প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়, কোনো বাহিনীর প্রশ্রয়ে কোথাও যদি কিছু ছোট-বড় চালু হয়ে যায় কিংবা দখল হয়ে যায়, তাহলে সেটি বন্ধ করা/দখলমুক্ত করা অনেক কঠিন কাজ হয়ে যায়। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য জুজু বুড়ির ভয় যেনো আচ্ছন্ন করে ফেলে অনেককে। নিরীহ সাধারণ মানুষ বিচ্ছিন্নভাবে উদ্যোগ নিয়ে কিছু করতে চাইলে হয় ব্যর্থ কিংবা অসম্মানিত। এমন একটি অবস্থাই গত ক’বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাবুরহাটে।
চাঁদপুর শহরের পূর্ব-উত্তর দিকে অবস্থিত চাঁদপুর পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ডস্থ বাবুরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল ক্যাম্পাসের সামনে গত ক’বছর পূর্বে অটোবাইক স্ট্যান্ড চালু করা হয়। এ স্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত সেখানে মাদকসেবী ও বখাটেদের আড্ডা জমে আসছে। এ আড্ডা থেকে স্কুলের ছাত্রীরা ইভটিজিং ও অপহরণের শিকার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ‘বাবুরহাট স্কুলের সামনে অটো স্ট্যান্ড বসিয়ে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি ॥ ইভটিজিংয়ের শিকার ছাত্রীরা’ শিরোনামে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যে সংবাদ নিয়ে ছাত্রলীগ থেকে তখন কোনো প্রতিবাদ করা হয়নি এবং সংবাদের আলোকে চাঁদপুর পৌর কর্তৃপক্ষ, পুলিশ কিংবা অন্য কেউ প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। এতে ভুক্তভোগী ছাত্রী, তাদের অভিভাবকসহ সচেতন মহলে ছিলো চাপা ক্ষোভ।
চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের দু বছর পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ বাবুরহাট হাই স্কুলের সম্মুখস্থ অটোবাইক স্ট্যান্ড সরিয়ে নেয়ার জন্যে জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়র বরাবর আবেদন করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কাক্সিক্ষত সাড়া পাওয়া যায়নি। করোনাকাল শুরুর পূর্বে অর্থাৎ ২০১৯ সালে স্থানীয় ক’জন উদ্যোগ নিলেও সরাতে পারেনি উক্ত অটোবাইক স্ট্যান্ডটি। কেননা এ স্ট্যান্ডটি ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হয়ে আসছে, যেখান থেকে বিভিন্ন নেতা-কর্মী প্রতিটি অটো থেকে প্রতিদিন ৩০-৪০ টাকা হারে আদায় করে পকেট ভারী করে আসছিলো। এ স্ট্যান্ডটিতে শেষ পর্যন্ত কিশোর গ্যাংও তাদের অপরাধ সংঘটনের আস্তানা বানায় এবং বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খল কাজে জড়িয়ে পড়ে।
গত ১১ জানুয়ারি ২০২২ চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বাবুরহাট হাই স্কুলের সম্মুখস্থ অটোবাইক স্ট্যান্ড অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ওইদিন স্কুল মাঠে বাবুরহাট প্রিমিয়ার লীগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ নির্দেশ দেন। মেয়র বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে অটোবাইক স্ট্যান্ড বসানো যৌক্তিক নয়। এখান থেকে ছাত্রীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে বলে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। তিনি আরো বলেন, এ অটোবাইক স্ট্যান্ডের সাথে যে বা যারা জড়িত থাকুক, তারা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কেউ যদি এই অটোবাইক স্ট্যান্ড সরাতে বাধা প্রদান করে, তাহলে পৌর কর্তৃপক্ষ আইনী পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যবস্থাগ্রহণ করবে। আমরা এ নির্দেশ প্রদানের জন্যে মেয়র মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই। কাজটি ছোট হওয়ার পরও তার জন্যে ভুক্তভোগীদের যে অপেক্ষা করতে হয়েছে, তাতে অপেক্ষার যন্ত্রণার অবসান হবে এবং স্বস্তির বাতাস বইবে বলে মনে করি।