শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

পেশার চেয়ে নেশা যেখানে মুখ্য
অনলাইন ডেস্ক

মাদকদ্রব্য ব্যবহারের কারণে যে আবেশ হয়, তাকেই কেবল নেশা বলে না, কোনো কাজে প্রবল ঝোঁককেও নেশা বলে। এই নেশা যদি কেউ পেশাগত কাজে বা ভালো কাজে প্রয়োগ করে, তাহলে তার আত্মনিবেদন স্পষ্ট হয়, সততা নিশ্চিত হয়, সুনাম ও সাফল্য এসে ধরা দেয়। এমন মানুষগুলো পেশাগত জীবনের এক পর্যায়ে পারিশ্রমিক প্রাপ্তির বিষয়টিকে গৌণ করে ব্রতচারীর মতো হয়ে যায়। সমাজে এমন মানুষ আছে বলেই চরম হতাশার মাঝেও আলোর সন্ধান পাওয়া যায় এবং আশাবাদ সঞ্চার হয়।

চাঁদপুর কণ্ঠে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে পত্রিকা বিক্রির কাজে নিয়োজিতদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। এসব প্রতিবেদনে তাদের সুখের চেয়ে দুঃখের কথাই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে মতলব ব্যুরো ইনচার্জ রেদওয়ান আহমেদ জাকির স্থানীয় সংবাদপত্র বিক্রেতা মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে নিয়ে প্রকাশ করেছেন এক ব্যতিক্রম প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনের শিরোনাম হয়েছে ‘মতলব দক্ষিণের পত্রিকা বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, পত্রিকার ঘ্রাণ আমাকে আকর্ষণ করে, পত্রিকা বিক্রির মাধ্যমেই জীবনের অবসান হোক।’ এ শিরোনামটি দেখে পাঠকমাত্রেরই প্রতিবেদনটি পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়।

মোঃ দেলোয়ার হোসেন প্রায় ৩৬ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করছেন। ১৯৮৬ সালে ২৫ কপি পত্রিকা নিয়ে তার যাত্রা শুরু। নব্বইর দশকে এ পত্রিকা বিক্রির সংখ্যা এক হাজারের বেশি করে ফেলেন। প্রতিদিন ১২ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ভবেরচর থেকে পত্রিকা এনে মতলবে বিক্রি করতেন। তিনি রাতে গিয়ে ভবেরচরে থাকতেন এবং সেখান থেকে সকাল ১০টার মধ্যে পত্রিকা এনে পাঠকদের কাছে বিক্রি করতেন। ১৯৯৪ সালে সাইকেল কেনার পূর্ব পর্যন্ত তাকে এমন কষ্ট করতে হয়।

পত্রিকা বিক্রিতে দেলোয়ার হোসেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুখলেছুর রহমান। তিনি সন্ধ্যা ৭টায় পত্রিকা এনে পাঠকদের মাঝে বিলি করাতেন, আর দেলোয়ার রোদণ্ডঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল ১০টা থেকে দিনের আলোতেই নিজে পত্রিকা বিলি শেষ করতেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন মুখলেছুর রহমান এবং সেজন্যে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করে বসলেন। মামলায় জিতলেন দেলোয়ার, হারলেন মুখলেছুর রহমান। পত্রিকা বিক্রিতে ক্ষান্ত হলেন মুখলেছুর রহমান, আর এ কাজে অনেক বেশি উজ্জীবিত হলেন দেলোয়ার। দেলোয়ারের কোনো সহায়-সম্পত্তি ছিলো না। পত্রিকা বিক্রি করে চার ছেলেমেয়ে, স্ত্রীসহ ৬ জনের সংসার চালান। বড় মেয়েকে মাস্টার্স পাস করিয়েছেন, ছোট মেয়েকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছেন, বড় ছেলেকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছেন। আর ছোট ছেলেকে পড়াচ্ছেন বিদ্যালয়ে, যে বর্তমানে ৭ম শ্রেণীর ছাত্র।

দেলোয়ার হোসেন চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, অনলাইন পত্রিকার ছড়াছড়ির কারণে বর্তমানে ২৫০ কপি পত্রিকা বিক্রি হয়। গৌরিপুর থেকে সিএনজি অটোরিকশায় পত্রিকা এনে ভাড়ার টাকা দিয়ে পত্রিকা বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না। তবুও ৩৬ বছরের এ পেশা ছাড়তে মন চায় না। পত্রিকার ঘ্রাণ আমাকে আকর্ষণ করে। সকাল বেলা পত্রিকা না দেখলে মনে হয় কী যেন হারিয়েছি। টাকার জন্যে নয়, পত্রিকা বিক্রি এখন আমার মনের খোরাক। পত্রিকা বিক্রি ভালোভাবে উপভোগ করছি। সকলের সহযোগিতা নিয়ে পত্রিকা বিক্রি অব্যাহত রাখতে চাই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পত্রিকা বিক্রি করতে চাই। পত্রিকা বিক্রির মাধ্যমেই জীবনের অবসান হোক।

পত্রিকা বিক্রি করতে করতে মতলবের দেলোয়ার হোসেনের জীবনাবসানের প্রত্যাশা পূরণ হবে কি-না সেটা মহান সৃষ্টিকর্তাই জানেন। তবে পত্রিকা বিক্রিতে তার নেশা ও প্রত্যয় বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো বিষয়। চলমান ডিজিটাল যুগে অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দাপটকালে দেলোয়ারের এই নেশা ও প্রত্যয় মুদ্রিত গণমাধ্যম তথা পত্রিকাগুলোর জন্যে আশার আলোর ঝলকানিই বটে। আমরা মনে করি, অনলাইন মিডিয়ার বিপরীতে পত্রিকাগুলোকে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় সর্বাত্মক মনোযোগী হতে হবে। অন্যথায় দেলোয়ারের মতো প্রত্যয়দীপ্ত পত্রিকা বিক্রেতাদের আন্তরিক প্রয়াসও পত্রিকার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়