শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

পদবীতে মেডিকেল অফিসার, তাই ‘অভিজ্ঞ ডাক্তার’!
অনলাইন ডেস্ক

আমাদের দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর প্রধান হিসেবে এবং বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগপ্রাপ্ত হন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সাব অ্যাসিস্টেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, সংক্ষেপে সাকমো বা স্যাকমো)। এরা গ্রামীণ পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসকের মতোই ডাক্তার (ডাঃ) লিখা শুরু করেন কিংবা রোগীরাই ডাক্তার ডেকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলেন। ভাবখানা এমন, সরকারি চাকুরি করে লম্বা পদবীর শেষে যখন মেডিকেল অফিসার আছে, অতএব ডাক্তার বলতে, লিখতে কিংবা অভিহিত হতে সমস্যা কোথায়।

এমন ভাব-গরিমার শিকার হয়ে ডাক্তার পরিচয়ে স্যাকমোদের অধিকাংশ গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন ফার্মেসিতে বসে অবৈধভাবে ফি নিয়ে চুটিয়ে/দেদার প্র্যাকটিস করে এতেটা আয় করছেন যে, এমবিবিএস পাস করে ও চিকিৎসা বিষয়ে আরো বড় ডিগ্রি নিয়ে ডাক্তার হিসেবে বিএমডিসিতে নিবন্ধনকৃত হয়েও প্র্যাকটিসের মাধ্যমে কিছু চিকিৎসক ততোটা আয় করতে পারে না। স্যাকমোদের কেউ কেউ অবৈধ উপার্জনে বাড়ি/গাড়ি, হাসপাতালের মালিক হয়ে স্বীকৃত ডাক্তারদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেন। এদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও তাদের কর্তৃপক্ষ তথা ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিকে তারা ম্যানেজ করে তাদের সুবিধাজনক স্টেশনে থেকে যায়। আমাদের চারপাশে, এমনকি অতি নিকটেই রয়েছে দৃশ্যমান নজির। এমন বাস্তবতাতেই এক স্যাকমোর অনিয়ম সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশনের পর দেখা গেছে কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ। এ নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে ‘সেই অভিজ্ঞ ডাক্তারকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রেরণ’ শীর্ষক সংবাদে এমরান হোসেন লিটন লিখেছেন, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সাকমো) মোঃ হেলাল উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিসসহ নোয়াখালীর ভাসান চরের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন নিজেকে শিশু, মেডিসিন, গাইনি, চর্মণ্ডযৌন ও বাত ব্যথা রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয়ে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের কামতা বাজারের রওশন আরা মেডিকেল হলে সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে প্রতারণার আশ্রয়ে রোগী দেখে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে রোববার জেলার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকাসহ কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে কর্তৃপক্ষ প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়।

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খাদিজা রহমান জানান, হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে ফাঁকি ও অপব্যবহার করার অপরাধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাকে ভাসান চরের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

নোয়াখালীর সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার জানান, হেলাল উদ্দিনের বিষয়ে অবগত হয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিসসহ ভাসান চরের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়েছে। মূলত হেলাল উদ্দিন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সাকমো)। সে সরকার নির্দেশিত নির্ধারিত কিছু ওষুধ সেবনের নির্দেশনা দিতে পারবে। নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিতে পারবে না।

আমরা স্যাকমো হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে নোয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণকে অবশ্যই আন্তরিকতার সাথে সাধুবাদ জানাতে চাই। সাথে সাথে চাঁদপুরের স্বাস্থ্য বিভাগকেও স্যাকমোদের ডাক্তার পরিচয় দেয়া, অবৈধভাবে ফি নিয়ে প্র্যাকটিস করা, কর্মস্থলে অনুপস্থিতিসহ অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে সোচ্চার হতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। কেবল গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেই স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের টনক নড়বে, অন্যথায় তারা নির্লিপ্ত-নিশ্চুপ থাকবেন--এটা মেনে নেয়া যায় না। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ নিজেদের ক্ষতরূপী অনিয়ম মোচনের উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতির অবনতিই হবে, উন্নতি নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়