শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১১ জুন ২০২২, ০০:০০

রেলওয়ের পরিত্যক্ত সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব কার?

রেলওয়ের পরিত্যক্ত সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব কার?
অনলাইন ডেস্ক

গত ৮ জুন বুধবার সকালে চাঁদপুর বড় স্টেশনের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে রকেট স্টিমার ঘাট সংলগ্ন এলাকায় রেলওয়ের পরিত্যক্ত টিনশেড গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ গুদামে বরফ দিয়ে ইলিশ মাছ প্যাকেটজাত করার কাজে ব্যবহার্য ককশীটের স্তূপে মূলত আগুন লাগে। আগুনের কালো ধোঁয়া দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপক দল তথা দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই স্থানীয় লোকজন ডাকাতিয়া নদী থেকে পানি তুলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ গুদামের আশেপাশে সিলিন্ডার গ্যাস, জ্বালানি তেলের দোকানসহ অন্যান্য অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া নিকটবর্তী স্থানে রয়েছে মাছ ঘাট, রকেট স্টিমার ঘাট, সর্বোপরি রেল স্টেশন। ভাগ্যিস, দিনের আলোতে লেগেছে এই আগুন, সবাই ছুটে এসে আগুন নেভানোর কাজ করেছে। যদি রাতে এই আগুন লাগতো তাহলে এতো দ্রুত আগুন নেভানো যেতো না এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতিও এড়ানো যেতো না। আগুন লাগার কারণ উদ্ঘাটিত না হলেও স্থানীয় লোকজনের ধারণা, শ্রমিক কিংবা পথচারীদের ছুড়ে ফেলা সিগারেটের আগুন থেকেই ঘটেছে এই অগ্নিকাণ্ড। গুদামটি যদি পরিত্যক্ত না হয়ে সংরক্ষিত থাকতো, তাহলে এমন অগ্নিকাণ্ড ঘটতো বলে আমরা মনে করি না।

বলা দরকার, চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ এক সময় ছিলো দেশের প্রধান রেলপথ। ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সংক্ষিপ্ত যাতায়াতে চাঁদপুরই ছিলো ট্রানজিট পয়েন্ট। আসাম থেকে মেইল ট্রেনযোগে যাত্রীরা চাঁদপুর বড় স্টেশনে নেমে রকেট স্টিমারযোগে রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ ঘাটে নেমে কলকাতা অভিমুখী মেইল ট্রেনযোগে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্নস্থানে নামতো। আবার কলকাতা থেকে গোয়ালন্দ অভিমুখী মেইল ট্রেনযোগে যাত্রীরা এসে রকেট স্টিমারযোগে চাঁদপুর ঘাটে পৌঁছে চাঁদপুর (বড়) স্টেশন থেকে আসাম অভিমুখী ট্রেনযোগে আসামের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছতো। সেজন্যে চাঁদপুর স্টেশনকে বলা হতো ‘দি গেটওয়ে অব আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে’। আর পুরো চাঁদপুরকে অভিহিত করা হতো ‘গেটওয়ে টু ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’। ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে চাঁদপুর স্টেশনের অপরিসীম গুরুত্বের কারণে এখানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে প্রায় ১২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসনসহ বুকিংকৃত মালামাল রাখা এবং ট্রেন ও স্টিমারযোগে গন্তব্যে প্রেরণের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত গুদাম নির্মাণ করতে হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের কারণে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সংক্ষিপ্ত যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এই রেলরুটটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সেহেতু চাঁদপুরও ক্রমশ গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। এখানে কর্মরত শত শত রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়। এমতাবস্থায় তাদের ব্যবহৃত রেল কোয়ার্টারগুলো খালি ও পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং লীজ ছাড়াই ক্রমশ অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে যায়। যে দখলদাররা সেসব কোয়ার্টারের চেহারাই শুধু পরিবর্তন করেনি, আশেপাশের জায়গায় লীজ নিয়ে কিংবা না নিয়ে স্থায়ী স্থাপনা তুলে শুধু ভাড়াই দিচ্ছে না, বিক্রিও করে ফেলেছে এবং ফেলছে। রেলপথের পাশে দৃশ্যমান অবৈধ দখল উচ্ছেদেই রেল কর্তৃপক্ষ কালেভদ্রে চালায় লোক দেখানো অভিযান, তবে উপরোক্ত কোয়ার্টার এলাকায় নয়। এই অভিযান শেষ হলেই উচ্ছেদকৃত জায়গায় আবার পর্যায়ক্রমিক দখলদারিত্ব কায়েম হয়, যাতে রেলওয়ের ভূমি বিভাগের লোকজনের পকেট ভারী হয়।

চাঁদপুর শহরসহ চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে রেলওয়ের পরিত্যক্ত জায়গার মূল্য শতাধিক কোটি টাকা হবে। এ জায়গাগুলো বৈধভাবে লীজ দেয়ার ব্যবস্থা করলে রেল কর্তৃপক্ষ বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পেতো। আর বিক্রি করলে বহু ইঞ্জিন ও বগি কেনার টাকার সংস্থান করতে পারতো। কিন্তু এমনটি ভাবার মতো দেশপ্রেমিক রেল কর্মকর্তার জন্ম বাংলাদেশে এখনও হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। এমন জন্ম না হওয়া পর্যন্ত রেলওয়ের পরিত্যক্ত বিপুল সম্পদ রক্ষার দায়িত্বপালন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), রেল পুলিশ, আনসার কিংবা অন্য কোনো শক্তিশালী বাহিনীর পক্ষে সম্ভব বলে আমরা আপাতত মনে করি না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়