প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
গত ক’মাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যুব বয়সী শিক্ষার্থীদের নিখোঁজ হওয়াকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদী তৎপরতার আশঙ্কা তৈরি হয়। এমতাবস্থায় কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে বলেছেন, এরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচে’ বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে দেশের কোথাও না কোথাও নাশকতামূলক তৎপরতা চালাবে। কিন্তু না, সকল আশঙ্কা বা সম্ভাবনাকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করে দেশপ্রেমিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ সকল স্তরের সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও আন্তরিকতায় বাংলাদেশের সর্বত্র ছিটেফোঁটা ঘটনা ছাড়াই স্মরণকালের মধ্যে সবচে’ বেশি শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। গত বছর কুমিল্লা, হাজীগঞ্জ, চৌমুহনী, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজা মণ্ডপসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতির বেদনাদায়ক স্মৃতি বুকে ধারণ করে কোথাও কোথাও দুরু দুরু বুকে পূজারীরা মণ্ডপে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহুমুখী তৎপরতা দেখে হৃষ্টচিত্তে ধর্মীয় কাজ সম্পন্ন করে নির্ভয়ে বাড়ি ফিরেছে। পূজা শুরুর অনেক পূর্ব থেকে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সম্প্রীতি সমাবেশ এবং পূজা চলাকালে মণ্ডপের নিরাপত্তা বিষয়ে ব্যাপক মনিটরিং ছিলো চোখে পড়ার মতো।
গত ১ অক্টোবর থেকে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়ে অভূতপূর্ব ব্যবস্থাপনায় ৫ অক্টোবর বিকেল, সন্ধ্যা ও রাতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। চাঁদপুর শহরের চৌধুরী ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনস্থলে যে চমৎকার আয়োজন করা হয়, তা ইতিপূর্বে আর কখনও দেখা যায় নি। এমনকি কোনো ব্যাপারে কোথাও বিশৃঙ্খলা ও অসন্তোষ সৃষ্টির ন্যূনতম আলামত টের পাওয়া যায়নি।
চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ গতকাল কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছেন। এ বিবৃতিতে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে চাঁদপুরের ২১৯ টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে সর্বাত্মক সহায়তা করায় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি, জেলার অন্য সকল সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, পৌর পরিষদ, র্যাব, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, এনএসআই, ডিজিএফআই, আনসার, বিজিবি, সকল রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ৮ উপজেলা প্রশাসন, ৮ থানার পুলিশ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কমিউনিটি পুলিশ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও চাঁদপুর জেলার জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের নাগরিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।
আমরা মনে করি, শারদীয় দুর্গোৎসব ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হওয়ায় চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ বিবৃতির মাধ্যমে যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে, এ কৃতজ্ঞতা বস্তুত গত বছর থেকে অস্বস্তিতে ভোগা সচেতন প্রতিটি শান্তিপ্রিয় মানুষেরই। কারণ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী কোনো মানুষ কক্ষণোই অসাম্প্রদায়িক আচরণ ও বিশৃঙ্খলা পছন্দ তো দূরের কথা, লেশমাত্র সহ্য করতেও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ অনুভব করেন।