প্রকাশ : ১৬ মে ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর শহরে এক সময় বিখ্যাত স্কুল বলে সুপরিচিত ছিলো হাসান আলী (জুবিলী), গণি মডেল, দ্বারকা নাথ (ডিএন), মাতৃপীঠ ও মধুসূদন হরিসভা (এম.এইচ.) উচ্চ বিদ্যালয়। কিন্তু যে রেলওয়ের জন্যে চাঁদপুরকে বলা হতো ‘দ্যা গেটওয়ে অব আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে’, সে রেল এলাকায় ছিলো না কোনো উচ্চ বিদ্যালয়। প্রায় ১২শ’ রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানরা দূরবর্তী স্কুলগুলোতে গিয়ে পড়তে হতো। এমতাবস্থায় চাঁদপুরে কর্মরত আক্কাছ আলী নামে এক রেল কর্মকর্তা (পিডব্লিউ তথা ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী) রেলওয়ের পরিত্যক্ত জায়গায় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন আক্কাছ আলী রেলওয়ে একাডেমী নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাতারাতি বেশ সাড়া জাগে এই উদ্যোগে। ‘রয়েল ডিপার্টমেন্ট’ হিসেবে পরিচিত রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেধাবী সন্তানরা এ বিদ্যালয়ে পড়ে ক্রমশ ভালো ফলাফল অর্জন করে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এখানকার শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ প্রাপ্তির সাথে সাথে শিক্ষাবোর্ডের মেধা তালিকায় স্থান দখল করে চমক সৃষ্টি করে।
আলী মোহাম্মদ নামে দক্ষ প্রধান শিক্ষকের সুযোগ্য নেতৃত্বে এক ঝাঁক মেধাবী শিক্ষকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আক্কাছ আলী রেলওয়ে একাডেমী সাফল্যের শিখরে আরোহন করতে থাকে। কিন্তু এই প্রধান শিক্ষকের অবর্তমানে এবং অবকাঠামোগত সঙ্কটসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় এই আলোচিত একাডেমীটি ক্রমশ অবনমনের দিকে ধাবিত হয়। এমতাবস্থায় বর্তমান প্রধান শিক্ষক গোফরান হোসেন একাডেমীর হাল ধরে এটিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আন্তরিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। এর পেছনে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটিরও রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। ইতোমধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর সর্বাত্মক সহযোগিতায় একাডেমীতে নির্মিত হয়েছে সুদৃশ্য বহুতল ভবন। এখন প্রয়োজন শিক্ষার মানোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ।
এ প্রয়োজন মেটাতে এগিয়ে এসেছেন একাডেমীর সাবেক কৃতী ছাত্র আবুল কাশেম, যিনি সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব। তিনি এই একাডেমীর মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যে সাবেক প্রধান শিক্ষকের নামে আলী মোহাম্মদ স্মৃতিবৃত্তি এবং নিজের নামে মোঃ আবুল কাশেম মেধাবৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্যে তিনি ব্যাংকে ২ লাখ করে ৪ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত রাখার ব্যবস্থা করেছেন, যার মুনাফায় চলছে উক্ত দুটি বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম। গত শনিবার (১৪ মে ২০২২) ২০২২ সালের বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ১৬ জন শিক্ষার্থীকে ২ হাজার টাকা করে ৩২ হাজার টাকা বৃত্তি বাবদ প্রদান করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জনাব আবুল কাশেম স্বয়ং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান শেষে পিতার কর্মস্থল এবং পিতার যে বাসায় থেকে তিনি আক্কাছ আলী রেলওয়ে একাডেমীতে পড়ালেখা করেছেন, সেগুলো দেখতে গিয়ে নস্টালজিক হয়ে পড়েন।
আমরা চাই, আক্কাছ আলী রেলওয়ে একাডেমীটি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসুক। চাঁদপুর শহরে যদি কোনো উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারি করার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে সেটা যেনো এই একাডেমীকেই করা হয়। এজন্যে অবশ্য ম্যানেজিং কমিটি, বর্তমান প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকমণ্ডলী, সাবেক কৃতী ছাত্র এবং শুভাকাক্সক্ষীসহ এলাকাবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা, বিশেষ করে চাঁদপুর সদরের এমপি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির কৃপাদৃষ্টি অতীব প্রয়োজন। আমরা এই একাডেমীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি প্রত্যাশা করছি।