সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

চলে গেলেন আরো একজন মুক্তিযোদ্ধা
অনলাইন ডেস্ক

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের বর্তমান বয়স কমপক্ষে ৬৫ থেকে সর্বোচ্চ নব্বুই ঊর্ধ্ব। সে কারণে বর্তমানে একের পর এক তাঁদের কারো না কারো স্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে। এঁদের মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হচ্ছে, তা কোনোদিন কক্ষণোই পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ, বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড পাওয়ার জন্যে যুদ্ধতো সেই একাত্তরেই হয়েছে, ভবিষ্যতে আর হবার সম্ভাবনা নেই। এই সম্ভাবনা নেই বলেই কারো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের এবং মুক্তিযোদ্ধা হবার সুযোগ নেই। সেজন্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে বর্তমান প্রজন্মর উদ্দেশ্যে আত্মশ্লাঘার সাথে বলেন, তোমরা ভবিষ্যতে অনেক কিছুই হতে পারবে, সর্বোচ্চ নিজ দেশের রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে, এমনকি তারচে’ বেশি কিছু, তবে কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবে না। আর এই হতে না পারার কারণেই যতোই মুক্তিযোদ্ধা মারা যাবেন, ততোই কমবে তাঁদের সংখ্যা। অনাগত ভবিষ্যতে এক পর্যায়ে জীবিত স্বল্পসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাবেন চিড়িয়াখানার প্রাণীর মতো। সর্বশেষ যে মুক্তিযোদ্ধা মারা যাবেন, তখন দেশ হয়ে যাবে মুক্তিযোদ্ধাশূন্য। তারপর কারো মুক্তিযোদ্ধা দেখার ইচ্ছে হলে মৃত মুক্তিযোদ্ধার ছবির শরণাপন্ন হতে হবে কিংবা মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর বা অন্য কোনো জাদুঘরে যেতে হবে।

এখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে শত শত মুক্তিযোদ্ধা জীবিত আছেন, কিন্ত আগামী ৫-১০ বছর পর এঁদের সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, সেটা ভাবলেই গা শিউরে উঠে।

সারাদেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে। আমাদের পর্যবেক্ষণে চাঁদপুর জেলায় এমন সপ্তাহ খুব কম খুঁজে পাওয়া যাবে, যে সপ্তাহে কোনো মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়নি। গত ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটি উদযাপন নিয়ে যখন সবাই ব্যস্ত, তখনই খবর পাওয়া গেলো, হাজীগঞ্জের প্রবীণ রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হারুন অর রশীদ মুন্সী দুপুর পৌনে একটায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ওইদিন রাত ১০ টায় হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজার পূর্বে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান হিসেবে গার্ড অব অনার প্রদর্শন করা হয় এবং তাঁর স্মৃতিচারণ করা হয়। স্মৃতিচারণে অংশ নেন হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী মাঈনুদ্দিন, হাজীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ স ম মাহবুব আলম লিপন সহ জাতীয় পার্টির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

হারুন অর রশীদ মুন্সী পেশাগতভাবে একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী ছিলেন। সাথে সাথে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলায় এই পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদে পর্যায়ক্রমে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং জেলা পর্যায়ের দায়িত্বেও ছিলেন। তিনি বিশ্বখ্যাত সংগঠন রোটারী ইন্টারন্যাশনালের অন্তর্ভুক্ত হাজীগঞ্জ রোটারী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য (চার্টার মেম্বার) ও সভাপতি এবং পরবর্তীতে রোটারী ডিস্ট্রিক্টের অ্যাসিস্টেন্ট গভর্নরের দায়িত্ব পালন করে নিজেকে সেবার আদর্শে উৎসর্গীকৃত একজন সক্রিয় রোটারিয়ান হিসেবে পরিচিত করে তোলেন। এছাড়া বহুবিধ সামাজিক কাজেও ছিলো তাঁর সংশ্লিষ্টতা। সেজন্যে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের পাশাপাশি সমাজসেবক হিসেবেও তাঁর কম-বেশি পরিচিতি ছিলো। সবচে’ বড় পরিচয় ছিলো, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনচেতা ও প্রতিবাদী মানুষ। প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি দাঙ্গা বাধিয়েছেন বা শৃঙ্খলাহানি করেছেন এমনটি কিন্তু নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিবাদে ফল না পেলেও আপসকামিতায় নিজেকে সঁপে না দিয়ে অন্যায়কারীর প্রতি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ঘৃণা প্রদর্শন করেছেন সাহসিকতার সাথে। এমনটিই ছিলো তাঁর চরিত্রের লক্ষণীয় দিক। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশীদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি, তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়