প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
মুদ্রিত পত্রিকাগুলোর করুণ দশা
করোনা মহামারীতে শুধু অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে এমনটি নয়। আরো অনেক কিছুই মারা যাচ্ছে কিংবা মৃত্যুদশায় পতিত হতে হচ্ছে। সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের নামে সবকিছু বন্ধ করে দিলেও খোলা রাখছে গার্মেন্টস্। অবস্থা এমন, গার্মেন্টস্গুলো যেনো করোনা প্রুফ। পাঁচশ’ দিনের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের অভিভাবক শিক্ষিত, অবস্থাপন্ন তারা অনলাইন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে তাদের পাঠক্রমের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছে। অন্যদের লেখাপড়া কোথায় গেছে, কী পর্যায়ে পৌঁছেছে তার বিবরণ ধৈর্য সহকারে জানলে যে কেউ শিহরিত হবে, আফসোস করবে। সরকারি কলেজ, হাইস্কুল ও প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করেছে ও করছে, এতে শিক্ষার্থীদের কী সাড়া পেলো বা পেলো না সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, মাস শেষে তাদের বেতন উত্তোলন করতে পারছেন। এমপিওভুক্ত হাইস্কুল-কলেজের শিক্ষকরা একই কাজ করে এমপিও’র টাকা পেলেও প্রতিষ্ঠানের অংশটুকু পাননি বা পাচ্ছেন না। আর যারা ননএমপিও শিক্ষক, তাদের যে কী করুণ অবস্থা সেটা বর্ণনাতীত ও হৃদয় বিদারক। তাদের টিউশনি আগের মতো নেই, প্রতিষ্ঠান-অংশের নির্ধারিত বেতনটুকু নেই কিংবা পুরোপুরি নেই। কিন্ডারগার্টেন নামে আধুনিক শিশুশিক্ষার জৌলুসপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান করোনাকালে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শিক্ষক-কর্মচারীরা কেউ অর্থ কষ্টে আত্মহত্যা করেছে, কেউ হকার সেজেছে, আবার কেউ পেশা পরিবর্তন করেছে।
|আরো খবর
সরকারি অধিকাংশ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনাকালে পূর্বের ন্যায় কাজ না করলেও বেতন-ভাতায় বেশ সুখে আছেন। কিন্তু সুখে নেই পুলিশ, চিকিৎসক, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জরুরি সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে। এদের অন্যতম সাংবাদিক সমাজ। এদের মধ্যে যারা অনলাইন মাধ্যমে কাজ করেন তা কিছুটা ভালো থাকলেও মুদ্রিত মাধ্যম তথা দৈনিক, সাপ্তাহিক মেয়াদের সংবাদপত্রে যারা কাজ করেন, তারা মোটেও ভালো নেই। এমন সংবাদপত্রের পাঠক কমতে কমতে এক তৃতীয়াংশ হয়ে গেছে। বিজ্ঞাপন ক্রমশ পৌঁছে গেছে শূন্যের কোঠায়। এমতাবস্থায় আয় তো দূরের কথা, ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হচ্ছে এই সংবাদপত্রগুলোকে। সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নেই বললেই চলে।
সরকারের বিজ্ঞাপন তালিকাভুক্ত (মিডিয়া লিস্টেড) সংবাদপত্রগুলো বিজ্ঞাপন বিল বাবদ কেউ কোটি কোটি, কেউ লাখ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। সরকার এই পাওনা পরিশোধে যতোটা আন্তরিক হবার কথা, সেভাবে তা নয়। সরকার করোনাকালে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার স্বার্থে গার্মেন্টস্সহ কিছু জরুরি সেবার প্রতিষ্ঠান খোলা রাখছে। সংবাদপত্রসমূহের পাওনা বিল তথা টাকা পরিশোধে কি ডিএফপিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে পারে না?-যদি প্রচ্ছন্ন কোনো কারণে সেটা খোলা রাখা না যায় কিংবা খোলা রাখা না হয়, তাহলে চালু অনেক দৈনিক, সাপ্তাহিক সংবাদপত্র মানুষ যেভাবে অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি অর্থরূপী অক্সিজেন না পেয়ে বন্ধ হয়ে যাবে, বেকার হয়ে যাবে অনেক সাংবাদিক-কর্মচারী। এ বিষয় নিয়ে সরকারকে গভীরভাবে ভেবে দেখার জন্যে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।