প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশের মৎস্য আইন অনুযায়ী এক সময় ৯ ইঞ্চি বা ২৩ সেন্টিমিটারের নিচে ইলিশের বাচ্চাকে জাটকা বলা হতো। বর্তমানে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের নিচে ইলিশের বাচ্চাকে জাটকা হিসেবে অভিহিত করে বছরের ৭ মাস নদীতে এই জাটকা ধরায় সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ নিষেধাজ্ঞার সময়টা ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই জাটকা যারা ধরবে, তারা অর্থাৎ জেলেরাই শুধু দণ্ডিত হবে না, এর বিপণনের সাথে জড়িত আড়তদার ও ব্যবসায়ীরাও দণ্ডিত হবে। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে? অসাধু জেলেরাই দণ্ডিত হয়, আর অন্যরা থাকে সচরাচর ধরাছোঁয়ার বাইরে।
কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ও মৎস্য বিভাগ যৌথ অভিযান চালিয়ে প্রায়শই জলভাগ তথা নদী/ নৌযান থেকে জাটকার ছোট-বড় চালান আটক করে। তবে স্থলভাগ (যেমন--হাটবাজার, স্থলযান) থেকে সাধারণত তেমন চালান আটক করতে পারে না। আর করলেও সেটা বড় চালান হয় না। অবশেষে বড় চালানই আটক হয়েছে স্থলভাগে। এ বিষয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ‘কোস্টগার্ডের অভিযানে চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনে ১৩শ’ কেজি জাটকা জব্দ’।
সংবাদ বিবরণী হচ্ছে এমন--পাচার করার সময় চাঁদপুর শহরের কোর্ট স্টেশনে সাগরিকা ট্রেনের বগি তল্লাশি করে ১ হাজার ৩শ’ কেজি জাটকা জব্দ করেছে কোস্টগার্ড। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে কোস্ট গার্ড ও উপজেলা মৎস্য অফিস কর্তৃক চাঁদপুর কোর্ট স্টেশন এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে চট্টগ্রামগামী ট্রেনের মালবাহী একটি বগিতে তল্লাশি চালিয়ে ১৩শ’ কেজি (৩২.৫ মণ) জাটকা জব্দ করা হয়। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জব্দকৃত জাটকা স্থানীয় এতিমখানা ও অসহায় মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
জাটকার এতো বড় চালান আটক হলেও পাচারকারীরা রয়ে গেলো ধরাছোঁয়ার বাইরেই। এ ট্রেনটি প্রাইভেট সেক্টরে পরিচালিত হয় বলে বুকিংকারী অর্থাৎ পাচারকারীর প্রামাণ্য কাগজ তথা রসিদ বা মেমোর ডুপ্লিকেট না থাকায় তাদের ধরা যায়নি বা চিহ্নিত করা যায়নি। তবে অবৈধ বা নিষিদ্ধ মাল পরিবহনের জন্যে ট্রেন পরিচালনাকারী বেসরকারি সংস্থা/ কোম্পানির বিরুদ্ধে রেল কর্তৃপক্ষ বরাবরে অভিযোগ করা যেতে পারে। এমনটি করা না হলে জাটকা পাচারকারীরা সাগরিকা ট্রেনকে নির্ভরযোগ্য অবলম্বন যে করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা নদী ও বিভিন্ন নৌযানে কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ও মৎস্য বিভাগের নজরদারি ও অভিযানের পাশাপাশি স্থলভাগেও অনুরূপটি প্রত্যাশা করছি। কেননা স্থলভাগই হচ্ছে জাটকা বিপণনের মোক্ষম স্থান। সেজন্যে সড়কে চলাচলকারী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান সহ ছোট-বড় অন্যান্য যানবাহন এবং ট্রেনে তল্লাশির পাশাপাশি বাজার ও জাটকা বিপণনের সম্ভাব্য সকল স্থানে অভিযানকারীদের তল্লাশি জোরদারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমরা মনে করি।