প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ফরিদগঞ্জের গণমাধ্যমকর্মীরা সাংবাদিকতায় জনকল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে যে চলছেন, সেটি ফরিদগঞ্জের পূর্বাঞ্চলে সেচখালে দেড়মাস পর পানি আসার মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হলো। এখন কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি, আর বোরো আবাদে বেড়েছে ব্যস্ততা। এ ব্যাপারে ফলোআপ সংবাদে চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন বিস্তারিত। সংবাদটির সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে : পানি উন্নয়ন বোর্ড গেল জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের সেচ খালে পানি দিবে, সেজন্যে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে মাঠ প্রস্তুত করেছেন ফরিদগঞ্জের পূর্বাঞ্চলের কৃষকরা। সেচপাম্প চালকও খালপাড়ে পানির পাম্প প্রস্তুতের সাথে সাথে ড্রেন সংস্কার করেছেন। কিন্তু সেই খালে পানি আসছিলো না। কৃষকরা পানির অভাবে যখন এ বছর বোরো আবাদ করতে পারবো না বলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলো, তখন ফরিদগঞ্জের সাংবাদিকবৃন্দ কৃষকদের আশার আলো দেখান। তাদের লেখনির কারণে কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে হলেও খালে পানি আসায় কৃষকরা ক্ষেতে পানি দিয়ে ধানের চারা রোপণ করতে সমর্থ হয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠসহ বেশ ক’টি সংবাদপত্র গুরুত্ব সহকারে সংবাদ প্রকাশ করলে টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান নিজে খালের মধ্যে থাকা বাঁধ অপসারণে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খননের জন্যে জনপ্রতিনিধিদের উদ্বুদ্ধ করে খাল খনন উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি অধিদপ্তর দিনরাত পরিশ্রম করে খালের নাব্যতা কিছুটা ফিরিয়ে আনার সাথে সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ড পানি সরবরাহ বাড়ালে সঙ্কট মোচনে আশার আলো দেখতে পায় কৃষকরা। গত ক'দিনে খালে সেচ উপযোগী পানি সরবরাহ হলে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা বোরো আবাদের আওতায় আসে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, চাঁদপুর কণ্ঠসহ কয়েকটি পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশের পর আমার এবং ইউএনওর উদ্যোগে কৃষি বিভাগের সকল কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিএডিসি এবং সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জরুরি সভা করেছি। সেই সভাতে আমি স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খননের প্রস্তাব দেই। ক’জন জনপ্রতিনিধি তা গ্রহণ করে কাজ শুরু করায় কৃষকদের মুখে হাসি ফিরে এসেছে। আশা করছি আগামীতে যেন এমনটি না হয় সেজন্যে ৪০ দিনের কর্মসূচিসহ আনুষঙ্গিক কর্মসূচির মাধ্যমে ভরাট হয়ে যাওয়া খাল খনন করলে খালের ন্যবতা ফিরে আসবে এবং পানি সরবরাহও নিশ্চিত হবে।
উল্লেখ্য, ষাটের দশকে চাঁদপুর জেলার তিনটি ও পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার তিনটি উপজেলা নিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প চাঁদপুর সেচপ্রকল্প (সিআইপি) তৈরি হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বছরে একাধিক ফসল উৎপাদন। কিন্তু গত অর্ধশত বছর পরে এসে সেই উদ্দেশ্য বিভিন্ন কারণে ব্যাহত হচ্ছে। সর্বশেষ কারণ হিসেবে দেখা দেয় খালে পানিশূন্যতা। পানির অভাবে হাহাকার দেখা গেছে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের আদশা, খাজুরিয়া, মান্দারতলী, হুগলি, সাইসাঙ্গা এবং পার্শ্ববর্তী রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুরা গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষকদের মাঝে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে খালে পানি সরবরাহ না করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। কৃষকরা জানান, এই এলাকাগুলো কিছুটা উঁচু হওয়ার কারণে পানি সরবরাহে সমস্যা হয়। তাই খাল খনন করাও জরুরি, যাতে আমরা সারা বছর নিরবচ্ছিন্ন পানি পেতে পারি। প্রতি বছর জানুয়ারির শুরুতে পানি আসলেও এ বছর তার ব্যতিক্রম ছিল।
ফরিদগঞ্জের পূর্বাঞ্চলে সেচ খালে পানি সঙ্কট সমস্যার সমাধানে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী তথা সাংবাদিকদের সক্রিয় ভূমিকার কথা সাধারণ কৃষককুল ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সহ অন্যরা যতোটা অকপটে বললেন, তাতে সাংবাদিকরা অবশ্যই উজ্জীবিত বোধ করছেন। এর ফলস্বরূপ তারা কল্যাণব্রতী হবার প্রয়াস চালাতে উপজেলার অন্য সমস্যাগুলোও তুলে ধরবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। বলা দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে ফরিদগঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপোষ ভূমিকায় আরো কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে, যেটাকে সংবাদণ্ডসাফল্য বলেই সুধীজনরা বিবেচনা করেছেন এবং প্রশংসাব্যঞ্জক অভিব্যক্তিতে মূল্যায়ন করেছেন। আমরা ফরিদগঞ্জে সাংবাদিকতার সুষ্ঠু বিকাশে এ বিষয়টিকে খুবই ইতিবাচক বলে মনে করছি।