প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩, ০০:০০

শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক সহ যে কোনো ধরনের নির্যাতন এখন আইনগত নিষিদ্ধ। এর ফলে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে বেত মারার সহজ পদ্ধতি হারিয়ে অহায়ত্বে ভুগছেন--এটা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অধিকাংশ শিক্ষকই তাদের আলাপচারিতায় বলে ফেলেন। বিকল্প হিসেবে শিক্ষকরা কোন্ কৌশলে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং সে কৌশলের প্রয়োগে তারা কতোটা সাফল্যের পরিচয় দিয়ে চলছেন, সে বিষয়ে খুব একটা জানা যায় না। অভিভাবকরা তাদের সন্তান কিংবা পোষ্যদের নিয়ন্ত্রণে বেতের ব্যবহার করতে পারবেন না কিংবা শারীরিক-মানসিক অন্য শাস্তি প্রয়োগ করতে পারবেন না এ সংক্রান্ত কিছু লিখার আগে আমাদের এটা লিখতে হবে যে, অভিভাবকদের অধিকাংশের শৈথিল্য, উদাসীনতা, নীতিহীনতা, আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শিক্ষার্থীরা তো এখন বিশৃঙ্খলার তুঙ্গে। বিশেষ করে প্রবাসী কিংবা ধনাঢ্য অভিভাবকদের আদরের আতিশয্যে কিংবা আবদার রক্ষার উদারতায় শিক্ষার্থীরা সহজে হাতে পাচ্ছে স্মার্ট ফোন, লেটেস্ট মডেলের মোটরসাইকেল। যে শিক্ষার্থী প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়াবস্থায় স্মার্ট ফোন করায়ত্ত করতে পারে, সে শুধু অভিভাবক নয়, শিক্ষকসহ কারো নিয়ন্ত্রণেই থাকে না। তার অন্যতম নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (যেমন : ফেসবুক)-এর বন্ধুদের হাতে। সেজন্যে ঘটন-অঘটন সব হয় এই বন্ধুকেন্দ্রিক। চাঁদপুর কণ্ঠে গত শুক্রবার এমন একটি অঘটনের সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম হয়েছে 'ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৪'।
সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, ফরিদগঞ্জে দুইদল শিক্ষার্থীর মধ্যে ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের পাইকপাড়া ইউজি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম ও ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১ মে বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এই ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৩ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। অভিভাবক ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাহেদ ও ৯ম শ্রেণীর তৌহিদ তাদের ফেসবুকে লাইক-কমেন্ট নিয়ে গত ক'দিন ধরে ম্যাসেঞ্জারে নানা অশ্লীল বাক্য বিনিময় করে। ১১ মে বৃহস্পতিবার তারা উভয়ে বিদ্যালয়ের ক্লাস আসলে এক পর্যায়ে ৯ম শ্রেণীর ইমান, রোখসার, নিরব, শহিদুল, আবরার, তৌহিদ, হিমেল ও সৈকতসহ অন্য শিক্ষার্থীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে ৮ম শ্রেণীর ক্লাসে প্রবেশ করে সাহেদসহ তার সহপাঠীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ৮ম শ্রেণীর সাহেদ, ফাহাদ, আদিল ও ৯ম শ্রেণীর আল-আমিন গুরুতর আহত হয়।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার কারণে প্রায় দিনই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বহিরাগতদের সাথে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। ইতিপূর্বে কয়েকবার এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়নি। তাছাড়া গত তিন বছর ধরে বিদ্যালয়ে কোনো কমিটি না থাকায় শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছলিম উল্যাহ জানান, ফেসবুকের ঘটনা নিয়ে উল্লেখিত শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আমরা তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের শান্ত করি। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে দুই শ্রেণীর ১৩ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, বিষয়টি আমি জানার সাথে সাথে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি। উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি।
এই নির্দেশ পালনে সেই অভিভাবকদের সাথেই কথা বলতে বলা হয়েছে, যারা পরিণামদর্শিতার কথা না ভেবে তাদের সন্তান/ পোষ্যদের আবদার রক্ষায় তাদের হাতে স্মার্টফোন ও মোটরসাইকেল তুলে দেয়ার অপ্রয়োজনীয় কাজটি করে থাকে। এজন্যে অভিভাবকদের আইনের মারপ্যাঁচে শায়েস্তা করার প্রসঙ্গটি আগে আসে। এ সংক্রান্ত আইন না থাকলেও সে আইন নূতন করে প্রণয়নের দাবি চলে আসে। শিক্ষার্থীদের কার্যকর নিয়ন্ত্রণে এখন শিক্ষককেন্দ্রিক বস্তুত তেমন কিছু নেই, যা কিছু আছে তা কেবল অভিভাবককেন্দ্রিক। কাজেই এ বিষয়ে কার্যকর/বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে ভাবার কাজটি শুরুর বিষয়ে কিংবা ইতঃমধ্যে শুরু হয়ে গেলে তাতে গুরুত্বের সাথে মনোযোগী হতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানানো ছাড়া আমাদের পক্ষে অন্য কিছু লিখার ফুরসত খুব বেশি আছে বলে মনে করি না।