বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৫

চরিত্রের গভীরে ডুবে থাকা এক গুণী মঞ্চশিল্পী ও সাংবাদিক এ কে আজাদ

অনলাইন ডেস্ক
চরিত্রের গভীরে ডুবে থাকা এক গুণী মঞ্চশিল্পী ও সাংবাদিক এ কে আজাদ

চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সক্রিয় একজন মঞ্চশিল্পী ও সাংবাদিক একে আজাদ। যাঁর পুরো নাম মো. আবুল কালাম আজাদ, অভিনয়ের এই পরিচয়ই সবচেয়ে ভালোভাবে তাঁকে সংজ্ঞায়িত করে। নানা মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন, দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন এই গুণী অভিনয় শিল্পী । শুধু অভিনয় নয়, চাঁদপুরের সাংবাদিকতার জগতেও তাঁর অবদানও কম নয়। মঞ্চে তিনি যেন এক অনন্য জাদুকর, চরিত্রের ভেতরে এতোটাই ডুবে যান যে, দর্শককে মুহূর্তেই আবেশে জড়িয়ে ফেলেন।

মঞ্চনাটকের প্রতি তাঁর নিবেদিত মনোযোগ ও অগাধ ভালোবাসা তাঁকে অন্যান্য শিল্পীর থেকে আলাদা করে তোলে। দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতা, সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং নাট্যচর্চার প্রতি অদম্য উৎসাহের কারণে তিনি চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনের একটি অমোঘ প্রতীক। সাংবাদিকতার পেশাগত দিকটিও তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা তাঁকে সমাজের নানা বিষয় এবং মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত রাখে।

চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনে সুপরিচিত মঞ্চশিল্পী হিসেবে যাঁর নাম অনায়াসে চলে আসে, তিনি হচ্ছেন এই এ কে আজাদ। বর্তমানে তিনি সাংবাদিকতা পেশার সাথে সাথে নাট্য চর্চায় সক্রিয় থেকে নতুন প্রজন্মের হাতে নাটকের শিকড় তুলে দিতে কাজ করে চলেছেন। এক কথায় বলা চলে থিয়েটার জগতে তাঁর অবদান অপরিসীম।

তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৬৪ সালের ১ জুলাই তাঁর জন্ম চাঁদপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। পিতা ইয়াকুব আলী ও মাতা সূর্য ভানু।

এ কে আজাদ ১৯৮০ সাল থেকে চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর অভিনীত ২৫ থেকে ৩০টি নাটকের প্রায় দেড় শতাধিক মঞ্চায়ন হয়েছে। এর মধ্যে বেশ ক’টি নাটক ইতোমধ্যে দর্শকপ্রিয় হয়ে নন্দিত হয়েছে। চাঁদপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় তাঁর অভিনীত ও নির্দেশিত বেশ কিছু নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে।

অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ ক’টি নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন সফলভাবে। নাটকের মঞ্চ ছাড়াও তিনি টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও যাত্রাশিল্পে বেশ কিছুদিন নেশার কারণে অভিনয় করেছেন।

তিনি ‘মহুয়া সুন্দরীর পালা’ শিরোনামে একটি নাটক রচনা করেন এবং সেটি মঞ্চায়নও হয়েছে।

এছাড়া এই গুণী অভিনেতা ১৯৮০ সালে তরুণ নাট্যশিল্পীদের নিয়ে তরুণ নাট্যগোষ্ঠী নামে একটি নাট্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ৯০ দশকের শেষ দিকে বিবর্ণ নাট্যগোষ্ঠী নামে ২য় নাট্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

অভিনয়ের জন্যে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির গুণীজন সম্মাননা অর্জন করেন।

