সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

জীবন দিয়ে পারিবারিক দায়িত্ববোধের পরিচয়!
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত শীর্ষ সংবাদ নিয়েই আমরা সাধারণত সম্পাদকীয় নিবন্ধ লিখে থাকি। এ ছাড়া অন্যান্য সংবাদ আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় কিংবা গুরুত্বহীনতার কবলে পড়ে। কিন্তু সেসব সংবাদের মধ্যে ২-১টি মাঝে মধ্যে পাঠকদের মনে দাগ কাটে। এমন একটি সংবাদই গত ২৮ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে, যেটির শিরোনাম হয়েছে ‘পুরাণবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু ॥ মুরগির মাংস দিয়ে আর ভাত খাওয়া হলো না’। এ সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে ওস্তাদের সাথে ইলেকট্রিক কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জিহান মোল্লা সফু (১৬) নামে এক স্কুলছাত্র মারা গেছে। গত শুক্রবার বেলা ১২টার সময় পুরাণবাজার মধুসূদন হাইস্কুল মাঠের দক্ষিণ কোণে টাওয়ার এলাকায় হানিফ দিদারের বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত স্কুলছাত্র জিহান মোল্লা সফু মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে স্থানীয় রাজমিস্ত্রী শাহআলম মোল্লার চার ছেলের মধ্যে ছিলো সবার বড়ো। জিহান পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান জনির সাথে কাজ শিখতো। জনির বাড়িতেই এদিন কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সে গুরুতর আহত হয়। পরে বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সন্তান হারিয়ে বিলাপ করতে করতে জিহানের মা বলেন, আমার বাবা সকালে বাজার থেকে মুরগী কিনে আনছে। যাবার সময় বলছিল, মা আমি কাজের থেকে আইসা মুরগী দিয়া ভাত খামু। বাবা জিহানের আর খাওয়া হইল না। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডিউটি ডাক্তার জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ছেলেটি মারা গেছে। খবর পেয়ে পুরাণবাজার ফাঁড়ি পুলিশ নিহতের বাড়িতে যায় এবং ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবার কোনো অভিযোগ না থাকায় দাফন করার জন্য জিহানের লাশ তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা মোল্লা বাড়িতে নিয়ে যায় স্বজনরা। এদিকে জিহানকে এক নজর দেখার জন্য মধুসূদন স্কুল মাঠের টাওয়ার বাড়িতে শত শত মানুষ জড় হয়। এ সময় স্বজনদের আহাজারির সাথে জিহানের সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জিহান পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতাহেতু পড়ালেখার পাশাপাশি বিদ্যুতের কাজ শিখতে যায়। উদ্দেশ্য, কম-বেশি রোজগার করে পারিবারিক ব্যয় মিটাতে পিতাকে সহযোগিতা করা। অথচ অনেক ছেলে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে চাকুরি না পেয়ে বেকার পড়ে থাকে, হতাশ হয়ে বিপথগামিতায় আক্রান্ত হয়, তবুও কিছু একটা করে পিতাকে সহযোগিতা করে না। এমন বাস্তবতার বিপরীতে জিহান মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরুতেই পিতাকে সহযোগিতার স্বপ্রণোদিত দায়িত্ব নেয়। এ দায়িত্ব নিয়ে সে সামান্য আয় করেই একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার আশায় বাজার থেকে মুরগি কিনে মাকে রান্না করার কথা বলে কাজে চলে যায়। মা ঠিকই রান্না করছিল, আর তার প্রাণাধিক ছেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চলে গেলো পরপারে। ঘটনাটির মর্মান্তিকতায় কার না হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আমরা জিহানের এ অকাল মৃত্যুতে অবশ্যই কষ্ট অনুভব করছি, সাথে সাথে এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার পারিবারিক দায়িত্ববোধের পরিচয় ফুটে উঠেছে বলে মনে করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়