প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
করোনা নিয়ন্ত্রণ : কথার চেয়ে কাজ বেশি হোক
করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে যেভাবে বাড়ছে, তাতে সবার আতঙ্কিত হবারই কথা। কিন্তু বাস্তবে আতঙ্ক নেই বললেই চলে। আর স্বাস্থ্যবিধি মানার উল্লেখযোগ্য নজির নেই। তবে হুঁশিয়ারি আছে, এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন আছে। সরকারের দেয়া ১১ দফা বিধিনিষেধ না মানলে দেশের অবস্থা যে ভয়াবহ হবে সেটা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠিন অভিব্যক্তি আছে। তিনি গত ১৫ জানুয়ারি শনিবার বেলা ১১টায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট ও সিটি স্ক্যান মেশিনের কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
|আরো খবর
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, লকডাউন দিলে দেশের ক্ষতি হবে। আমরা সেদিকে যেতে চাই না, তাই সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলাসহ অনেক স্থানেই যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এটা খুবই উদ্বেগজনক। নিজের জন্যে দেশের জন্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, সবাইকে টিকা নিতে হবে। আমাদের টিকার কোনো ঘাটতি নেই। ইতোমধ্যে সোয়া ১৪ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটি সমীক্ষার বরাত দিয়ে বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন আড়াই হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে; ৩০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে শতকরা এক ভাগ লোকের আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। এই মুহূর্তে এটিও আশঙ্কাজনক। এভাবে সংক্রমণ ও রোগী বাড়তে থাকলে হাসপাতালগুলোতে জায়গা থাকবে না। কাজেই আমাদের সতর্ক হতে হবে।
সত্যি কথা বলতে কি, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতো প্রায় সকল মন্ত্রী, এমপি, উচ্চ পর্যায়ের আমলারা প্রতিনিয়ত করোনা নিয়ে আতঙ্কদায়ক কথা বলছেন, নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। গণমাধ্যমে এসব ফলাও করে আসলেও সাধারণ্যে তার প্রতিফলন নেই। বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ যে কোনো গণপরিবহনে উঠলে স্বাস্থ্যবিধি মান্যতায় অভ্যস্ত লোকজনকে বিব্রত হতে হয়। কেননা গণপরিবহনে মাস্ক না পরার দৃশ্য এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার প্রবণতা ভয়াবহভাবে লক্ষ্য করা যায়। ‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি’ লেখা প্রতিষ্ঠানে খোদ আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিতদের কাউকে কাউকে মাস্ক পরতে দেখা যায় না, এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায় না। বাজারে, শপিং মলে, পর্যটন কেন্দ্রে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় স্বাস্থ্যবিধিটা যেনো ‘কথার কথা’র মতো বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
বস্তুত করোনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমরা যারা কথা বলার দায়িত্বে আছি, তারা কেবল কথা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি, সরেজমিনে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি তেমন পর্যবেক্ষণ করছি না। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আকস্মিক পরিদর্শন করে করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে কারো গাফলতি আছে কিনা সেটা জানা দরকার এবং গাফলতি থাকলে তার জন্যে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলকভাবে শায়েস্তা করা দরকার। এমনটি তিনিসহ তাঁর মন্ত্রণালয়/স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তারা নিয়মিত করলে হয়তো প্রকৃত আতঙ্ক ছড়াতে পারে, অন্যথায় নয় বলে আমাদের ধারণা। করোনা নিয়ন্ত্রণে কথার চেয়ে কাজ কীভাবে বাড়ানো যায় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকভাবে ভাবাটা জরুরি বলে সুধীজন মনে করছেন।