রবিবার, ১১ মে, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ফুটো কলসিতে পানি ঢালা আর কতোদিন?
অনলাইন ডেস্ক

গত শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে, যার শিরোনাম ‘নদীতে স্থানে স্থানে নিষিদ্ধ জাল ॥ নির্বিচারে মাছের পোনা নিধন’। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, শীত মওসুম এলেই চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে চলে মশারিজাল ও বাঁধাজালে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ নিধন। এক শ্রেণির মৌসুমী জেলে ও ভাসমান মৎস্য আড়তদার নদীর পোনা মাছ নিধন ও বিক্রি করছে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে প্রকাশ্যে বাইলা, চিংড়ি, জাটকার রেণু, সিলন মাছের পোনা এমনকি পাঙ্গাসের পোনাও নিধন করা হচ্ছে। কুয়াশা ও তীব্র শীতের মধ্যে নদীতে জোয়ার-ভাটায় ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসে পোনা মাছ। সেখানে নিষিদ্ধ জাল পেতে মাছ ধরতে গিয়ে অবাধে পোনা নিধন করছে কতিপয় জেলে। স্থানীয় সাধারণ জেলে ও সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, নদীতে ছোট ফাঁস জালের অবাধ ব্যবহারে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন, বংশবিস্তার ও বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। মেঘনা নদীর মতলব মোহনপুর, এখলাশপুর থেকে শুরু করে চাঁদপুর সদর উপজেলার আমিরাবাদ, কানুদী, আনন্দবাজার, রাজরাজেশ্বর চর এলাকা, বড়স্টেশন কসাইখানা, পুরাণবাজার হরিসভা, রণাগোয়াল, দোকানঘর গুচ্ছগ্রাম, রামদাসদী, সাখুয়া খাল, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুর, হরিণা, আখনেরহাটসহ বিস্তীর্ণ নদী এলাকাজুড়ে নিষিদ্ধ জালে যেভাবে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছের পোনা নিধন চলছে, এতে অচিরেই মাছের ভাণ্ডার শূন্য হয়ে পড়বে। প্রতিদিন কী পরিমাণ পোনা মাছ নিধন হচ্ছে, তা নিজের চোখে না দেখলে কল্পনা করাও কঠিন।

সংবাদটিতে আরো লিখা হয়েছে, মৎস্য আইনে মাছের পোনা সংরক্ষণে মশারি ও বাঁধাজালসহ সোয়া চার ইঞ্চির কম ফাঁস জাল ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ ওই সব এলাকায় ছোট মাছ ধরার জন্য একেবারে ক্ষুদ্র ফাঁস জাল ব্যবহার করা হচ্ছে। চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী আলী আকবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নদীতে নিধনকৃত বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছের ছবি এবং ভিডিও আপলোড করে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন। তিনি বলেন, শীত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত নদীতে নির্বিচারে বিভিন্ন মাছের পোনা নিধন চলে এলেও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় নিষিদ্ধ জালে মাছ শিকার বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।

স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমন ঢালাও অভিযোগ করাটা মনে হয় সবচে’ সহজ কাজ। মৎস্য বিভাগের বিরুদ্ধে করা আরো সহজ। কারণ, এ বিভাগটি ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারে’র মতো এবং মাছের মতোই বাকশক্তিবিহীন। সবচে’ বড় কথা, এ বিভাগটি পরনির্ভরশীলতায় আক্রান্ত একটি অবহেলিত বিভাগ। এ বিভাগ মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা ও আনুষঙ্গিক সহযোগিতার জন্যে অপেক্ষা করা (যেমন পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করা, নৌযান ও তেলের সংস্থান করা ইত্যাদি)-এর কাজটি আগে করতে হয়। সরাসরি কোনো কিছু করার মতো পর্যাপ্ত জনবল, অর্থবল তথা অতি প্রয়োজনীয় সামর্থ্য নেই। পাশাপাশি মাছ ধরার নিষিদ্ধ জাল ও উপকরণগুলোর সহজলভ্যতা তো রয়েছেই। কালেভদ্রে নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড এই জাল ও উপকরণবিরোধী যে পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে, সেগুলো পর্যাপ্ত নয়।

কারেন্ট জালসহ কম ফাঁসযুক্ত সকল নিষিদ্ধ জাল ও উপকরণের উৎপাদন ও আমদানি না ঠেকিয়ে এবং বাজারে অবাধে বিক্রি পুরোপুরি রোধ না করে আমাদের দেশে মৎস্য রক্ষার জন্যে নয়, বস্তুত রক্ষার নামেই কিছু কাজ করা হচ্ছে, যেগুলোকে স্পষ্ট ভাষায় লোকদেখানো বললে খুব অন্যায় হবে বলে মনে করি না। নিষিদ্ধ জাল ও উপকরণ বন্ধে মৎস্য মন্ত্রণালয় সমন্বিত ও সাঁড়াশি উদ্যোগ গ্রহণে সরকারকে কাজে লাগাতে কতোটুকু সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে, সেটি নিয়ে সঙ্গত প্রশ্ন থেকেই যায়। এ প্রশ্নের সমাধান না করে মৎস্য সম্পদ রক্ষার নামে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত ও অপরিকল্পিতভাবে যা করা হয়েছে ও হচ্ছে, সেটাকে ফুটো কলসিতে পানি ঢালার নামান্তর বলা ছাড়া আপাতত বিকল্প কিছু আমরা খুঁজে পাচ্ছি না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়