প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ভাগ্য বিড়ম্বিত এক যুবক স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও কাঙ্ক্ষিত চাকুরি পাচ্ছিলো না। গ্রামের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে দুটি অটোবাইক কিনে তার আয় দিয়ে চাঁদপুর শহরে বাসা ভাড়া করে সপরিবারে বসবাস শুরু করলেন। সুখেই কাটছিলো তার দিন। এক বছর না যেতেই তার একটি অটোবাইক চুরি হয়ে গেলো। এতে আয় কমে যাওয়ায় সংসারে তার টানাপোড়েন শুরু হয় এবং সে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সেই দেনা পরিশোধে বাকি অটোবাইকটি বেচে দিতে হয় এবং স্ত্রী-সন্তানকে পাঠিয়ে দিতে হয় শ্বশুর বাড়ি। তারপর দিলো ফ্লেক্সিলোডের দোকান। টুকটাক টিউশনিও শুরু করলো। শুরু হলো করোনা। এতে ব্যবসায় মন্দা ও টিউশনি বন্ধ হওয়ায় পুরো বেকার হয়ে গেলো। পেটের দায়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন কোম্পানির মাল বিক্রির কাজও নিতে হলো। চুরি যাওয়া অটোবাইক পেতে পুলিশের কাছে ধর্ণা দিয়েও সেটি না পাওয়ায় একজন যুবককে জীবনে এমন পরিণতিই বরণ করতে হলো।
গতকাল মঙ্গলবার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত ‘চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযান : অটোরিকশা চোর চক্রের মূল হোতাসহ আটক ৪ ॥ উদ্ধার করা হয়েছে চুরিকৃত অটোরিকশা’ শীর্ষক সংবাদ থেকে জানা যায়, চাঁদপুরে ইদানীং একের পর এক বেড়েই চলেছে অটোবাইক/ অটোরিকশা চুরি। এই চুরির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে উদ্ধার ও চোর চক্র শনাক্ত করতে বেশ কিছু অভিযোগ বা মামলা হয় মডেল থানায়। সেমতে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ এই চোরচক্র গ্রেফতারে ও চুরিকৃত অটোরিকশা উদ্ধারে অভিযানে নামে। অবশেষে অটোরিকশা চুরির মূল হোতা সহ ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মডেল থানা পুলিশ। এ সময় চুরি হওয়া ১টি অটোরিকশাও উদ্ধার করা হয় মতলব উপজেলা থেকে। পুলিশ জানায়, গত রোববার আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। চোর চক্রের মূল হোতা মনির আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে চুরির বিষয় স্বীকার করেছে। পুলিশের এ সাফল্যে অবশ্যই অটোরিকশা/ অটোবাইক চুরি বন্ধ হতে পারে। কারণ, চোরচক্রের মূল হোতা ধরা পড়ায় এ সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা জোরদার হয়েছে।
সোমবার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয় আরেকটি সংবাদ, যার শিরোনাম হয়েছে ‘কচুয়ায় টিউবওয়েলসহ বিভিন্ন মালামাল চুরির হিড়িক ॥ ৩টি টিউবওয়েলসহ সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধার’। এ সংবাদে লিখা হয়েছে, কচুয়া উপজেলার গোহট দক্ষিণ, আশ্রাফপুর, কড়ইয়া ও গোহট উত্তর ইউনিয়নে টিউবওয়েল, কৃষি সেচের মোটর, মসজিদের মাইক-মেশিন, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন মালামাল সম্প্রতি চুরির হিড়িক পড়েছে। জানা যায়, গত ৬ জানুয়ারি শুক্রবার গভীর রাতে কচুয়া থানা পুলিশের এসআই মোশারফ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে আশ্রাফপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের আশ্রাফপুর গ্রামের পাচুর বাড়ি সংলগ্ন কেআইডিপি অফিসের সামনে থেকে পরিত্যক্ত একটি সিএনজি অটোরিকশাকে ৩টি টিউবওয়েলসহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল জানান, আমরা সিএনজি অটোরিকশার ড্রাইভার-মালিককে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। শনাক্ত করতে পারলে চোরচক্রটি ধরা যাবে। আমরা চোরচক্র শনাক্ত করার অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
চাঁদপুর মডেল থানা ও কচুয়া থানা পুলিশের প্রাগুক্ত দুটি সাফল্যে চুরিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এ সম্পাদকীয় নিবন্ধের শুরুতে বর্ণিত ভাগ্য বিড়ম্বিত যুবকের মতো পরিণতি বরণ করার হাত থেকে অন্তত বাঁচতে পারবে। সেজন্যে অটোবাইক ও অটোরিকশা চুরিসহ অন্যান্য চুরির সাথে জড়িত চোরদের শনাক্ত করা ও চোরাই মালামাল উদ্ধারে পুলিশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা চাই। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশের এমন সাফল্যের ধারাবাহিকতা অবশ্যই সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস রাখি। এ বিশ্বাসের অনুকূলে কেবল প্রয়োজন পুলিশের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, যেটি সুধী পর্যবেক্ষকদের অভিমত।