প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
মরণ ফাঁদে মরণ হলে দায় নেবে কে কাঁধে?

আমাদের দেশের সড়কগুলো যানবাহনের চাপে ক্রমশ ব্যস্ত হয়ে উঠছে। হাল্কা-মাঝারি আকারের যানবাহন সাধারণ সড়কে চললে সে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বললেই চলে। কিন্তু ভারী যানবাহন ধারণ ক্ষমতার অধিক মালামাল নিয়ে চললে সব ধরনের সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর সেতু? সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কের চেয়েও বেশি। জাতীয় মহাসড়কে ভারী যানবাহনের মালামাল ওজন করার ব্যবস্থা থাকলেও অন্যান্য সড়কে সে ব্যবস্থা সাধারণত থাকে না। ফলে সড়কের দফারফা তো হয়ই, সেতুর অবস্থা হয়ে যায় ঝুঁকিপূর্ণ।
|আরো খবর
এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু নিয়ে সম্প্রতি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়েছে সংবাদ। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে, নারায়ণপুরে বোয়ালজুরি খালের ব্রীজ এখন মরণ ফাঁদ। এ সংবাদে মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ লিখেছেন, বাবুরহাট-মতলব-গৌরিপুর পেন্নাই সড়কের নারায়ণপুর বাজার সংলগ্ন বোয়ালজুরি খালের ওপর নির্মিত সরু ব্রীজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনসহ স্থানীয় লোকজন। এই ব্রীজটির ওপর গাড়ি উঠলেই কেঁপে উঠে। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীবাহী যানবাহনসহ চলছে ভারী পণ্যবাহী যান। ব্যস্ততম এ সড়কের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে যানবাহন বেশি চলাচল করায় এবং খাল দিয়ে অবৈধ নৌযান চলাচলের কারণে ব্রীজের পিলারের নিচের মাটি সরে এবং ছাদের ঢালাই খসে পড়ে ব্রীজটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ে যে কোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ এ ব্রীজটি প্রশস্ত করে দ্রুত নতুন ব্রীজ নির্মাণের দাবি যাত্রী সাধারণসহ যানবাহন চালকদের।
জানা যায়, প্রায় ৩৫-৪০ বছর আগে মতলব-গৌরিপুর পেন্নাই সড়কের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর বাজার সংলগ্ন প্রসিদ্ধ বোয়ালজুরি খালের ওপর নির্মিত হয় এই ব্রীজটি। নির্মাণের পর থেকে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রতিদিন চাঁদপুর জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে এই ব্রীজের উপর দিয়ে। ব্যস্ততম এ সড়কে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে যানবাহন বেশি চলাচল করায় ব্রীজের পিলারের নিচের মাটি সরে এবং ছাদের ঢালাই খসে পড়ে ব্রীজটি চলাচলের জন্য এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে ব্রীজের উপর গাড়ি উঠলেই কেঁপে উঠে ব্রীজটি। এছাড়াও ব্রীজটি সরু হওয়ায় দুদিক থেকে আসা যানবাহন ও পথচারীদের পারাপারের সময় যানজট লেগে থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় প্রতিনিয়ত। ব্রীজটির এক প্রান্ত দিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশা প্রবেশ করলে বিপরীত প্রান্ত থেকে কোনো প্রাইভেটকার, যাত্রীবাহী বাস বা পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পারে না। ফলে যানজট লেগেই থাকে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না করে ব্রীজটি নির্মাণের ফলে এখন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যানবাহনের চালক ও যাত্রী সাধারণরা।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শামছুদ্দোহা বলেন, নারায়ণপুর বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি বাইপাস সড়ক হবে। সে অনুযায়ী নতুন ব্রীজ নির্মিত হবে। আমরা ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) এবং সার্ভে করেছি। ডিপিপিও রেডি করে ফেলেছি। ডিজাইনও হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যেই এই প্রকল্প শুরু করতে পারবো। যাত্রী সাধারণসহ গাড়ি চালকদের দাবি, জনগুরুত্বপূর্ণ এ ব্রীজটি দ্রুত প্রশস্ত করে নতুন ব্রীজ নির্মাণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্যে আশাবাদ লক্ষ্য করেছি। যদি আগামী এক মাসের মধ্যে বাইপাস সড়ক ও বিকল্প সেতু নির্মাণের কাজ শুরুই হয়ে যায়, তাহলে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা যাবে। অন্যথায় ব্রীজটি ভেঙ্গে গিয়ে যদি মরণ ফাঁদ রূপেই শেষমেষ আবির্ভূত হয় এবং তাতে কারো অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়, তাহলে তার দায় কাঁধে নেবে কে সেটা ভেবে দেখার বিষয়।