প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নিয়মিত বাজার তদারকি করেন, প্রায়শই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতাদের সতর্ক করে চলছেন, তাদের অনিয়ম প্রমাণিত হওয়া মাত্রই জরিমানা আরোপ ও আদায় করছেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও বাজারসহ বিভিন্নস্থানে মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টে বিক্রেতাদের শায়েস্তা করে চলছেন। এক্ষেত্রে আপোষহীনই মনে হচ্ছে তাদের। এতে ভোক্তাদের মাঝে অবশ্যই সন্তুষ্টির সঞ্চার হচ্ছে। তারপরও কিছু স্থানে অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় ভোক্তাদের মাঝে অসন্তুষ্টির গুঞ্জন চলছিলো। সেই কিছু স্থানের একটি হচ্ছে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট, যেটি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত মাছ আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র এবং পাইকারী ও খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র।
চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে অনেক মৎস্য ব্যবসায়ী আছেন, যাদের কেউ কেউ ইলিশ মাছ দেশে-বিদেশে রপ্তানিতে অগ্রণী এবং অনেক লাভবান। চাঁদপুর শহরে প্রবাসীদের রেমিটেন্সে গড়ে ওঠা বহুতল সুদৃশ্য ভবনের পাশাপাশি আরো এমন যেসব ভবন দেখা যায়, তার অধিকাংশই উক্ত মাছঘাটের ব্যবসায়ীদের। এই মাছঘাট-কেন্দ্রিক মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি শুধু চাঁদপুর শহর নয়, চাঁদপুর জেলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কেননা নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে এ সমিতির জাঁকজমকপূর্ণ নির্বাচন গণমাধ্যমসহ সকল মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তোলে।
চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটকেন্দ্রিক চাঁদপুরের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের হতাশার অন্ত নেই। কেননা এই ঘাটে গিয়ে তারা তাদের সীমিত সামর্থ্যে সুস্বাদু ইলিশ ইচ্ছেমত আর কিনতে পারে না। সেখানে গিয়ে কেবল রূপালী ইলিশের রূপ দেখে তারা কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এদের খুবই স্বল্পসংখ্যক ইলিশ কিনলেও বড় সাইজের কিনতে পারে না, কিনতে হয় মিনি সাইজের। কারণ বড় সাইজের ইলিশের মূল্য আকাশচুম্বী। গরুর মাংস, খাসির মাংসের চেয়েও বেশি দাম বড় সাইজের ইলিশের। সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে, চাঁদপুর শহরের বিখ্যাত মৎস্য বাজার বিপণীবাগে এবং দেশের অন্যতম বিখ্যাত বাজার রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটের চেয়েও কম মূল্যে বড় সাইজের ইলিশ কিনতে পাওয়া যায়, যার স্বাদে নেই তেমন কোনো তারতম্য।
চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে ইলিশ বিপণনটা হাতে গোণা ক’জন মৎস্য ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটরূপী প্রক্রিয়ার কাছে জিম্মি। চাঁদপুরের ইলিশ অর্থাৎ স্থানীয় পদ্মা-মেঘনায় ধৃত ইলিশের স্বাদের জগৎজোড়া খ্যাতি আছে বলেই কিছু ব্যবসায়ী এমন সিন্ডিকেট গড়ার সুযোগ পেয়েছে। এর পেছনে খ্যাতির বিড়ম্বনাও রয়েছে। কথা হলো, চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। তাই বলে কি এখানে কেবল চাঁদপুরের ইলিশই অবতরণ করে?-নিশ্চয়ই নয়। এখানে বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের নদীসমূহে এবং বঙ্গোপসাগরে ধৃত ইলিশ মাছও অবতরণ করে। অথচ এ ইলিশগুলোকে খুবই কমমূল্যে কিনে অসাধু কিছু মৎস্য ব্যবসায়ী ‘চাঁদপুরের ইলিশ’ বলে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে চলছে। এটা নিঃসন্দেহে প্রতারণা। এটা নিয়ে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি হলেও উক্ত মৎস্য ব্যবসায়ীরা যেনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কারণ, এখানে নেই জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রকাশ্য ও গোপন নজরদারি।
অবশেষে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গত ১ নভেম্বর মঙ্গলবার চাঁদপুর মাছঘাটে স্মরণকালের মধ্যে এই প্রথম মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এ সময় জনৈক বাবুল হাজীর আড়ত থেকে পাঁচশ’ কেজি খাবার অযোগ্য পচা ইলিশ জব্দ করা হয় এবং মাটিতে পুঁতে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়। এ মোবাইল কোর্টের কথা যে-ই শুনেছে, সে-ই সাধুবাদ জানিয়েছে। জানা গেছে, এমন মোবাইল কোর্ট নিয়মিত পরিচালিত হবে এবং গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে। এটা ইলিশের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কতোটুকু ভূমিকা রাখবে সেটা সময়ই বলে দেবে, তবে প্রতারণা যে ক্রমশ কমবে সেটা আশা করা যায়।