প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইক চালায় কারা? একেবারে নিম্নবিত্তের মানুষেরা। বলা যায়, প্রায় নব্বই ভাগ চালকই ধনাঢ্য মালিকের কেনা গাড়িই ভাড়ায় নিয়ে চালায়। মালিকের ভাড়ার টাকা উঠিয়ে তারপর যে রোজগার হয়, তা দিয়ে প্রতিটি চালক নিজের ও সংসারের ব্যয় মিটান। আর চালকদের মধ্যে যারা নিজেই রিকশা/অটোরিকশা/অটোবাইকের মালিক, তারা হয় নিজের কষ্টার্জিত সঞ্চয়, জমি বা অন্য সম্পদ বিক্রির টাকা, ব্যাংক/এনজিও/সমিতি থেকে ঋণ নেয়া টাকায় সেগুলো কিনেন। নিজের টাকায় কেনা গাড়ি হলে চালকরা মানসিক চাপমুক্ত থাকেন, তবে এমন গাড়ি নিজের জীবিকা অবলম্বনের একমাত্র উপায় হলে কম-বেশি মানসিক চাপ অনুভব না করে পারেন না। আর যারা ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনেন, তারা গাড়ি চালান তো আর ঋণের কিস্তির কথা যতোটা ভাবেন, নিজের সংসার নিয়েও মনে হয় এতোটা ভাবেন না। উপর্যুপরি পথিমধ্যে দুর্ঘটনা দুর্বিপাকতো আছেই। নিজের মালিকানাধীন গাড়ির নিরাপত্তা নিয়েও ভাবতে হয় প্রতিটি মালিককে। যারা ২৪ ঘণ্টা পাহারাদার সম্বলিত গ্যারেজে গাড়ি রাখেন, তারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আর যারা পাহারাবিহীন কোনো স্থানে নিতান্তই তালার ওপর নির্ভরশীল হয়ে গাড়ি রাখেন, তারা অনিশ্চয়তার মাঝে ঠুনকো নিরাপত্তার প্রত্যাশা করেন। যার ফলে চুরির ঘটনাটা নিশ্চিতভাবে ঘটেই। যেমনটি ঘটছে চাঁদপুর পৌর এলাকার মঠখোলা ও বাবুরহাট এলাকায় কিছুদিন পরপরই।
‘চার মাস না যেতেই আবারো মঠখোলায় অটোবাইক চুরি’। এটি গত বৃহস্পতিবার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম। এ সংবাদের গভীরে পাঠক প্রবেশ করলেই মনে কষ্ট পান, ব্যথাহত হন। সংবাদটিতে সংবাদদাতা লিখেছেন, চাঁদপুর সদর পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ডে মঠখোলাতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাতে জনু গাজী মাদ্রাসা এবং আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সড়কে আবারো অটোবাইক চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরি হওয়া অটোবাইকের মালিক মোঃ মাসুদ বেপারী বলেন, আমি এই জায়গায় তিন বছর যাবৎ গাড়িটি রাখি। প্রতিদিনের মতো আমি গাড়িটি চালানোর জন্যে দোকানের কাছে এসে দেখি, আমার গাড়ি রাখার দোকানটির তালা খোলা। এই বলে মাথায় হাত দিয়ে রাস্তার মধ্যে কান্না শুরু করেন এবং মাটিতে শুয়ে এদিক ওদিক গড়াগড়ি দেন আর বলেন, কেমনে আমার সংসার চলবে, আমারে শেষ করে দিছে। আমি গরিব মানুষ, চোর কেমনে আমার অটোবাইক চুরি করলো! এই বলে তাকে অনেক কান্না করতে দেখা যায়। এর আগে এই এলাকাতেই চারটি অটোবাইক চুরে হয়েছে। গত বছরের ৩০ অক্টোবর দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে চুরি হওয়ার সংবাদটি প্রকাশিত হয়। মঠখোলা এলাকার সাধারণ মানুষ বলেন, আমরা খুব আতঙ্কে আছি, আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমরা কোনো জায়গায় গাড়ি বা গরু নিরাপদে রাখতে পারি না। তারা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি মঠখোলার অদূরে বাবুরহাট বাজার থেকে চুরি হয়েছে ৬টি অটোবাইক। বাজারে রাত্রিকালীন পাহারায় সুষ্ঠুতা না থাকায় চোর অটোবাইকগুলো বের করে একে একে চালিয়ে চলে গেলো, অথচ কেউ টের পেলো না! বাবুরহাটের মতো জেলার অন্যতম প্রসিদ্ধ বাজারের এমন করুণ দশায় সচেতন মানুষজন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার বর্তমান ওসির বিচক্ষণতায় তার অধীন পুলিশ কর্মকর্তাগণ সড়কের আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রকে চিহ্নিত করা এবং ক'জনকে লুণ্ঠিত মালামাল ও অস্ত্রসহ আটক করার যে সাফল্য দেখিয়েছেন, তাতে অটোবাইক/ অটোরিকশা/ রিকশা চুরির সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করার প্রত্যাশা করাটা কি খুব বেশি হবে? মোটেও বেশি হবে না। এমন চোর ধরার প্রয়াসের পাশাপাশি এমন চুরিরোধের উপায় সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান ও সতর্কতা জারির বিষয়ে মডেল থানা কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ভাবা উচিত বলে আমরা মনে করি। বাবুরহাট বাজার সহ যেসব বড়ো বা প্রসিদ্ধ বাজারে নৈশকালীন পাহারা নেই কিংবা পাহারায় সুষ্ঠুতা নেই, সেখানে হস্তক্ষেপ করার জন্যে আমরা শুধু চাঁদপুর সদর মডেল থানা নয়, অন্য সকল থানা কর্তৃপক্ষকেও অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মহোদয়কেও গুরুত্বারোপ করে নির্দেশ জারির সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।