প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
ট্রেনপ্রেমী যাত্রীসংখ্যা কি বাড়ছে?
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের শীর্ষ সংবাদগুলোর অন্যতম ছিলো ‘চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রূটে আসছে নতুন ট্রেন ॥ বাড়বে গতি, বাড়বে সেবা’। এ সংবাদে লেখা হয়েছে, চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রেলরূটে নতুন ট্রেন দেয়া হচ্ছে। এই সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে দ্রুতগতিসম্পন্ন নতুন ইঞ্জিনের ট্রায়াল দেয়া হয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে এ ইঞ্জিনটি ট্রায়াল দিতে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরে আসে এবং চাঁদপুর-লাকসাম মিটারগেজের রেলপথে ইঞ্জিনটি চলাচলের উপযোগী কিনা তা খতিয়ে দেখতে রেলওয়ের একটি প্রতিনিধি দল চাঁদপুর সফরে আসে। এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম, চট্টগ্রাম) শামস আরফিন তুষার, বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আবু হানিফসহ বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা, বিভাগীয় সিগন্যাল এন্ড টেলিকম প্রকৌশলী, আরএনবি কমাডেন্ট ও ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ)।
|আরো খবর
এ সংবাদে আরো লিখা হয়, সারাদেশে মিটার গেজে চলাচলের জন্যে পরীক্ষামূলকভাবে ৪০টি ইঞ্জিন আনা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুরে ১টি ইঞ্জিন ট্রায়ালে এসেছে। অন্যান্য ইঞ্জিনের চেয়ে এটি লম্বা, উচ্চতায় ও ওজনে বেশি। চাঁদপুরে কর্মরত রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার সোয়াইবুল সিকদার বলেছেন, ইঞ্জিনটি অত্যাধুনিক হওয়ায় এতে এসি সুবিধা রয়েছে। ইঞ্জিনটির হর্স পাওয়ারও বেশি। কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত। এই ইঞ্জিন দিয়ে চালানো হতে পারে চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রূটের মেঘনা আন্তঃনগর ও সাগরিকা এক্সপ্রেস। দ্রুতগতিসম্পন্ন এই ইঞ্জিনের সুবাদে নতুন ট্রেন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে চাঁদপুরবাসীর।
একজন ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টারকে উদ্ধৃত করে চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রূটে নতুন ট্রেন পাওয়ার সম্ভাবনার কথা প্রতিবেদক মিজানুর রহমান তার সংবাদে তুলে ধরেছেন। তিনি রেলওয়ের বিভাগীয় ম্যানেজার কিংবা উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল রেল কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করলে সেটি পাঠকের কাছে বেশি বিশ^াসযোগ্য বলে মনে হতো বলে আমাদের ধারণা। কথা হলো, চাঁদপুরে নতুন ট্রেনের চাহিদা আছে কি? এখানে ট্রেনপ্রেমী যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে কি?
বলা দরকার, স্বাধীনতাপূর্বকালে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথটি ছিলো ট্রেনবহুল ও যাত্রীবহুল। এমনটি বিংশ শতাব্দীর নব্বই দশক পর্যন্ত বহাল ছিলো। তখন এই রেলরূট বা রেলপথে ৭ জোড়া ট্রেন চলাচল করতো, অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় যাত্রীরা ১৪ বার ট্রেনে চড়তে পারতো ও নামতে পারতো। নব্বইর দশকে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিশ^ব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে রেলওয়ের লস কমাতে রেলওয়ের বারোটা বাজানোর কার্যক্রম হাতে নেয়। সোনালী করমর্দন বা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে রেলওয়ের জনবল কমায় এবং ইঞ্জিন ও বগি সঙ্কট দেখিয়ে ট্রেন সংখ্যা কমাতে থাকে। সে ধারাবাহিকতায় একবিংশ শতাব্দীর গত এক দশকে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে ট্রেন সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৩ জোড়ায়। ক্রমশ ট্রেনসংখ্যা হ্রাসে চাঁদপুর-লাকসাম রেলরূটের ট্রেনযাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু করেছে বলে জানা যায় নি, যদিও দেশের বিভিন্ন রেলরূটে ট্রেন বন্ধ বা হ্রাসের প্রতিবাদে অনেক কিছু হয়েছে এবং তার ফলস্বরূপ বন্ধ বা হ্রাসকৃত ট্রেন পুনরায় চালু করতে রেল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে।
চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে এখন তিনজোড়া ট্রেনও অবশিষ্ট নেই। কমিউটার বা ডেম্যু ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে এক বছরেরও অধিক সময় পূর্বে। যাত্রীদের নেই কোনো প্রতিবাদ বা চাহিদা প্রকাশের আকাক্সক্ষা। এমতাবস্থায় চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রূটে মেঘনা আন্তঃনগর ও সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন অর্থাৎ দু জোড়া ট্রেন চলছে অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় যাত্রীরা ৪ বার ট্রেনের দেখা পাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রূটে কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত নূতন ইঞ্জিনের সুবাদে নূতন ট্রেন চালু হবার সম্ভাবনাকে বিশ^াসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না। এখানকার যাত্রীদেরকে সেজন্যে অপেক্ষা করতেই হবে, কেননা ট্রেন হ্রাস বা বন্ধে তাদের প্রতিবাদ নেই, চাহিদা প্রকাশে জোরালো উচ্চারণ নেই। তারপরও রেল কর্তৃপক্ষ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যদি নূতন ট্রেন চালু করেই ফেলে, তাহলে বিস্মিত হতে হবে বৈকি।