প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ২০ অক্টোবর
বাংলাদেশের আকাশে বৃহস্পতিবার কোথাও পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে ৯ অক্টোবর শনিবার থেকে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। সে হিসেবে আগামী ২০ অক্টোবর বুধবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালিত হবে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
|আরো খবর
আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শ’ বছর পূর্বে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সুবহে সাদেকের সময় মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোল আলো করে আসেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এই ধরায়। জন্মের পূর্বেই পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃস্নেহ থেকে। অনেক দুঃখ-কষ্ট আর অসীম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে উঠেন। চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নবুওয়তের মহান দায়িত্ব লাভ করেন। অসভ্য বর্বর ও পথহারা মানব জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তিনি তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামীনের তাওহীদের বাণী। কিন্তু অসভ্য-বর্বর আরব জাতি তাঁর দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসুল (সাঃ)-এর উপর নির্যাতন শুরু করে। বিভিন্নমুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তাঁর সাথী হতে থাকে। অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি এক পর্যায়ে তারা রাসুল (সাঃ)কে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। রাসুল (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করেন এবং মদিনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদিনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহুদী, খ্রিস্টান, মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয় সমান্তরালে।
২৩ বছরের শ্রম-সাধনায় অবশেষে রাসুলে পাক (সাঃ) দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে-আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো। তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থা হিসাবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইতিহাসের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাঁকে মানবজাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক ব্যক্তিত্ব হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বিখ্যাত প-িত মাইকেল এইচ হার্ট তাঁর বহুল আলোচিত 'দ্য হান্ড্রেড' গ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসেবে স্থান দিয়েছেন। বৃটিশ মনীষী প্রখ্যাত সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, এই অশান্ত পৃথিবীতে তাঁর মতো একজন মানুষের প্রয়োজন। তিনি বেঁচে থাকলে পৃথিবী জুড়ে সুখের সুবাতাস বইতো। তাঁর আগমনে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল দুনিয়া জুড়ে তা বিস্তৃত হয়েছে।
প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়ালকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে পালন করে সারা মুসলিম বিশ্ব। এ উপলক্ষে বাংলাদেশে তথা চাঁদপুরেও বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে । রাসুল (সাঃ)-এর জন্মবৃত্তান্তের উপর আলোচনা, সেমিনার, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হয় এবং পত্রিকায়ও এ দিবসের তাৎপর্য নিয়ে ক্রোড়পত্র বের করা হয়। এমনকি এ দিবস উপলক্ষে সরকারি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।