মূলত এ কে আজাদ আপাদমস্তক একজন সক্রিয় নাট্যযোদ্ধা। মঞ্চ নাটকের প্রতি তাঁর রয়েছে ভীষণ আগ্রহ। সে কারণে তাঁর পেশা সাংবাদিকতার পাশাপাশি মঞ্চনাটককে তিনি এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনভুক্ত সদস্য সংগঠন চাঁদপুর ড্রামার সাথে ১৯৮৫ সাল থেকে আজো সম্পৃক্ত আছেন। মঞ্চনাটক ছাড়াও বেশ ক’টি টিভি নাটকেও এ কে আজাদ অভিনয় করেছেন। অত্যন্ত প্রতিভাবান নাট্যশিল্পী এ কে আজাদ তাঁর নাট্য জগতে জীবনচলায় সান্নিধ্য পেয়েছেন টিভি ও চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত শক্তিমান অভিনেতা আনোয়ার হোসেন, মঞ্চ ও টিভি নাটকের প্রখ্যাত অভিনেতা ও নির্দেশক ড. ইনামুল হক, নাট্যকার নাট্যনির্দেশক অভিনেতা মামুনুর রশিদের মতো গুণীশিল্পীদের। চাঁদপুরের খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পীদের সাথে অভিনয় করার সুযোগ হয়েছে তার।

সম্প্রতি তাঁর নাট্যজীবন নিয়ে কথা হয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের সংস্কৃতি অঙ্গন প্রতিবেদকের সাথে। তাঁর সাথে কথোপকথন নিয়ে সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।

সংস্কৃতি অঙ্গন : নাট্যমঞ্চে আপনার যাত্রা কবে থেকে শুরু?

এ কে আজাদ : আমার নাট্যচর্চা শুরু হয় ১৯৮০ সালে। তখন থেকেই চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছি।

সংস্কৃতি অঙ্গন : এ পর্যন্ত আপনি কতগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন?

এ কে আজাদ : আমি প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি নাটকে অভিনয় করেছি, যার মঞ্চায়ন হয়েছে দেড় শতাধিকবার।

সংস্কৃতি অঙ্গন : অভিনয়ের পাশাপাশি কি কখনো নাটক নির্দেশনা দিয়েছেন?

এ কে আজাদ : অবশ্যই। বেশ ক’টি নাটক আমি নির্দেশনা দিয়েছি এবং সেগুলোও দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।

সংস্কৃতি অঙ্গন : টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রেও তো আপনাকে দেখা গেছে, সে অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?

এ কে আজাদ : হ্যাঁ, মঞ্চের বাইরেও টেলিভিশন, চলচ্চিত্র আর যাত্রাশিল্পে অভিনয় করেছি। তবে আমার আসল ভালোবাসা মঞ্চনাটকেই।

সংস্কৃতি অঙ্গন : সাংবাদিকতা ও নাটক, দুটো ভিন্ন ক্ষেত্র, কীভাবে দুটো সামলান?

এ কে আজাদ : আসলে সাংবাদিকতা আমার পেশা, আর নাটক আমার নেশা। ব্যস্ততার মাঝেও নাটক আঁকড়ে ধরি, কারণ এটি আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সংস্কৃতি অঙ্গন : বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সদস্য সংগঠন চাঁদপুর ড্রামার সাথে আপনার সম্পৃক্ততা কবে থেকে?

এ কে আজাদ : ১৯৮৫ সাল থেকে চাঁদপুর ড্রামার সাথে যুক্ত আছি। এ সংগঠনের হয়ে অনেক নাটকে অংশ নিয়েছি।

সংস্কৃতি অঙ্গন : আপনার নাট্যজীবনে কাদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়েছিলো?

এ কে আজাদ : সৌভাগ্য হয়েছে কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেন, ড. ইনামুল হক, মামুনুর রশিদের মতো গুণী শিল্পীর সাথে কাজ করার। এ অভিজ্ঞতা আমার জন্যে অনন্য প্রাপ্তি।

সংস্কৃতি অঙ্গন : নতুন প্রজন্মের প্রতি আপনার বার্তা কী?

এ কে আজাদ : আমি চাই তরুণরা নাটকের প্রতি আগ্রহী হোক। মঞ্চ আমাদের সংস্কৃতির শিকড়, এ শিকড়কে তারা যতো লালন করবে, ততোই দেশ সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হবে।

সংস্কৃতি অঙ্গন : আপনার কাছে নাটক মানে কী?

এ কে আজাদ : আমার কাছে নাটক মানে জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার এবং সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যম। মঞ্চে ওঠার পর আমি চরিত্রে ডুবে যাই, সেখানে আর কোনো ভান থাকে না। নাটকই আমাকে বারবার নতুন করে বাঁচার প্রেরণা দেয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়