প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি এমন আচরণই বাঞ্ছনীয়
দেখতে তাদেরকে মানুষেরই মতো। প্রায় সকলেই পরে নারীর পোশাক। কিন্তু চেহারায় থাকে পুরুষালি ভাব। আর কণ্ঠে কর্কশ উচ্চারণ ও আচরণে সর্বদাই লক্ষ্য করা যায় রূঢ় ভাব। এদের পোশাক পরিধানে শালীন ভাব যেনো একেবারেই বিরল। এদেরকে আমরা হিজড়া বলেই চিনি ও জানি। কিন্তু হিজড়া শব্দটিকে তারা অভিশাপ বা গালি হিসেবে মনে করে। এই বোধ থেকে কিছু হিজড়া সমাজকর্মী ও পশ্চিমা বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) হিজড়াদের নারী বা পুরুষ পরিচয়ের পরিবর্তে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে আইনগত স্বীকৃতির জন্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় লবিং শুরু করে। বাংলাদেশে হিজড়াগণ সফলভাবে এই স্বীকৃতি লাভ করে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাধিকার অর্জনের অধিকার লাভ করে। ভারতে ২০১৪ সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট হিজড়া ও রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গকে একটি তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে আইনি স্বীকৃতি প্রদান করে।
|আরো খবর
প্রকৃত পক্ষে হিজড়ারা যৌন প্রতিবন্ধিত্বের শিকার। এ কারণে জন্মের পর পরিবার ও সমাজে তারা নিগৃহীত হওয়াটাই যেনো তাদের ভাগ্য। আমাদের সমাজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (অন্ধ), শারীরিক প্রতিবন্ধী (বিকলাঙ্গ কিংবা নির্দিষ্ট অঙ্গহীন), শ্রবণ প্রতিবন্ধী (বোবা) সহ অন্যান্য প্রতিবন্ধিত্বের শিকার মানুষগুলো সুনির্দিষ্টভাবে নারী ও পুরুষ পরিচয় দিতে পারার সক্ষমতায়, খোলসাভাবে বলতে গেলে সন্তান জন্মদানের পারঙ্গমতায় যতোটুকু মূল্যায়িত হয়, হিজড়ারা সেভাবে মূল্যায়িত হয় না। তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর নিগ্রহের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে গিয়ে বেপরোয়া, বিশৃঙ্খল, অশালীন হয়ে যায়। স্বাভাবিক মানুষগুলোকে এরা শত্রু ভাবতে শুরু করেই যেন এমন এক জীবনযুদ্ধে লিপ্ত হয়, যাতে অস্বাভাবিক রূপ প্রকাশ পায়। এদের প্রধান পেশা সাধারণ্যে চাঁদা তোলা, বিয়ের অনুষ্ঠানে হানা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা কিংবা খাবার দাবি, নবজাতক আছে এমন বাড়িতে গিয়ে বাচ্চাকে জিম্মি করে মায়ের কাছ থেকে জোর করে টাকা বা মূল্যবান অন্য কিছু দাবি করা ইত্যাদি। এদের দাবি পূরণে কেউ অনিচ্ছা, অপারগতা প্রকাশ করলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয়া কিংবা পোশাক উল্টিয়ে নিম্নাঙ্গ প্রদর্শন করার প্রবণতায় ভোগে এই হিজড়ারা। সেজন্যে হিজড়ারা মানুষ হলেও এদের প্রতি সাধারণ মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দূর হয় না।
হিজড়াদের শারীরিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না হলেও তাদের মানসিক সমস্যার সমাধান করে তাদেরকে সাধারণ মানুষের ন্যায় গ্রহণযোগ্য পেশায় তথা মূল স্রোতে আনা যায় কিনা এ নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণসহ মোটিভেশনাল নানা পদক্ষেপ উল্লেখযোগ্য। এ পদক্ষেপগুলোর সুফল খুবই কম দেখা গেলেও আশাহত হবার মতো কিছু নেই।
হিজড়ারা দলবদ্ধভাবে কোথাও না কোথাও ভাড়া থাকে। এদের প্রায় সকলে থাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন। এদেরকে যাতে এ অবস্থা থেকেও পরিত্রাণ দেয়া যায়, সরকার সেটা নিয়ে ভাবছে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় দফায় তৈরি করা ২০টি ঘরের মধ্যে মাহমুদা হিজড়ার নামে একটি ঘর বরাদ্দ দিয়ে ইতিহাস গড়া হয়েছে। তার যেহেতু বিবাহিত জীবন সম্ভব নয়, সেজন্যে সে তার নামে বরাদ্দকৃত ঘরে আরো দুজন হিজড়াকে স্থান দিয়েছে। তার ব্যতিক্রমভাবে এ ঘর প্রাপ্তির পেছনে স্থানীয় এমপি মুহম্মদ শফিকুর রহমান এবং ইউএনও শিউলী হরির প্রত্যক্ষ অবদান রয়েছে। আমরা মনে করি, প্রশিক্ষণ, মোটিভেশনাল পদক্ষেপ, উপকরণ প্রদান, গৃহ প্রদানসহ আরো কিছু সহায়তামূলক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে হিজড়া তথা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সহযোগিতা করাটা বাঞ্ছনীয়।