, ২৩ মে মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের সময় ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ, জেলা গোয়েন্দা শাখা, চাঁদপুরের দিক-নির্দেশনায় এসআই মাজহারুল হক সঙ্গীয় ফোর্সসহ মাদক উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করাকালে ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ১৬নং রূপসা (দক্ষিণ) ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে চরমান্দারী সাকিনস্থ বর্ডারবাজার উত্তরপাড়ে আল-আমিন স’মিলের সামনে পাকা রাস্তার ওপর হতে মাদক ব্যবসায়ী মোঃ শহিদুল ইসলাম (৩৫), পিতা-আবদুস শাকুর, মাতা-দিলদার বেগম, সাং-বালুখালী (পানবাজার), ওয়ার্ড নং-০২, থানা-উখিয়া, জেলা-কক্সবাজারকে ১ হাজার পিচ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেন।

২২ মে সোমবার দুপুর আড়াইটায় চাঁদপুর নৌ-থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামানের নির্দেশে এসআই (নিঃ) সুমন দে সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ চাঁদপুর লঞ্চঘাটে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় মাদক ব্যবসায়ী বাদশা (৩০)-এর কাছ থেকে বিশেষ কৌশলে মোড়ানো গাঁজার বারোটি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া বাদশা গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার কাউরাত, মধ্যপাড়া এলাকার মোরশেদ আলমের ছেলে। সে গাঁজাগুলো কুমিল্লা থেকে নিয়ে আসে। চাঁদপুর নৌ-থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানের মাদক কারবারীরা চাঁদপুর নৌপথকে দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ রূট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। আজকে আমরা গোপন সংবাদ পেয়ে ঘাটে অবস্থান করি। তারপর গাজীপুরের বাদশাকে ১২ কেজি গাঁজাসহ হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হই।

হাজীগঞ্জে প্রাইভেটকারে বহন করে মাদকের বড় চালান পাচারকালে ৩৯০ বোতল ফেনসিডিল ও ২৭ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের একটি টিম। ১৯ মে শুক্রবার রাতে হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন এনায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে মাদকবিরোধী এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মাসুদ পারভেজ সুমন (৩৪) নামে একজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার ও মাদকসহ তাকে বহন করা সাদা রঙের প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত মাসুদ পারভেজ সুমন শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার চরসুরগাঁও গ্রামের মোঃ শহীদের ছেলে। এদিন রাত ১১টায় এ তথ্য নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইমদাদুল ইসলাম মিঠুন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের টিম বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজীগঞ্জ উপজেলার এনায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান করে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে।

ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে সাত কেজি গাঁজাসহ মোঃ শাহজাহান (৪১) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। বুধবার (১৭ মে) দিবাগত রাতে ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন কামতাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত শাহজাহান কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের মোঃ কালা মিয়ার ছেলে। ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবদুল মান্নান জানান, এক মাদক ব্যবসায়ী গাঁজাসহ কামতা বাজার হতে শোল্লা রোডস্থ ব্রিজ এলাকায় অবস্থান করছেন--এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় একটি সিএনজি অটোরিকশায় তল্লাশি চালিয়ে ৭ কেজি গাঁজা ও সিএনজিটি জব্দ করে শাহজাহানকে আটক করা হয়। সে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক সরবরাহ করে আসছে।

রোববার রাতে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মহিউদ্দিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এসআই মোঃ আবু হানিফ, এসআই মোঃ শাহ আলম মিয়া, এএসআই মোজাম্মেল হক এবং সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় মাদক উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের ফরাজীকান্দি গ্রামের রুবেল মোল্লা অটোরিকশার গ্যারেজের সামনের পাকা রাস্তার উপর থেকে উত্তর রামপুর গ্রামের বাতেন মোল্লার ছেলে মোঃ রুবেল মোল্লা (৩৪), মিরাকান্দি গ্রামের মোঃ হান্নান বেপারীর ছেলে মোঃ বশির আহম্মেদ (২৬) এবং শাখারীপাড়া গ্রামের মৃত আবুল হাশেম ছেলে আঃ টিপন প্রকাশ টিপু দেওয়ান (৩১)কে ৪০পিচ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

উপরোল্লিখিত পাঁচটি সংবাদে চাঁদপুর জেলার পাঁচটি স্থানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাঁচটি বিক্ষিপ্ত অভিযানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এতেই মাদকের একটা বিকট রূপ ফুটে উঠেছে। যদি প্রতিদিন চাঁদপুরের বিভিন্ন রূটে চলমান প্রতিটি যানবাহনে লাগাতার অভিযান চালানো হতো, তাহলে কী পরিমাণ মাদক উদ্ধার হতো ও মাদক ব্যবসায়ী আটক হতো, সেটা চোখ বুঁজে সামান্য ধারণা করলেই মনের পর্দায় ভেসে উঠবে এক ভয়ঙ্কর রূপ। যে রূপে উদ্বিগ্ন না হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এই উদ্বিগ্নতা হ্রাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহের অভিযানকেই আমরা যথেষ্ট মনে করছি না। মাদক বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিতে লাগাতার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনাকীর্ণ স্থান সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সভা-সমাবেশ-সেমিনার আয়োজন করা ও সর্বত্র মাদকের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালানো এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিয়মিত অভিযান সহ মাদকবিরোধী সম্মিলিত ও সমন্বিত কার্যক্রমকেই যথেষ্ট বলে আমরা মনে করছি। এমনটি করা না হলে মাদকের ভয়াবহ করাল গ্রাসে সুখী পরিবার, সুন্দর সমাজে নামবে নানা ধস, যা রোধ করা এক পর্যায়ে অনেক অনেক কষ্টকর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বলে আমাদের কাছে অনুমিত হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়