প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
দুর্ঘটনা এড়াতে চাই ‘সেফটি ফার্স্ট’
গত ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের বেপারী বাড়ির সামনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু ব্যক্তি মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন আরো ৪ জন। ১৪ জন মিলে উক্ত গ্রামের মুন্সিবাড়ির ওসমান গণির ভিটা থেকে একটি পুরানো ঘরের চাল বেপারী বাড়ির শরবত আলীর ভিটায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে চালটি বেপারী বাড়ির সামনে বিদ্যুতের তারের সাথে লেগে গেলে বিদ্যুতায়িত হয়ে যায় এবং সেজন্যে ৬জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এদেরকে উদ্ধার করে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক হোসেনপুর গ্রামের মুন্সি বাড়ির রুহুল আমিনের পুত্র সোহাগ হোসেন (৩৫) ও একই গ্রামের মাইঝের বাড়ির ওমর ফারুকের পুত্র লিটন হোসেন (১৯)কে মৃত ঘোষণা করেন।
|আরো খবর
এ দুটি মৃত্যুর জন্যে কাউকে দায়ী করে থানায় মামলা হলো কি হলো না সেটার জন্যে অপেক্ষা না করে নির্দ্বিধায় এটা বলা যায় যে, হোসেনপুর গ্রামের এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে পুরানো ঘর স্থানান্তরের কাজটিতে সংশ্লিষ্ট সকলের উদাসীনতা ও দক্ষতার অভাব ছিলো। আমরা সাধারণত নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় দেখি, ভাঙ্গন থেকে কোনো ঘরকে দ্রুত রক্ষার প্রয়োজনে আস্ত চাল ও বেড়া খুলে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু শাহরাস্তির হোসেনপুর গ্রামটিতে কি নদীর ভাঙ্গনমুখর কোনো অবস্থা ছিলো?-মোটেও নয়। কারণ, সেখানে তো কোনো নদীর অস্তিত্বই নেই।
যে কোনো ধরনের কাজে যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকতে পারে, সেটা আমরা অনেকেই ভাবি না। ‘আরে আল্লাহ ভরসা’ বলে আমরা অনেকেই যে কোনো কাজ শুরু করে দেই। কাজ শুরুর আগে পুস্তকি জ্ঞানের বিষয়টি বাদই দিলাম, অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারস্থ হতেও আমরা অনেকেই কুণ্ঠা বোধ করি। ভাবটা থাকে এমন-‘আমি কেনো তার কাছে ছোট হতে যাবো’। এমন ভাবেই বিপদ ডেকে আনে। এছাড়া উদাসীনতাও বিপদ ডেকে আনে। যেমন-ঘরের বাইরে-ভেতরে কাঠ/বাঁশের মই ব্যবহার করতে গিয়ে মইয়ের গোড়ার সাপোর্টের বিষয়টি মাথায় না রাখলেই ঘটে দুর্ঘটনা। উদাহরণস্বরূপ এমন অনেক কিছুই তুলে ধরা যায়।
উন্নত দেশগুলোতে শ্রমিকদের নিকট ‘সেফটি ফার্স্ট’ কথাটি খুবই পরিচিত। প্রতিদিন কাজে যাবার আগে তত্ত্বাবধানকারী ব্যক্তি বা অভিজ্ঞজন ‘সেফটি ফাস্ট’ অর্থাৎ নিরাপত্তা সবার আগে এ বিষয়ে শ্রমিকদের আধা ঘন্টা ব্রিফিং দেন। সেই ব্রিফিংয়ে কাজ করার সময় কী কী দুর্ঘটনা বা বিপদের সম্ভাবনা থাকতে পারে এবং কী ভুল হলে কী পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়। এতে শ্রমিকদের মাঝে সন্তর্পণে কাজ করার তাগিদ তৈরি হয়।
শাহরাস্তির হোসেনপুর গ্রামে পুরানো ঘর স্থানান্তরের কাজে ১৪ জন শ্রমিককে যে বা যারা নিয়োগ করেছেন, সেই নিয়োগকর্তার মাঝে সাবধানী মানসিকতার অভাব ছিলো, বরং তাড়াহুড়োর প্রবণতা ছিলো। কিংবা নিয়োজিত শ্রমিকদের অভিজ্ঞতার অভাব ও উদাসীনতা ছিলো। সেজন্যে স্থানান্তর-পথের নিচুতে থাকা বৈদ্যুতিক তারের বিষয়টি তাদের মাথায় ছিলো না এবং তীক্ষ্ম নজরের আওতায় ছিলো না। কেননা এ কাজ শুরুর আগে তারা সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে ‘সেফটি ফার্স্টে’র প্রশ্নে কয়েক মিনিট দূরে থাক, কয়েক সেকেন্ডও ভাববার অবকাশ নেয়নি। আমরা কাজ শুরুর আগে সবাইকে ‘সেফটি ফার্স্ট’ নিয়ে কমণ্ডবেশি ভাববার অনুরোধ জানাচ্ছি।