প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

স্বাধীনতোত্তর বাংলাদেশে অভাব-অনটন- দুর্ভিক্ষের সময় এবং বেকারত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু কোম্পানি এসে অফিস খোলে। এ অফিসের লোকজন এসএসসি পাসের সনদপত্রসহ বিভিন্ন অংকের টাকা জমা দিয়ে ফরম পূরণ করলে মাসিক ৩০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা বেতনের চাকুরির লোভ দেখায় বেকার যুবকদেরকে। প্রলুব্ধ হয়ে যেসব যুবক এমন টাকা জমা দিয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগপত্রের জন্যে অপেক্ষমান ছিলো, তারা একদিন জানতে পারে ও দেখতে পায় কোম্পানির অফিস নেই এবং অফিসের লোকজনও নেই। বিভিন্ন স্থানে একের পর এক এমন উধাওয়ের ঘটনা দেখে প্রতারিত যুবকরা হায় হায় করতে থাকে, আর সেজন্যে লোকজন এমন কোম্পানির নাম দেয় ‘হায় হায় কোম্পানি’।
সরকারের সমবায় ও সমাজসেবাসহ অন্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ নির্ধারিত অফিস থেকে এবং এনজিও ব্যুরো থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সুন্দর সুন্দর নামে খোলা নানা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশগুলো দেশী-বিদেশী, সরকারি-বেসরকারি অনুদান কিংবা সদস্যদের চাঁদা গ্রহণ করে প্রচলিত নিয়ম ও নীতিমালায় কাজ করে যেমন সুনাম কামিয়েছে, তেমনি কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ম ও রীতি বহির্ভূতভাবে কাজ করে দুর্নামও কামিয়েছে। এর মধ্যে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএস) নামের কিছু ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান এবং মাল্টিপারপাস নামের কিছু সমবায়ভিত্তিক সংগঠনের প্রতারণা, অনিয়ম ও দুর্নাম দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে সময়ে সময়ে যখন সরকারের টনক নড়েছে, ততক্ষণে নিরীহ জনগণ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ও পর্যুদস্ত হয়েছে।
আমাদের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সতর্কতা-ডমনিটরিং, বিশেষ করে জঙ্গিদের অর্থায়ন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের তীক্ষè নজরদারিতে সাম্প্রতিক ক’বছরে বিভিন্ন কোম্পানি/প্রতিষ্ঠান দ্বারা সাধারণ মানুষের প্রতারণার হারটা পূর্বের চেয়ে অনেক কমেছে। তারপরেও দেশের প্রত্যন্ত কিছু এলাকায়, বিশেষ করে দারিদ্র্য পীড়িত স্থানগুলোতে শ্যেন দৃষ্টিসম্পন্ন প্রতারকদের থাবা বিস্তারের ছিটেফোঁটা ঘটনা কিন্তু মাঝে মধ্যে ঘটেই চলছে। যেমনটি অতি সম্প্রতি ঘটেছে চাঁদপুর জেলার নদীভাঙ্গনগ্রস্ত ও দারিদ্র্য পীড়িত এলাকা হাইমচরে।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা : হাইমচরে গ্রাহকদের অর্থ নিয়ে উধাও প্রতারক চক্র’ শীর্ষক সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, এই উপজেলায় উক্ত ফাউন্ডেশনের বিদ্যমান সুনামকে কাজে লাগিয়ে ভুয়া শাখা অফিস খুলে প্রতারক চক্র তাদের কার্যসিদ্ধি করেছে। বহু সাধারণ মানুষ খুইয়েছে লাখ লাখ টাকা। ৫০ হাজার টাকার ঋণ পেতে ৫ হাজার টাকা এবং এক লাখ টাকার ঋণ পেতে ১০ হাজার টাকা জমা দেয়ার ফাঁদে ফেলে প্রতারক চক্র যখন লাখ লাখ টাকা করায়ত্ত করতে সক্ষম হয়, তখনই তারা অফিস ফেলে রেখে উধাও হয়ে যায়।
প্রতারিত লোকজন হাইমচরের ইউএনও’র দ্বারস্থ হয়েছেন। ইউএনও বিষয়টি থানাকে জানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, কর্মরত এনজিওগুলোর কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহক্রমে যাচাই-বাছাই, সর্বোপরি এনজিওগুলোর কার্যক্রম ভালোভাবে মনিটরিং করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদের দৃষ্টিতে এ উদ্যোগটিকে যথার্থ বলে মনে হচ্ছে। এমনটি সকল উপজেলায় করা উচিত বলে আমরা মনে করি।