সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুরের স্বার্থে নৌপুলিশের এমন তৎপরতাই চাই
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর-ঢাকা রূটে এক সময় কাঠ বডির লঞ্চই ছিলো যাত্রীদের যাতায়াতের অন্যতম অবলম্বন। এ লঞ্চগুলো ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগিয়ে যাতায়াত করতো। ব্যতিক্রম ছিলো হেনা এক্সপ্রেস। তারচে’ কম সময় ৪ ঘণ্টায় যাতায়াতের জন্যে স্টিল বডির বেঙ্গল ওয়াটারের জনপ্রিয়তা ছিলো অনেক। তারচে’ কম সময়ে (তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায়) ও খুবই কম ভাড়ায় ঢাকা ও চাঁদপুরের মধ্যে বিপুল সংখ্যক যাত্রীর যাতায়াতে ঢাকা-খুলনা স্টিমার সার্ভিসের ওপর নির্ভরতা ছিলো ব্যাপক। সেজন্যে স্টিমার থাকতো ভিড়াক্রান্ত, যাতে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকতো পকেটমার, চোর-ছিনতাইকারী। এরা প্রতিদিন রাতে স্টিমার চাঁদপুরে ভিড়ার আগে নামার জন্যে অপেক্ষমান যাত্রীদের ব্রিফকেস, স্যুটকেস সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ নিয়ে মেঘনা/ ডাকাতিয়ায় লাফিয়ে পড়তো। আর তাদেরকে উদ্ধারের জন্যে পূর্ব থেকে অপেক্ষমান নৌকায় উঠে তারা চম্পট দিতো। কর্মরত পুলিশ-আনসার সহ অন্য যাত্রীরা অসহায় দৃষ্টিতে এমন দৃশ্য অবলোকন করতে হতো। স্টিমারের পাশাপাশি লঞ্চ থেকে যাত্রীদের মালামাল নিয়ে লাফিয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটতে থাকে। প্রায় প্রতিদিনকার এমন ঘটনায় সারাদেশে চাঁদপুরের বদনাম ছড়িয়ে পড়ে। আর চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রূটের ছোট ছোট লঞ্চসহ ঢাকা-চাঁদপুর রূটের লঞ্চগুলোতে নৌডাকাতদের হানা ছিলো ভয়ঙ্কর। একই সাথে চাঁদপুরের নদী অঞ্চলে চোরাকারবারিদের ছিলো রামরাজত্ব। পুরাণবাজার, চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনাল ও মোহনপুরে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িসহ নদী তীরবর্তী থানা ও অন্যান্য ফাঁড়িকে ওপেন সিক্রেট পদ্ধতিতে ম্যানেজ করে চোরাকারবারিরা দিনে-রাতে তাদের অপকর্ম বজায় রেখে চাঁদপুরের রাজনৈতিক-সামাজিক অঙ্গনসহ সকল অঙ্গনে চলাচল করতো দাপটের সাথে।

চাঁদপুরে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের কার্যক্রম চালু হবার পর এবং ঢাকা-চাঁদপুর রূটসহ বিভিন্ন নৌরূটে নিজস্ব নিরাপত্তা বলয়ে স্টিল বডির বিলাসবহুল উন্নতমানের লঞ্চ চলাচল শুরু হবার পর চাঁদপুরের সাথে বিভিন্ন রূটে চলাচলকারী নৌযানে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই আশানুরূপ কমেছে। আর নদীতে চোরাকারবারি কমেছে অনেক এবং সমাজে চিহ্নিত চোরাকারবারিদের দাপট কমেছে বহুলাংশে। চোরাকারবারিদের অনেকে তাদের পেশা পরিবর্তন করে ভদ্র সমাজে নানাভাবে মিশে গেছে। এতে চাঁদপুরের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং চাঁদপুরের প্রতি বিভিন্ন এলাকার মানুষের আস্থা বেড়েছে। বিগত শতাব্দীতে ছড়িয়ে পড়া চাঁদপুরের গ্লানি নূতন শতাব্দীতে মুছে যেতে থাকে।

