প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের এতো উপকরণ একটি গ্রামীণ বাজারে !
বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর বিবেচনায় ২০০২ সালে সংশোধিত মৎস্য সংরক্ষণ আইনে কারেন্ট জাল উৎপাদন, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মাঝে মাঝে, কোথাও কোথাও কালেভদ্রে কারেন্ট জালবিরোধী অভিযান চালানো হয় ঠিকই, কিন্তু জেলেদের অধিকাংশই ‘নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি লোভ’ হিসেবে কারেন্ট জাল ব্যবহারে বিরত হচ্ছে না। আইনের ফাঁক ফোকরে এই জাল কিনতে গিয়ে জেলেরা বাধাগ্রস্ত তেমন হয় না, তবে জাল ব্যবহার করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়। সে বাধা প্রদানে সরকারের মৎস্য বিভাগের এখতিয়ার থাকলেও জনবল ও প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব প্রকট। সেজন্যে ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার’রূপী মৎস্য বিভাগকে জেলেরা তেমন ভয় পায় না বললেই চলে। মৎস্য বিভাগের বক্তব্য হচ্ছে, আমাদের লোকজন জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে জলাশয়ে মাছ ধরার সময় কেবল অভিযান চালাতে পারে, তবে দোকানে কারেন্ট জাল বিক্রি হলেও সেখানে অভিযান চালানোর আইনগত এখতিয়ার তাদের নেই।
|আরো খবর
এমন বাস্তবতায় দেশের উপকূল রক্ষক হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জলে ও স্থলে অবৈধ কারেন্ট জালবিরোধী অভিযান চালায়। এমন একটি অভিযানই ঢাকা জোনের আওতাধীন কোস্টগার্ড স্টেশন চাঁদপুর গত ৪ আগস্ট বুধবার দুপুরে পরিচালনা করে মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ লঞ্চঘাট সংলগ্ন বাজারে। এ অভিযানে কোস্টগার্ড স্মরণকালের মধ্যে অনেক বড় সাফল্য অর্জন করে। তারা ছোট্ট এই গ্রামীণ বাজারের ৩টি দোকান ও ২টি গোডাউন থেকে আনুমানিক ৩৫ লাখ মিটার নতুন কারেন্ট জাল ও ৪৫০টি চাঁই জব্দ করে। এর মধ্যে কারেন্ট জালের মূল্য ১২কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং চাঁইগুলোর মূল্য ১৫ লাখ ৭৫হাজার টাকা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশন কমান্ডার লেঃ এম সাদিক হোসেনের নেতৃত্বে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। অভিযান শেষে জব্দকৃত জাল ও চাঁইগুলো আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা হাবিব শাপলা ও চাঁদপুর সদর উপজেলা মৎস্য বিভাগের সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব রশীদ উপস্থিত ছিলেন।
আমিরাবাদ লঞ্চঘাট সংলগ্ন ছোট বাজারে কোস্টগার্ডের এই অভিযানে প্রমাণিত হলো, নদীর তীরবর্তী গ্রামীণ বাজার বড় হোক না ছোট হোক সেখানে কারেন্ট জালসহ মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের কতো উপকরণ বিক্রি হয়। ধারণা করা যায়, এগুলো বিক্রির পেছনে সর্ষের মধ্যে ভূতরূপী কারো না কারো প্রশ্রয় রয়েছে। এই প্রশ্রয়দাতারা নিশ্চয়ই অবৈধ কারেন্ট জাল, চাঁই ইত্যাদি বিক্রেতাদের কাছ থেকে মাসোহারা নেয় বা পায়। আমরা এ বিষয়টি গোপনে খতিয়ে দেখার জন্যে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। আশা করি, এ অনুরোধ গ্রহণে গড়িমসি বা কালক্ষেপণ হবে না। যদি হয়, তাহলে সন্দেহের তীর তাদেরকেও যে বিদ্ধ করবে, সেটা সহজেই অনুমেয়।