প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২২, ০০:০০
কোনো জেলা ও উপজেলা শহরের স্টেডিয়াম ছাড়া আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাঠগুলোর প্রতি সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি ও তত্ত্বাবধান নেই বললেই চলে। এসব মাঠের উন্নয়নের জন্যে বরাদ্দকৃত চাল/গম বা নগদ অর্থের ব্যবহারে সবচে’ বেশি দুর্নীতি হয়। এমন দুর্নীতিতে পুকুর চুরি নয়, একেবারে সাগর চুরির কথা শোনা যায়। কাজ না করে পুরো বরাদ্দ আত্মসাতের ঘটনাও কোথাও কোথাও ঘটে।
চাঁদপুর শহরের বহুল পরিচিত হাসান আলী হাই স্কুল মাঠ পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়েও পুরোপুরি উন্নয়নের দেখা পায়নি। এ মাঠটির অবস্থান স্কুল থেকে কিছুটা দূরে বলে এর অবস্থা চোখের আড়াল তো মনের আড়াল। এ মাঠের উত্তর ও পূর্বদিকে হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান বলে অধিকাংশজনই মনে করে, এটি বুঝি উক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়েরই মাঠ। এই মনে করার বিষয়টি টের পেয়ে হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ এ মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে ছোট সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে জানান দিয়েছে, এটি তাদেরই মাঠ। এর বেশি কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ করতে পারছে বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে না। কেননা মাঠটিতে কয়েক মাস আগেও ছিলো বহু ভ্যানগাড়িতে কাপড় বিক্রির হাট। সে হাটটি নিকটস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পূর্ব পাশে সাবেক বেবী স্ট্যান্ডে স্থানান্তরিত হবার পর এই মাঠে অনেকটা স্থায়ীভাবেই হাট বসেছে চটপটি-ফুচকা ব্যবসায়ীদের। মুষলধারে এক পশলা বৃষ্টি হলেই এ মাঠটি জলাবদ্ধতার শিকার হয় এবং জলমুক্ত হলেও কর্দমাক্ত অবস্থায় থাকে কয়েকদিন। এসব কারণে এ মাঠটিতে ফুটবল-ক্রিকেট স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারে না স্থানীয় শিশু-কিশোর-তরুণ-যুবকরা। এজন্যে তারা বিক্ষুব্ধ হলেও এখনও সংগঠিত হয়ে মাঠ রক্ষার আন্দোলন শুরু করে নি। হয়তো একদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেটি শুরু হয়ে যাবেই।
গতকাল শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠে দেখলাম, ফরিদগঞ্জে খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে অনেক বড় মানববন্ধন হয়েছে। সন্তোষপুর এলাকার যুবক মানিক হাসানের নেতৃত্বে বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় কিশোর-তরুণ-যুবক এ মানববন্ধনে অংশ নিয়েছে। তারা ‘আমরা সবাই কিশোর ভাই/সুস্থ বিনোদনের জায়গা চাই’ শ্লোগানে চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের সন্তোষপুর দারুচ্ছুন্নাত ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার মাঠ রক্ষার দাবিতে এ মানববন্ধন করেছে। এ মাঠে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র (সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার) নির্মাণের জন্যে সরকারি বরাদ্দে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয়াতেই স্থানীয় ক্রীড়ামোদী কিশোর-তরুণ-যুবকরা খেপেছে। তারা মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে আবেদনও করেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরাও এমন উদ্যোগে ক্ষুব্ধ।
আমরা মনে করি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যে কেবল ভবন নির্মাণের উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। এ উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে মাঠ রক্ষা, গাছ রক্ষা, পুকুর-দিঘি রক্ষাসহ পরিবেশ রক্ষার বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেয়াটা অনিবার্য। এতে উন্নয়নটি টেকসইও হয়। আমরা বিশ্বাস করি, টেকসই উন্নয়নই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেনো, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যে কাক্সিক্ষত এবং যথার্থ। আমরা ফরিদগঞ্জে মাঠ রক্ষার প্রাগুক্ত আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক সাড়া প্রত্যাশা করছি।