সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

যাত্রী সঙ্কট, না মাত্রাতিরিক্ত লঞ্চ?
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর-ঢাকা নৌরূটে স্বাধীনতোত্তর লঞ্চের সংখ্যা ছিলো হাতে গোণা। হেনা এক্সপ্রেস, বেঙ্গল ওয়াটার, মিতালী ও ঝিলু। তারপর ঈগল এসে ঝড় তুললো। পূর্বাপর ঝমঝম, আবে ঝমঝম, ময়ূর, বোগদাদিয়া, বোরাক, পুতুল, সোনার তরী তো আসলোই। তারপর আরো কতো লঞ্চ যে আসলো ও গেলো তার হিসেব দেয়া কঠিনই বটে। কারণ, সাম্প্রতিক ক'বছরে চাঁদপুর-ঢাকা নৌরূটে বাসের ন্যায় আধা ঘণ্টা বিরতিতে লঞ্চ ছাড়া ও আসার বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা যে মাত্রাতিরিক্ত সেটা মালিকরা না বুঝলেও এখন বুঝতে শুরু করছে বলে মনে হচ্ছে।

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে লঞ্চের যাত্রী সঙ্কট নিয়েই। ‘চাঁদপুর-ঢাকা রূটে যাত্রী সঙ্কট ॥ অনেক লঞ্চই এখন চলছে না’ শিরোনামের এই সংবাদে চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মিজানুর রহমান লিখেছেন, যাত্রী সঙ্কটের কারণে চাঁদপুর-ঢাকা নৌ রুটে এখন সিডিউল মোতাবেক সব লঞ্চ চলাচল করছে না। প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে লঞ্চ চলাচল। বড় বড় লঞ্চগুলোর চলাচল প্রায় বন্ধ রেখেছে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ। চলতি রমজান মাসের শুরু থেকে যাত্রীর আকাল পড়েছে বলে লঞ্চঘাট সূত্রে জানা যায়। সোনার তরী, ঈগল-৩, রহমত, রায়হান-১, আবে জমজমণ্ড৭, রফ রফ, রফরফ-২, বোগদাদীয়া-৭, অ্যাডভেঞ্চার ও ময়ূর-৭-এর মতো লঞ্চগুলোর চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সকাল ৮টায় ঈগল-৭ একদিন আগেও চাঁদপুর থেকে ছেড়ে গেছে। মঙ্গলবার সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। সন্ধ্যার ইমাম হাসান দুটি লঞ্চের মধ্যে চলছে একটি।

লঞ্চ মালিক আর কত লোকসান দেবে? লঞ্চ চালিয়ে জ্বালানি তেলের খরচ উঠছে না। তাই ঢাকা-চাঁদপুর রূটের অর্ধেক লঞ্চই এখন চলছে না। এমন কথা বলছেন চাঁদপুর লঞ্চঘাটের একাধিক ঘাট সুপারভাইজার। বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর লঞ্চঘাটের পরিবহন পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম জানান, সিডিউল মোতাবেক এ রূটে ২৫টি লঞ্চ চলাচল করতো। রোজার শুরু থেকে যাত্রী খুবই কম হচ্ছে। তাই লোকসানের কারণে বড় বড় লঞ্চগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তারা লসের মধ্যে আছে। তাই বেশিরভাগ লঞ্চই এখন চলছে না। তিনি বলেন, যাত্রীর চাপ না থাকায় এখন ছোট আকারের ১১-১২টি লঞ্চ চলাচল করলেও ঈদের আগে সব লঞ্চই চলবে। এদিকে যাত্রী কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে লঞ্চ টার্মিনাল সংশ্লিষ্ট অটোবাইক, সিএনজি অটোরিকশা চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ঘাটে দিনমজুরের কাজ করা ব্যক্তিরা। লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখায় লঞ্চের স্টাফরাও এখন বেকার।

চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। যেই সময় ঢাকাগামী যাত্রীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে পুরো ঘাট এলাকা, সে সময় ঘাটে যাত্রীদের আনাগোনা খুবই কম, আগের মত লঞ্চে যাত্রী ওঠানোর হাঁকডাক নেই। রফরফ লঞ্চের চাঁদপুর ঘাট ম্যানেজার মোঃ ইউসুফ আলী বলেন, চাঁদপুর থেকে ঢাকা যেতে আমাদের লাস্ট ট্রিপে ৬০ জন ডেক যাত্রী হয়েছে। আর কেবিন ভাড়া হয়েছে ২-৩টি। এতে বর্তমানে প্রতিবার ঢাকা আসা যাওয়ায় লঞ্চ মালিকের মোটা অংকের লোকসান দিতে হয়। তাই এ রুটে তাদের ২টি লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে।

লঞ্চে যাত্রী সঙ্কটের এ বাস্তবতার পেছনে গেলো মার্চের শেষার্ধে ও চলতি এপ্রিলের শুরুতে ঝড়-বৃষ্টির প্রভাব কাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে। এ ছাড়াও পূর্বে আড়াই-তিন ঘণ্টায় চাঁদপুর-ঢাকা/ ঢাকা-চাঁদপুর নৌরূট লঞ্চযোগে পাড়ি দেয়া গেলেও তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ব্যয় সাশ্রয় করতে গিয়ে সময় লাগাচ্ছে সাড়ে তিনঘণ্টা থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা। আর ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি তো রয়েছেই। এমতাবস্থায় অনেক যাত্রী কম সময় ও খরচে বাবুরহাট-মতলব সেতু-শ্রীরায়ের চর সেতু-দাউদকান্দি কিংবা বাবুরহাট-পেন্নাই রূটে সড়কে ঢাকা ও চাঁদপুরের মধ্যে যাতায়াত করছে। চাঁদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে বাবুরহাট-পেন্নাই কিংবা হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরীপুর রূটে চাঁদপুর ও ঢাকার মধ্যে যাতায়াতকারী 'পদ্মা'র মতো বড়ো বাস যদি চলাচলের অনুমতি পেয়ে যায়, তাহলে লঞ্চযাত্রী যে কী পরিমাণ হ্রাস পাবে সেটা সহজেই আন্দাজ করা যায়।

আগামী কয়েক বছর পর মতলব উত্তরের কালীপুর-ভবেরচরের মধ্যে মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ শেষ হলে চাঁদপুর ও ঢাকার মধ্যে যাতায়াতের বিষয়টি ২ ঘণ্টার মধ্যে এসে ঠেকবে। তখন চাঁদপুর-ঢাকা নৌরূটে লঞ্চের সংখ্যা এক ঘরের বেশি থাকবে বলে মনে করছি না। তবে আড়াই ঘণ্টা সময়সীমা ও ভাড়া কিছুটা কম রাখলে কিছু লঞ্চ টেকসই অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস রাখছি। উন্নত সার্ভিস, স্বল্প সময়, সুলভ ভাড়ার দিকে মালিক পক্ষ খেয়াল রাখলে চাঁদপুর-ঢাকা লঞ্চ সার্ভিস টিকিয়ে রাখাটা চ্যালেঞ্জিং হবে না। এ বিষয়ে এখন থেকেই লঞ্চ মালিক পক্ষ দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনায় আচ্ছন্ন হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়