প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ভৌগোলিক অবস্থানে ও সড়ক মানচিত্রে চাঁদপুর জেলার অবস্থান রাজধানী ঢাকার বেশি দূরে নয়। কিন্তু সুদূর অতীত থেকে সড়ক যোগে ঢাকা ও চাঁদপুরের মধ্যে ছোট-বড় যানবাহনের মাধ্যমে যাতায়াতে ভায়া কুমিল্লা আবশ্যক ছিলো। এই ঘুরপথে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি ব্যয় হয়। নব্বইর দশক থেকে এই ঘুরপথ এড়ানোর জন্যে কালিয়াপাড়া-কচুয়া-গৌরিপুর সড়কটির ব্যবহার শুরু করে ছোট ছোট যানবাহন, যদিও বর্তমানে এই রূটটির পরিবর্তিত সংক্ষিপ্ত রূপ হয়ে গেছে হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরিপুর, যে রূট দিয়ে বর্তমানে ছোট-বড় সব ধরনের গাড়িই চলছে। কিন্তু এটিও কিছুটা ঘুরপথ বলে নূতন শতাব্দীর শুরু থেকে বাবুরহাট-মতলব-নারায়ণপুর এবং বাবুরহাট-মতলব-দাউদকান্দি রূটকে ছোট ও মাঝারি আকারের যানবাহন চালকরা আরো সংক্ষিপ্ত রূট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই সব ক’টি সংক্ষিপ্ত রূটই চাঁদপুর জেলা শুধু নয়, পাশর্^বর্তী লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ভোলা জেলার লোকজনের কাছে রাজধানীতে সংক্ষিপ্ত সময়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতায় অনেক এগিয়ে যায়। দিনের বেলা ও সন্ধ্যা-রাতে এসব রূট নিরাপদ থাকলেও শুরু হতে অদ্যাবধি মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত নিরাপদ নয়। সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের মোক্ষম টার্গেট হয়ে আছে এই রূটগুলো। তাদের ডাকাতির ক্ষেত্রে এসব রূটে প্রথম পছন্দ হচ্ছে প্রবাসফেরত যাত্রীদের গাড়ি। এসব রূটে প্রবাসীবহুল উপরিউক্ত জেলাগুলোর প্রবাসীরা দেশে ফিরে মাইক্রোবাস/ প্রাইভেট কারযোগে বাড়িতে পৌঁছাটাকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ মনে করে এবং ড্রাইভাররাও প্রলুব্ধ করে। আর এটাকেই ডাকাতরা মাথায় নিয়ে একের পর এক ডাকাতি করে সাফল্য খুঁজে পাচ্ছে। কিন্তু দাউদকান্দি থানার পুলিশ এই ডাকাত চক্রকে দমন করার আইওয়াশরূপী টহল চালালেও সফলতা খুঁজে পায়নি। তবে এই ডাকাতরা চাঁদপুর সদর উপজেলা এলাকায় বেশি সাহস দেখিয়ে ডাকাতি করতে এসেই এক মামলার প্রেক্ষিতে অবশেষে চিহ্নিত হলো এবং এদের ক'জন ধরা পড়লো।
চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশের এ সাফল্য নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে শনিবার প্রকাশিত সংবাদ শিরোনাম হয়েছে এমন--‘বিদেশ ফেরত যাত্রীদের গাড়িতে ডাকাতি ॥ বিপুল অস্ত্র ও মালামালসহ ৪ ডাকাত গ্রেফতার’। এতে প্রতিবেদক মিজানুর রহমান লিখেছেন, চাঁদপুরের বিভিন্ন সড়কে ডাকাতি করে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব কেড়ে নেয় একদল ডাকাত চক্র। এমনই একটি ডাকাতির ঘটনায় বিপুল অস্ত্র ও লুণ্ঠিত মালামালসহ ৪ ডাকাতকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। একটি ডাকাতি মামলার সূত্র ধরে চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ভোরে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও ডাকাতি হওয়া মালামাল সহ চার ডাকাতকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। দাউদকান্দি এলাকা থেকে ডাকাতদের ব্যবহৃত একটি নম্বরবিহীন পিকআপ গাড়িও জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা চিহ্নিত ডাকাত শাহপরান, আমির হামজা, জাহাঙ্গীর, শুভকে আটক করে। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং মতলব হয়ে ঢাকা থেকে আসা-যাওয়ার পথে দাউদকান্দি এলাকায় ডাকাতি সংঘটিত করে আসছে। গৌরিপুর-কচুয়া সড়কেও একই কায়দায় ডাকাতি করে বিদেশ ফেরত অনেক যাত্রীর ভিসা, পাসপোর্ট, বিমান টিকেটসহ সবকিছু নিয়ে যাওয়ায় কচুয়া থানায় ক্ষতিগ্রস্তরা জিডি করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি রাতে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের মহামায়া এলাকায় একটি প্রাইভেট গাড়ি গতিরোধ করে মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। এ ঘটনায় হাজীগঞ্জ উপজেলার পূর্বহাটিলা গ্রামের মাহবুব আলমের স্ত্রী নূরজাহান বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহজাহান অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন এলাকার সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত গাড়িটি শনাক্ত করেন এবং পরবর্তীতে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারের সূত্র ধরে মহাসড়কে ডাকাতদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাদের গতিবিধি চিহ্নিত করে অভিযান চালান। চাঁদপুর মডেল থানা ওসি মুহম্মদ আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহজাহান দাউদকান্দি পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তাদেরকে ধরতে সক্ষম হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মহাসড়কে দীর্ঘদিন যাবৎ তারা ডাকাতি করে আসছে, তাদের ব্যবহৃত গাড়ির কোনো নম্বর ছিলো না। রাতের বেলায় বিভিন্ন জায়গায় সংঘবদ্ধ চক্রটি অভিযান চালিয়ে এই ডাকাতির কাজ সংঘটিত করছে। এদের সাথে বাকি যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এটা অকপটে বলতে দ্বিধা নেই যে, চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের বর্তমান অফিসার ইনচার্জ মুহম্মদ আব্দুর রশিদ ও তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানের মাধ্যমে প্রাগুক্ত ডাকাত দলকে চিহ্নিত করা, অস্ত্র ও মালামাল উদ্ধার করার ঘটনা স্মরণকালে অনেক বড় সাফল্য। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর ও রাজধানীর মধ্যে যাতায়াতে বিদ্যমান সংক্ষিপ্ত রূটগুলো নিরাপদ হয়ে যাবে নিশ্চয়--এটা আশা করা যায়। এই সড়ক-রূটগুলোকে কীভাবে টেকসই নিরাপত্তার বলয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা যাবে বলেও আমরা বিশ্বাস রাখি।