কিন্তু হায়! সেই গ্লানির রেশ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে মরু হাজী নামে চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডের এক বাসিন্দার নেতৃত্বে একদল চোরাকারবারি যে ধরে রেখেছে এবং তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে সেটা বলা যায় ৯৫ শতাংশ চাঁদপুরবাসীর ছিলো অজানা। চাঁদপুরে আকিজ গ্রুপের ৪ কোটি টাকা চিনি পাচারের ঘটনা ফাঁস ও এ সংক্রান্ত মামলায় অবশেষে চোরাকারবারি মরু হাজী গ্রেফতার হওয়ায় সেটা আবার ব্যাপকভাবে জানাজানি হলো। আবার একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ম্লানিমায় চাঁদপুরের সুনাম হলো বিপন্ন। তবে আশার কথা, নৌপুলিশের দৃঢ়তায় সে সুনাম পুনরুদ্ধার হবার পথে।

চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, আকিজ গ্রুপের চার কোটি টাকার চিনি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটারেজ জাহাজে নামিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফ্যাক্টরিতে নেয়ার পথে চাঁদপুরের মেঘনায় পাচারের মামলায় চাঁদপুরের চিহ্নিত চোরাকারবারি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে মরু হাজীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে নৌ পুলিশ। চাঁদপুর নৌ থানার ইনচার্জ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে সোমবার চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে মরু হাজীসহ মামলার অপর এক আসামীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। চাঁদপুরের চিহ্নিত চোরাকারবারি মরু হাজী গংয়ের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে অকটেন (তেল) চুরির ঘটনায় মামলা দায়ের করা আছে।

নৌ পুলিশ জানিয়েছে , গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রাম থেকে চিনি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার পথে দেওয়ান মেহেদী টু লাইটারেজ জাহাজ থেকে ৮ হাজার বস্তা চিনি পাচার হয়ে যায়। সেই ঘটনায় জাহাজের মাস্টারসহ ১১ জনকে আটক করার পর চাঁদপুরের চিহ্নিত চোরাকারবারিদের নাম বেরিয়ে আসে। এই ঘটনায় সেই চোরাকারবারিদের ধরার জন্যে পুলিশ তৎপর হয়। তবে অভিযুক্ত চোরাকারবারিরা গা-ঢাকা দিয়েছে। অবশেষে দীর্ঘ বছর নদীর চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত চোরাকারবারি মরু হাজীকে পুলিশ আটক করায় জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে।

এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চাঁদপুরের চিহ্নিত গডফাদার চোরাকারবারি জাহাঙ্গীর আলম গাজী ওরফে মরু হাজী দীর্ঘ বছর যাবত নদীতে লাইটারেজ জাহাজ থেকে বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানির মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিল। সে এই কাজ করে প্রায় শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। নামে-বেনামে শহরে তার বাড়ি ও জায়গা-জমি রয়েছে। সে চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডে তার নিজস্ব পাঁচতলা ভবন বিশিষ্ট আলিশান বাড়িতে বসবাস করে। তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করলে চাঁদপুরে চোরাকারবারি বন্ধ হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

আমরাও সচেতন মহলের সাথে সহমত পোষণ করছি। সাথে সাথে নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের অসাধু কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গোপন যোগসাজশ রক্ষা করে মরু গাজী গং তাদের চোরাকারবারি জোরদার করেছে কিনা সেটা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের ব্যাপক তদন্ত করে দেখা দরকার। পুরাণবাজার ও নূতনবাজার পুলিশ ফাঁড়ি সহ সদর মডেল থানায় কর্মরত কারো আশীর্বাদ বা প্রশ্রয় মরু হাজী গংয়ের প্রতি রয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। আকিজ গ্রুপের চার কোটি টাকার চিনি চোরকারবারি করার মামলায় জড়িত হবার পর মরু হাজী পলায়নপর হয়ে গোপন আস্তানাতেই থাকার কথা ছিলো, অথচ প্রকাশ্য চলাচলরত অবস্থায় চাঁদপুর শহরের অন্যতম জনাকীর্ণ স্থান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সম্মুখ থেকে নৌপুলিশ তাকে গ্রেফতার করায় উক্তরূপ খতিয়ে দেখার প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়েছে। আশা করি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করবে এবং নৌপুলিশ চাঁদপুরের সুনামের স্বার্থে তাদের সর্বাত্মক সক্রিয়তা অব্যাহত রাখবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়