প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
দুটি ধর্মের মানুষের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য স্থান বলেই কিনা জানি না, শাহরাস্তি উপজেলায় পোস্টিংপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের অধিকাংশই অত্যন্ত সামাজিক ও মানবিক বলে গত বেশ কিছু বছর ধরে পরিলক্ষিত হচ্ছে। অবশ্য সদ্য বিদায়ী এক শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন তার বিপরীত। এজন্যে তিনি বার বার তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্বারা তিরস্কার ও বিরূপ সমালোচনার শিকার হয়েছেন। দোষে-গুণে মানুষ। কারো লুক্কায়িত দোষ যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য কারো চোখে না পড়বে, অন্যদের ক্ষতিগ্রস্ত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে প্রকাশ্যে খারাপ বলা যাবে না, বরং সকলের গোচরীভূত ভালো গুণগুলোর আলোকে তাকে ভালো বলতেই হবে। এ বিবেচনায় শাহরাস্তি উপজেলায় বর্তমানে কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ুন রশিদ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নানকে তাঁদের সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভালো বলার উপলক্ষ তৈরি হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে এ দুজন কর্মকর্তা একজন দুগ্ধপোষ্য শিশুর প্রতি যে দরদ দেখিয়েছেন, তাতে তাদের মানবিকতার পাশাপাশি সংবেদনশীলতার প্রাখর্য ফুটে উঠেছে। তাঁরা দুজনে চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের নূরুল আমিনের কন্যা পারভীন আক্তার (২৩) কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের শিকার তার গর্ভজাত দেড় বছরের শিশুপুত্র ফাহাদকে উদ্ধার করেন এবং শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান। তারপর গত ৩ আগস্ট বুধবার দুপুরে পাষ- মা পারভীনসহ শিশু ফাহাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আদালতে পাঠান।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, পারভীন আক্তারের সাথে তিন বছর পূর্বে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার আশিয়াকারী গ্রামের আঃ করিমের পুত্র প্রবাসী মহিনউদ্দিনের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর থেকে তাদের দাম্পত্য কলহ শুরু হলে পারভীন পিত্রালয়ে থাকার এবং শিশুপুত্রসহ পারভীনের ভরণপোষণের খরচ বাবদ প্রতি মাসে আট হাজার টাকা করে মহিনউদ্দিন কর্তৃক প্রদানের সিদ্ধান্ত লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের মাধ্যমে দেয়া হয়। এ খরচের টাকা মহিনউদ্দিন ঠিকমতো দিতে না পারায় সম্প্রতি পারভীন তার শিশুপুত্র ফাহাদকে বর্বরোচিত নির্যাতন করে তার ভিডিও চিত্র মহিনউদ্দিনকে পাঠায়। এ ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে শাহরাস্তি উপজেলা প্রশাসন ও থানা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এমতাবস্থায় ইউএনও এবং ওসি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু ইসহাক ও চিতোষী পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জোবায়েদ কবির বাহাদুরকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টায় শিশুটিকে তার নানার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নিরাপত্তাজনিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
অনেকেই হয়তো শাহরাস্তির ইউএনও এবং ওসি কর্তৃক দেড় বছরের নির্যাতিত শিশু ফাহাদকে উদ্ধার করার উদ্যোগকে গতানুগতিক বলতে পারেন। আমরা তেমনটি বলতে রাজি নই। কারণ, শিশুটির নির্যাতনের খবর পেয়ে ইউএনও এবং ওসি তাঁদের অধস্তন কর্মকর্তাদের দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা সেটি না করে নিজেরা উদ্ধার কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটা যে স্বীয় মানবিকতা ও সংবেদনশীলতার কারণে করেছেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনটি সব উপজেলায় সচরাচর লক্ষ্য করা যায় না। সেজন্যে বলছি, এমন মানবিক কর্মকর্তা দেশের সর্বত্রই চাই।