বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৭

পশুর প্রতি মানবিক আচরণ!

অনলাইন ডেস্ক
পশুর প্রতি মানবিক আচরণ!

চাঁদপুরে তিন দিনে তিন শতাধিক পথকুকুরের ভ্যাকসিন ও চিকিৎসাসেবা প্রদান সম্ভব হয়েছে ‘রাস্তায় রক্ষাকর্তা’র প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কাইয়ুমের নেতৃত্বে তিন দিনের অভিযানে। এ বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি কবির হোসেন মিজি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে একটি সংবাদ পরিবেশন করেছেন। তিনি লিখেছেন, কিছুদিন পূর্বে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে চাঁদপুরে পথকুকুরদের জন্যে বহুল প্রত্যাশিত ভ্যাকসিন ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও চাঁদপুর পৌর প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর ২০২৫) থেকে রোববার পর্যন্ত তিন দিনের বিশেষ অভিযানে শহরের প্রায় চার শতাধিক বেওয়ারিশ পথকুকুরকে ভ্যাকসিন প্রদান ও অসুস্থ কুকুরদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশের পরিচিত প্রাণীপ্রেমী সংগঠন ‘রাস্তায় রক্ষাকর্তা’ (এঁধৎফরধহ ড়ভ ঃযব ঝঃৎববঃং)-এর প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কাইয়ুম। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার আহ্বানে তিনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছয় সদস্যের একটি বিশেষ দল নিয়ে চাঁদপুরে এসে তিন দিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তারা জোরপূর্বক নেট বা ফাঁদ ব্যবহার না করে বরং খাবার ও ভালোবাসার মাধ্যমে কুকুরদের কাছে গিয়ে ভ্যাকসিন ও চিকিৎসাসেবা দেন। আর এই কার্যক্রমের সার্বিক তদারকি করেন চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও এলাকাতে কুকুরের সংখা বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি অসুস্থ পথকুকুর চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছে-- এমনও অভিযোগ অনেকের। এই বিষয়টি নিয়ে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে একটি সংবাদ আমাদের নজরে পড়লে, জেলা প্রশাসকের পরামর্শে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও চাঁদপুর পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে গত তিন দিন ধরে শহরের সর্বত্র পথকুকুরদের টিকাদান ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চেয়েছি এই কার্যক্রমটি যেন মানবিক ও সংগঠিতভাবে সম্পন্ন হয়, যাতে মানুষ ও প্রাণী উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

প্রাণীপ্রেমী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ভালোবাসাই সবচেয়ে বড়ো চিকিৎসা। ভয় দেখিয়ে নয়, সহানুভূতি দিয়েই পথপ্রাণীদের কাছে যেতে হয়। চাঁদপুরের মানুষের সাড়া ও প্রশাসনের সহযোগিতা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। প্রাণীপ্রেমী স্থানীয় তরুণরাও এতে যুক্ত হয়ে কুকুরদের জন্যে খাবার, পানি ও ওষুধ সরবরাহে সহায়তা করেছে। অনেকে বলেছেন, এতোদিন শুধু কুকুরদের কষ্ট দেখেছি, এবার প্রথমবার দেখলাম, সবাই একসঙ্গে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে-এটাই সত্যিকারের প্রাণীপ্রেম ও সেবা।

আমরা অধিকাংশজন নির্বাক পশুদের প্রতি পশুর মতোই আচরণ করি। আমাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই পশুকে পোষ মানাতে পারি, তাদের প্রতি দয়ার্দ্র আচরণ করি। পশুক্লেশেই আমরা ভীষণ অভ্যস্ত। মানুষের এই প্রবণতা রোধে বিশ্বের অনেক দেশেই পশুক্লেশ নিবারণ সমিতি আছে। আশির দশকে আমাদের দেশেও এমন সমিতি গড়ার প্রয়াস চালানো হয়েছিলো। কিন্তু বিদ্রূপসহ নানা কারণে সে প্রয়াস ধাক্কা খেয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর-এর প্রতিষ্ঠাকালীন সহকারী মহাপরিচালক অধ্যাপক কবি জাকির হোসেন মজুমদার চাঁদপুরে এমন সমিতি গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু সহকর্মী সহ ঘনিষ্ঠজনদের পক্ষ থেকে উৎসাহ না পেয়ে তিনি দমে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোথাও না কোথাও কেউ দমে না। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর লোক থাকেই। তাদের একজন আব্দুল কাইয়ুম, যিনি পশুক্লেশ নিবারণে ‘গার্ডিয়ান অব দ্যা স্ট্রীটস্’ (রাস্তায় রক্ষাকর্তা)-এর ব্যানারে দেশের যেখান থেকে ডাক পাচ্ছেন, সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন। ভালোবাসা, মমত্ব দিয়ে কুকুরের মতো পশুকেও দিচ্ছেন ভ্যাকসিন ও চিকিৎসাসেবা। যেটাকে প্রাণীপ্রেমীরা পশুর প্রতি মানবিক আচরণ বলেই ভাবছেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় উদ্যোক্তা হিসেবে জেলা প্রশাসন, চাঁদপুর পৌরসভা ও জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঔদার্য নিঃসন্দেহে প্রশংসাব্যঞ্জক অভিব্যক্তিতে উচ্চারণযোগ্য। স্যালুট তাঁদের সকলকে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়