রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩, ০০:০০

সিএ হতে গিয়ে যখন সফল নারী উদ্যোক্তা
অনলাইন ডেস্ক

চাকুরি করার চেয়ে উদ্যোক্তা হতে পারাটা যে কতো বড় সাফল্যের সেটা প্রায়শই বিভিন্নভাবে জানা যায়। এতে উদ্যোক্তার আর্থিক নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হয়, তেমনি অনেকের কর্মসংস্থানের অর্থাৎ চাকুরি দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়। দেশের মাটিতে উদ্যোক্তা হওয়া যতোটা সহজ, বিদেশের মাটিতে সেটা ততোটা সহজ নয়। বলা যায়, অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। তারপরও কেউ কেউ সফল হচ্ছেন, সাফল্যের আলো ছড়িয়ে নিজকে শুধু নয়, দেশকেও আলোকিত করছেন। এদেরই একজন চাঁদপুরের মেয়ে জাহিদা আক্তার রিতা।

‘মালয়েশিয়ায় পড়তে গিয়ে সফল উদ্যোক্তা চাঁদপুরের জাহিদা’ শিরোনামে অতি সম্প্রতি চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের নারীরা সফলতার স্বপ্ন ছড়াচ্ছেন বিদেশের মাটিতেও। তাদেরই একজন জাহিদা আক্তার রিতা। পড়ালেখার জন্যে মালয়েশিয়ায় গিয়ে তিনি হয়ে উঠেন সফল উদ্যোক্তা। তার সফলতা এখন অনেকের কাছেই অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলায় বাড়ি জাহিদার। তবে বাবার ব্যবসার সুবাদে বেড়ে ওঠা ঢাকার শ্যামলীতে। ২০১৭ সালে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) হতে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ার ম্যাথটিস কলেজে। এরপর তিলতিল করে গড়ে তোলেন নিজের শখের এবং স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান ‘ডিকে সেলুন’। জাহিদা জানান, নিজেকে পরিপাটি রাখতে মাঝেমধ্যে তিনি মালয়েশিয়ান বিউটি পার্লারে যেতেন। ফেসিয়ালসহ বিভিন্ন কাজে তাকে গুণতে হতো বড় অংকের টাকা। একদিন হুট করেই চিন্তা এলো, এমন একটা প্রতিষ্ঠান যদি তিনি দেন, তাহলে তাকে আর অন্যের পার্লারে যেতে হবে না। নিজের এমন কাজের জন্যে তাকে অর্থ ব্যয় করতে হবে না, বরং আয়ের একটা উৎস বের হবে। তখন থেকেই তার মাথায় চেপে বসে পার্লারের মালিক হওয়ার স্বপ্ন। জাহিদার সাজগোজের শখ ছিল আগে থেকেই। ফলে কিছু অভিজ্ঞতাও ছিল। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুরু করেন তার সেলুনশপ নিয়ে যাত্রা। বর্তমানে সেটিই এখন ডিকে সেলুন নামে পরিচিত। এটি কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতানের সুঙ্গাই ওয়ান প্লাজায় অবস্থিত। এই সেলুনে প্রবাসী বাংলাদেশি নারীদের পাশাপাশি বিদেশিরাও ভিড় করেন সেবা নিতে। এর পাশাপাশি আছে আরও একটি সেলুনশপ। তার সেলুনে বর্তমানে মেয়ে ও ছেলেদের হেয়ারকার্ট, কালার, স্ট্রেইটেনিং, হেয়ার এক্সটেনশন, মেকাপসহ প্রায় চল্লিশ ধরনের সার্ভিস দেওয়া হয়।

জাহিদা আক্তার বলেন, ‘আমার ছোটবেলা থেকেই একটা চাওয়া ছিল, নিজের পায়ে দাঁড়াব এবং সমাজে যারা অবহেলিত আছে, তাদের জন্যে কিছু করবো। যখন ঢাকাতে পড়াশোনা করতাম, নিজের জন্যে করা ডিজাইন দেখে অনেকেই পছন্দ করে বানিয়ে দিতে বলতো। তখন থেকেই মূলত আমার উদোক্তা হওয়ার ইচ্ছা শুরু।’ জাহিদা আরো বলেন, ‘যখন মালয়েশিয়াতে এসেছিলাম, অনেকেই অনেকভাবে মন্তব্য করেছে। শুরুটা ভালো ছিলো না। কিছু সমস্যা ছিল। একে তো মেয়ে, তার ওপর ভাষাগত দক্ষতা নেই। এদেশের নিয়মকানুন আমাদের দেশ থেকে অনেক আলাদা। তবুও হাল ছাড়িনি, কাস্টমারদের সঙ্গে মিশে তাদের বেস্ট সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’ শুরুটা বিদেশের মাটিতে হলেও ভবিষ্যতে ঢাকাতেও একটা সেলুনশপ করার ভাবনা আছে বলে জানান রিতা। তিনি বলেন, যে কাজগুলো করেন এই কাজের জন্যে অনেকেই ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, দুবাই, মালয়েশিয়াতে যায়। তাই দেশের মাটিতে এই সেবা দিতে পারলে বাংলাদেশি কাস্টমারদের বিদেশে সেবা নিতে যেতে হবে না। সেলুনের পাশাপাশি এটার উপর প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকেন তিনি। সফলতার প্রশ্নে জাহিদা বলেন, ‘সফলতা সব কিছুতেই পেয়েছি। যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশিই পেয়েছি। ছোটবেলা ইচ্ছে ছিল সাইকেল চালানোর, এখন ল্যান্ড ক্রুজার চালাচ্ছি। এসব কিছু সম্ভব হয়েছে আমার মা-বাবার সহযোগিতার কারণে।’

আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকার নারী-পুরুষের সহজ চাহিদা হচ্ছে, কষ্টকর কিছু না করে একটি চাকুরি পাওয়া। কিন্তু আজকাল সরকারি চাকুরি মানে তো সোনার হরিণ। জোরালো তদবির, ঘুষ কিংবা মামার জোর ছাড়া চাকুরি বাগিয়ে নেয়াটা বিরল ঘটনা হয়ে গেছে। বেসরকারি চাকুরি পাওয়াটাও কঠিন ও সৌভাগ্যের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর পেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রমণ্ডশোষণ ও অধিকার বঞ্চনার ঘটনা ঘটে চলছে। এটা মেনে চলা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায় অনেকের জন্যে। তাই ছোট-বড় উদ্যোক্তা হওয়ার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় স্বাচ্ছন্দ্য। এ ক্ষেত্রে জাহিদা আক্তার রিতাদের মতো উদ্যোক্তারা অবশ্যই অনুকরণীয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়