প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ০০:০০

অতি সম্প্রতি শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ পরিবর্তন ছিলো না বলে প্রেসক্লাবটি গতিহীনতায় আক্রান্ত ছিলো। জবাবদিহিতার অভাব তো ছিলোই। নিয়মিত সভা না হওয়ায় এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নে কোনো কার্যক্রম না থাকায় স্পষ্ট-অস্পষ্ট স্থবিরতা ও অসন্তোষ পরিলক্ষিত হচ্ছিল। তবে এটা ঠিক, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ছিলো না নৈতিকতার স্খলনজনিত উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযোগ। এই প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রে কোনো কমিটির মেয়াদ কতো বছরের জন্যে হতে পারে সে ব্যাপারে কী লিখা আছে বা নেই সেটা না জানা না গেলেও বারবার এটা জানা যাচ্ছিলো যে, বিদ্যমান কমিটি দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় বহাল রয়েছে এবং অধিকাংশ সদস্যের প্রত্যাশার অনুকূলে না চলে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অসন্তোষের মধ্য দিয়ে চলছে। এ ব্যাপারে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাংবাদিক সমাবেশে উষ্মা প্রকাশিত হলেও বিদ্যমান নেতৃত্ব তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মধ্যে কাউকে কাউকে আক্রমণ করার আপত্তিকর কাজও করেছেন। কিন্তু সত্য তো সত্যই। দীর্ঘদিনের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা পোষণের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন, এমনকি জনপ্রতিনিধিদের নিকট সুস্পষ্ট প্রতিভাত হলে তারা নড়েচড়ে বসেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে আন্তরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। বিশেষ করে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি আসনের এমপি, মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের আন্তরিক হস্তক্ষেপে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের নেতৃত্বে পরিবর্তন সাধিত হয়।
শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি পদে আসীন হয়েছেন এই ক্লাবেরই দীর্ঘদিনের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক মঈনুল ইসলাম কাজল এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক, আরেকজন সিনিয়র সাংবাদিক স্বপন কর্মকার মিঠুন। তাদের সাথে কমিটিতে রয়েছেন মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় এক ঝাঁক সংবাদকর্মী। ইতঃমধ্যে এ কমিটি একের পর এক বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে স্থানীয় জনমনে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। গেলো রমজানে এই কমিটি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজন করে এমন একটি ইফতার মাহফিল, যেখানে স্থানীয় এমপি মহোদয় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও, পৌরসভার মেয়র, থানার ওসি সহ সরকারি-বেসরকারি পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, চাঁদপুর প্রেসক্লাব ও বিভিন্ন উপজেলা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বি়ভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সর্বস্তরের সুধীজন উপস্থিত থেকে নূতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রদর্শন করেন। এতে নূতন নেতৃত্ব উজ্জীবিত হয় এবং ঈদ পুনর্মিলনীসহ আরো কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সন্নিকটে প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণে পাঁচ শতাংশ জায়গা ক্রয়ে বায়না সম্পাদন এবং সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে নিজেদের সক্রিয়তা প্রদর্শন। সরকারি তথা খাস জমি কিংবা পৌর ভূমি ইজারা প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রিতার জন্যে অপেক্ষা না করে নিজেরা জায়গা কিনে পছন্দসই উপযুক্ত স্থানে প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে যথার্থ বলেই মনে হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকারি-বেসরকারি অনুদানে এই স্থানে শীঘ্রই প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
এটা বলা দরকার, যে কোনো সংগঠনে নেতৃত্ব পরিবর্তনে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়। শাহরাস্তিতে প্রেসক্লাবের নূতন নেতৃত্বে আমরা সেটিই লক্ষ্য করছি। এ নেতৃত্বকে টেকসই করতে হলে অবশ্যই সাংগঠনিক শৃঙ্খলা জরুরি। সেজন্যে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন বা বিদ্যমান গঠনতন্ত্র হালনাগাদকরণ এবং সেমতে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় বাধ্যবাধকতা মেনে চলার অনিবার্যতা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ান্তরে নেতৃত্বের পরিবর্তনে আন্তরিক থাকা, পূর্বের কমিটির ন্যায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মানসিকতা পরিহার করা এবং সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নসহ সর্বাত্মক কল্যাণে বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের নবগঠিত কমিটি তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখুক--সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।