প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ব্যাংক কর্মকর্তা ও ইউপি মেম্বারদের যোগসাজশে চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন হানারচর ইউনিয়নের অন্ধ নারীসহ ২০ জনের ভাতার টাকা আত্মসাতের যে ঘটনা ঘটেছে, তাকে খুবই দুঃখজনক বললেও যেনো কম হয়ে যায়। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এ সংবাদ থেকে জানা যায়, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারাদেশে বয়স্ক ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা প্রদান করা হয়। ভাতাভোগীদের বছরে ২ বার ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। সরকার নির্ধারিত এ ভাতা ছয় হাজার টাকা হলেও চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নে কাউকে ৩ হাজার, আবার কাউকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা প্রদান করেন উক্ত ইউনিয়নের সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের মেম্বারগণ। নির্ধারিত টাকা থেকে কম দিয়ে বাকিটা আত্মসাতের এ ঘটনা ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভাতাভোগীরা। তারা জানান, ইউপি মেম্বাররা নিজেদের ও ব্যাংক কর্মকর্তার কথা বলে টাকা রেখে দেন এবং আত্মসাৎ করেন। গত ৬ আগস্ট শনিবার দুপুরে হরিণা বাজারে ব্যাংক এশিয়ায় উক্ত ভাতা বিতরণকালে এই আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। একজন অন্ধ নারীসহ ২০ জনের ভাতা থেকে আত্মসাৎকৃত এই অর্থের পরিমাণ প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা।
অনিয়মের সাথে এই ভাতা বিতরণকালে হানারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান (মেম্বার) হারুন অর রশিদ, মেম্বার আবুল বাশার, আবুল খায়ের ও কালু, মহিলা মেম্বার রাশিদা ও খুরশিদা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম ভাতাভোগীদের বইয়ে ছয় হাজার টাকার সামনে স্বাক্ষর নেন এবং ২০ জনকে কম টাকা দেন। তবে শিক্ষিত-সচেতনরা তাদের মোবাইল ফোনে প্রাপ্ত ছয় হাজার টাকার ম্যাসেজ অনুযায়ী ছয় হাজার টাকাই আদায় করে নেন। ভাতাভোগী অন্ধ ফরবুলিন্নেছা ও মাফিয়া বেগম জানান, তারা তাদের বইয়ে ছয় হাজার টাকার সামনে স্বাক্ষর দিয়ে পেয়েছেন সাড়ে ৪ হাজার টাকা। মাফিয়া বেগম ভাতা কম পাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে হারুন মেম্বার ও রাশিদা মেম্বার জানান, প্রতি বইয়ে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা খরচ আছে। ভাতাভোগী ছালেহা বেগম ও রওশন আলী জানান, তারা দুজনই পেয়েছেন তিন হাজার টাকা করে। প্রতি বইয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে এক হাজার ও মেম্বারদের ৫শ’ টাকা করে দিতে হয়, বলেছেন হারুন মেম্বার। ভুক্তভোগীরা মনে করেন, শনিবার বন্ধের দিন। তারা টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই বন্ধের দিন ভাতাভোগীদের টাকা প্রদান করেন। কালু মেম্বার টাকা কম দেয়ার বিষয়টি সত্য বলেছেন এবং হারুন মেম্বার সবকিছু সমাজসেবা কর্মকর্তা জানেন বলে দাবি করেন।
হানারচর ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবকে না জানিয়ে তাদের ইউনিয়নের ভাতাভোগীদের মাঝে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ব্যাংক থেকে ভাতা বিতরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এমন অভিযোগ অবশ্যই আমলযোগ্য বলে আমরা মনে করি। এর সাথে কিছু মেম্বার ও ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশ যে রয়েছে সেটা সুস্পষ্ট। তবে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা না সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা উক্ত ভাতা বিতরণের অনিয়মের সাথে জড়িত সেটা স্পষ্ট নয়। সেজন্যে তদন্ত প্রয়োজন। এ তদন্তেই বেরিয়ে আসবে হানারচর ইউনিয়নে ভাতা বিতরণের অনিয়মের সাথে প্রকৃত পক্ষে সংশ্লিষ্ট কারা। আমরা মনে করি, এদেরকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। গরিবের অর্থে যাদের লোভ, তারা শাস্তিবিহীন থাকাটা হবে অস্বাভাবিক।