সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

কোন্ অ্যাম্বুলেন্স কার্যত বেশি দরকার?
অনলাইন ডেস্ক

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর চাহিদা গ্রহণ, নির্ণয় এবং সেটি পূরণে অবশ্যই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এ ভূমিকা পালনে তাদের যথার্থতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যখন তারা অপ্রয়োজনীয় ও চাহিদা বহির্ভূত উপকরণ হাসপাতালগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়। এর পেছনে এই অধিদপ্তরের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের লাভালাভের প্রশ্নটি এসেই যায়। যেমন প্রশ্ন এখন চাঁদপুরবাসীর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

দেশের প্রায় প্রতিটি জেলার আওতাধীন সদর উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকে না। কাজেই সেই উপজেলার নামে বড় ধরনের কোনো উপকরণ প্রদান যে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চরম উদাসীনতার পরিচায়ক হতে পারে, তার চাক্ষুষ প্রমাণ চাঁদপুর সদর উপজেলার ক্ষেত্রেই পাওয়া গেছে। এই উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকা সত্ত্বেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে পাঠানো হয়েছে অন্তত এক কোটি টাকারও অধিক মূল্যের একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স। ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর চাঁদপুর সদর আসনের এমপি ডাঃ দীপু মনি প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে এই অ্যাম্বুলেন্সটি গ্রহণ করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অ্যাম্বুলেন্সের জন্যে কোনো চালক নিয়োগ এবং জ্বালানি তেলের জন্যে অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করেনি। এজন্যে চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি চালাচালি হয়েছে, কিন্তু গত চার বছরেও নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি আর চলাচল করতে পারেনি। অগত্যা অ্যাম্বুলেন্সটি অব্যবহৃত, বলা যায় পরিত্যক্ত রূপে পড়ে আছে চাঁদপুর শহরের কবি নজরুল সড়কস্থ মুখার্জি ঘাটের পাশে ডাকাতিয়া নদীর তীরে। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকার কারণে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ভেঙ্গে গেছে গ্লাস। ব্যাটারিসহ কিছু যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে যায়। এমতাবস্থায় ঢাকায় নিয়ে মেরামত করে আবার চাঁদপুর পাঠানো হয়। কিন্তু অলস পড়ে থাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি বৈকল্যপ্রাপ্ত তথা অকেজো হয়ে যায়।

উক্ত নৌঅ্যাম্বুলেন্সটি চাঁদপুরে পাঠানোর দশ বছর পূর্বে ২০০৮ সালে আরেকটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নিকট পাঠানো হয়। তখন চাঁদপুরে কর্মরত সিভিল সার্জন প্রথমত এই অ্যাম্বুলেন্সটি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। কারণ, তিনি এমন অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠান নি। এছাড়া তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এই অ্যাম্বুলেন্সের জন্যে চালক ও জ্বালানি কোনোটাই বরাদ্দ নেই। অ্যাম্বুলেন্সটি গ্রহণে তার অপারগতায় ঠিকাদার বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করেন। অনেকটা অ্যাম্বুলেন্সটি গছিয়ে দিয়ে বিল তুলতে সক্ষম হন। চালক ও জ্বালানির অভাবে অ্যাম্বুলেন্সটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে পড়ে থাকে বছরের পর বছর। এটি নিয়ে গণমাধ্যমে বহু সংবাদ প্রকাশিত হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। বর্তমানে এটি পুরোদমে নষ্ট হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।

চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মাত্র ২টি অ্যাম্বুলেন্স আছে, চাহিদার তুলনায় যা খুবই অপর্যাপ্ত। যে কারণে হাসপাতালের সম্মুখস্থ রাস্তা জুড়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের প্রাচুর্য দেখা যায়। এ বিষয়ে বহু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টনক নড়েনি। চাহিদার আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেখানে সড়কে চলাচলযোগ্য অ্যাম্বুলেন্স চাঁদপুরে একের পর এক পাঠানোর কথা, সেখানে পাঠাচ্ছে একের পর এক খুবই দামী নৌ অ্যাম্বুলেন্স। এটা নিঃসন্দেহে আপত্তিকর এবং ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে লাভবান করার নামান্তর। সেজন্যে বিষয়টি তদন্তযোগ্য এবং দায়ী কর্মকর্তার শাস্তি পাওয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে। অপ্রয়োজনীয় দুটি নৌ অ্যাম্বুলেন্সের ক্রয়মূল্যে সড়কে চলাচলযোগ্য উন্নতমানের অন্তত ৫টি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে না পাঠিয়ে চাঁদপুরে নৌ অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর বিষয়টি রহস্যজনক এবং উদ্দেশ্যমূলক। আমরা এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত কিংবা গণশুনানি প্রত্যাশা করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়