প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

বেশি কষ্ট করার দরকার হয় না, গুগুলে খুঁজলেই কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেখানে লেখা আছে, আইনে কোর্ট ম্যারেজ বলে কোনো বিধান নেই এবং এর কোনো ভিত্তিও নেই। এটি কেবল লোকমুখে প্রচলিত।অধিকাংশ মানুষ কোর্ট ম্যারেজ বলতে সাধারণত হলফনামার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের ঘোষণা দেওয়াকেই বুঝে থাকেন। এ হলফনামা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে নোটারী পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হয়ে থাকে।
সম্প্রতি চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম মোসা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে 'বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন বিধিমালা, জেন্ডার সমতা ও শিশু অধিকার' শীর্ষক ওরিয়েন্টেশনে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোর্ট ম্যারেজ বলে কোনো শব্দ নেই। অ্যাফিডেভিটেও কোনো বিয়ে নেই। প্রেম সংক্রান্ত কারণে কিংবা অন্য কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে কোর্টে উকিলের মাধ্যমে বিচারকের সামনে কিংবা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে মেয়ের বয়স সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়া হয়, তবে মুসলিমণ্ডবিয়ে ইমাম/কাজীর মাধ্যমেই সম্পন্ন করতে হয়। যারা কেবল এমন ঘোষণা দিয়ে স্ব স্ব ধর্মের বিধান অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন না করে দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করে, তাদের যে সন্তান জন্মাবে অবশ্যই সেটি জারজ হবে।
ইপসা ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই ওরিয়েন্টেশনে চাঁদপুরের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ২৫ জন সাংবাদিক অংশ নেন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বশির আহমেদ। আইন ও বিধিমালা বিষয়ে আলোচনা করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম মোসা। গ্লোবাল এফেয়ার্স অব কানাডা ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন কম্বেটিং আরলি ম্যারেজ ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় ছিলো দিনব্যাপী এই ওরিয়েন্টেশন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বশির আহমেদ বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। বাল্যবিবাহ সমাজ ও রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই বাল্যবিবাহ রোধে সকলকে যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে। লিখনীর মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করতে পারলে সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ নিরোধ করা সম্ভব। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম মোসা বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ও বিধিমালা সাংবাদিকদের মাধ্যমে সমাজে এবং প্রত্যন্ত জায়গায় ছড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে শিক্ষক ও ছাত্রীদের কাছে বিষয়টি বেশি করে তুলে ধরতে হবে। সরকারের একার পক্ষে বাল্যবিবাহ রোধ সম্ভব নয়। মানুষকে বুঝতে হবে, একটি মেয়ের বাল্যবিবাহ হলে তার মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা থাকে না। তিনি বলেন, বিবাহ নিবন্ধনের একমাত্র বৈধ কর্তৃপক্ষ হচ্ছেন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার তথা কাজী। এর বাইরে অন্য কোনো উপায়ে বিবাহের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তাই কোর্টের বিয়ে বলে যে একটা কথা প্রচলন আছে, এর কোনো ভিত্তি নেই। কোর্ট কখনো বিয়ে পড়ায় না বা রেজিস্ট্রি করে না। বিবাহ সংক্রান্ত ‘ঘোষণাপত্র’ দিয়ে বিবাহ প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই।
আমরা মনে করি, বাল্য বিবাহ নিরোধে এমন ওরিয়েন্টেশন যতো হবে, কোর্ট ম্যারেজের নামে বাল্য বিয়েকে জায়েজ করার ব্যাপারে উদ্যোক্তাদের কারসাজি ততোটা পরিষ্কার হবে। বাস্তবতা হলো, এমন ওরিয়েন্টেশন বা কর্মশালা আয়োজন ব্যয়বহুল। সেজন্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহজ উপায় অবলম্বনে তথ্য অধিদপ্তরকে পূর্বের চেয়ে বেশি কাজে লাগানোর বিষয়টি তাদের পরিকল্পনায় রাখতে হবে। পাশাপাশি গণমাধ্যমে মাঝে মধ্যে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার বা প্রকাশের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া উদ্ভাবনীমূলক অন্য কোনো পদক্ষেপও নিতে হবে।